Nicolas Poussin

Nicolas Poussin

নিকোলা পুসাঁ ছিলেন ফরাসি ক্লাসিক্যাল ধারার অন্যতম প্রধান চিত্রশিল্পী।

তাঁর জন্ম ১৫৯৪ সালের ১৫ জুন, ফ্রান্সের নরম্যান্ডি অঞ্চলের লে-আন্দেলি (Les Andelys) নামক স্থানে।

মৃত্যুবরণ করেন ১৬৬৫ সালের ১৯ নভেম্বর, রোমে।

পুসাঁ ছিলেন ১৭শ শতাব্দীর ফরাসি শিল্পকলার অন্যতম ভিত্তি স্থাপনকারী।

তিনি মূলত ঐতিহাসিক, ধর্মীয় ও পৌরাণিক বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ করতেন।

তাঁর চিত্রকলায় দেখা যায় ভারসাম্য, শৃঙ্খলা ও যৌক্তিক কম্পোজিশন।

পুসাঁ তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় রোমে কাটিয়েছেন।

তাঁর কাজ ফরাসি ক্লাসিসিজমের (French Classicism) আদর্শ উদাহরণ।

তাঁর চিত্রে বুদ্ধি, নিয়ন্ত্রণ ও আধ্যাত্মিক গভীরতা ফুটে ওঠে।

তিনি ইতালীয় রেনেসাঁ ও প্রাচীন গ্রীক রোমান শিল্প দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত ছিলেন।

শৈশবে তিনি আঁকায় অদ্ভুত দক্ষতা দেখান।

প্রথমে তাঁর পরিবার তাঁকে চিত্রকলার পেশায় যেতে দিতে চায়নি।

তিনি পরিবার ছেড়ে প্যারিসে যান শিল্পশিক্ষার জন্য।

প্যারিসে এসে তিনি বিভিন্ন চিত্রশিল্পীর কাছে প্রশিক্ষণ নেন।

তাঁর প্রথম শিক্ষক ছিলেন কুইন্টিন ভারিন (Quentin Varin)।

এরপর তিনি গাইলোয়াম কুর্তুয়া ও জর্জ লালেমাঁর স্টুডিওতে কাজ করেন।

রোমে যাওয়ার ইচ্ছা পুসাঁর ছিল ছোটবেলা থেকেই।

তিনি প্রথমবার ১৬২৪ সালে রোমে যান।

রোমে গিয়ে তিনি প্রাচীন ভাস্কর্য ও রাফায়েল, টিশিয়ান, ক্যারাভাজ্জিওদের কাজ অধ্যয়ন করেন।

তাঁর প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ইতালীয় কার্ডিনাল ফ্রান্সেসকো বারবেরিনি।

রোমে তিনি ক্যাসিয়ানো দেল পোজো (Cassiano dal Pozzo)-র বন্ধু হন, যিনি তাঁকে প্রাচীন শিল্পের গভীর জ্ঞান দেন।

তাঁর প্রাথমিক কাজগুলোতে বারোক প্রভাব দেখা যায়।

পরবর্তীকালে তিনি নিয়ন্ত্রিত ও বৌদ্ধিক ক্লাসিক্যাল স্টাইল গড়ে তোলেন।

তাঁর বিখ্যাত চিত্রগুলির মধ্যে অন্যতম “The Death of Germanicus” (১৬২৭)।

এই চিত্রে রোমান বীরত্ব ও মর্মবেদনা একসঙ্গে মিশে আছে।

“Et in Arcadia Ego” তাঁর আরেকটি বিখ্যাত কাজ, যা মৃত্যুর দার্শনিক ধারণা প্রকাশ করে।

“The Arcadian Shepherds” নামেও এই চিত্রটি পরিচিত।

পুসাঁর কাজে প্রায়ই দেখা যায় প্রকৃতি ও মানবজীবনের মধ্যে দার্শনিক সম্পর্ক।

তিনি বিশ্বাস করতেন শিল্পের উদ্দেশ্য হলো মনকে শান্ত ও উন্নত করা।

তাঁর শিল্পকে বলা হয় “বুদ্ধির শিল্প” (Art of Reason)।

তাঁর রঙ ব্যবহারে সংযম ও গাম্ভীর্য থাকে।

তিনি রোমান ইতিহাস ও বাইবেলের গল্প চিত্রিত করেছেন অসাধারণভাবে।

“The Rape of the Sabine Women” তাঁর অন্যতম ঐতিহাসিক চিত্র।

তিনি দৃশ্যপটকে নিখুঁত জ্যামিতিক কাঠামোয় সাজাতেন।

তাঁর কাজের প্রতিটি চরিত্র যেন নাটকের অভিনেতা—অঙ্গভঙ্গি ও ভঙ্গিমায় আবেগ প্রকাশ করে।

তিনি “visual poetry” বা দৃশ্যকবিতা তৈরির চেষ্টা করতেন।

পুসাঁর প্রভাব দেখা যায় পরবর্তী ফরাসি শিল্পীদের মধ্যে যেমন জ্যাক-লুই ডেভিড।

তিনি ক্লাসিসিজমকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করেন।

১৬৪০ সালে তিনি ফ্রান্সের রাজা লুই ত্রয়োদশের আহ্বানে প্যারিসে ফিরে যান।

সেখানে তাঁকে রাজকীয় চিত্রশিল্পী করা হয়।

তবে প্যারিসের রাজদরবারের রাজনীতি তাঁকে অসন্তুষ্ট করে।

তিনি দুই বছরের মধ্যে আবার রোমে ফিরে যান।

রোমেই তিনি জীবনের বাকি সময় কাটান।

তাঁর স্ত্রী ছিলেন আন্না মারিয়া দুগেট (Anna Maria Dughet)।

তাঁর কোনো সন্তান ছিল না।

পুসাঁ গভীর ধর্মবিশ্বাসী ছিলেন।

তিনি প্রায়ই বাইবেলের জটিল দার্শনিক দিক নিয়ে কাজ করতেন।

“The Adoration of the Golden Calf” তাঁর ধর্মীয় থিমে বিখ্যাত চিত্র।

“The Triumph of Pan” চিত্রে তিনি পৌরাণিক উচ্ছ্বাস ফুটিয়েছেন।

“The Four Seasons” নামে তাঁর শেষ পর্যায়ের একটি বিশাল কাজ আছে।

“The Four Seasons” মানবজীবন ও প্রকৃতির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত।

তিনি নিজের জীবনের শেষ পর্যন্ত আঁকতে থাকেন, এমনকি অসুস্থ অবস্থাতেও।

তাঁর কাজের বৈশিষ্ট্য হলো সংযত নাটকীয়তা।

পুসাঁর মতে শিল্প হলো “চিন্তার মাধ্যমে সৌন্দর্যের প্রকাশ”।

তিনি আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রেখে তা প্রকাশে পারদর্শী ছিলেন।

তাঁর চিত্রে দেহভঙ্গি ও স্থাপত্যের ভারসাম্য ছিল অসাধারণ।

তিনি কখনও কখনও নিজের তৈরি মোমের পুতুল সাজিয়ে আঁকার পূর্বে মডেল তৈরি করতেন।

পুসাঁ ছিলেন নিখুঁততা-পাগল শিল্পী।

প্রতিটি কম্পোজিশন তিনি গণিতের মতো নির্ভুলভাবে সাজাতেন।

তিনি অল্প সংখ্যক কিন্তু অত্যন্ত উচ্চমানের কাজ রেখে গেছেন।

জীবদ্দশায় তিনি জনপ্রিয়তার চেয়ে মর্যাদাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

তিনি অনেক ধনী হননি, কিন্তু সম্মান পেয়েছিলেন সর্বোচ্চ স্তরে।

১৬৬৫ সালে অসুস্থ হয়ে তিনি চিত্র আঁকা বন্ধ করেন।

সেই বছরই নভেম্বর মাসে রোমে তাঁর মৃত্যু হয়।

তাঁকে রোমের সান লরেঞ্জো ইন লুচিনা গির্জায় সমাধিস্থ করা হয়।

সমাধির উপর লেখা আছে “Et in Arcadia Ego”—তাঁর নিজের ধারণার প্রতীক।

পুসাঁর শিল্প ইউরোপে বৌদ্ধিক ও নান্দনিক প্রভাব ফেলেছিল।

১৭শ শতাব্দীর পর থেকে তাঁকে “চিত্রকলার দার্শনিক” বলা হয়।

জ্যাঁ-অগুস্ত দমিনিক ইংর ও ডেভিড তাঁকে গুরু হিসেবে মানতেন।

১৮শ শতকের ফরাসি একাডেমি তাঁর স্টাইলকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে।

তাঁর শিল্প ছিল “Grand Manner” বা মহান পদ্ধতির মূল ভিত্তি।

তিনি দৈনন্দিন জীবনের পরিবর্তে মহৎ ও চিরন্তন বিষয় বেছে নিতেন।

তাঁর কাজের মধ্যে আবেগ নয়, বুদ্ধি প্রাধান্য পায়।

“The Judgment of Solomon” তাঁর ন্যায়বোধের প্রতীকী চিত্র।

“The Holy Family” চিত্রে তিনি গৃহস্থ জীবনের পবিত্রতা দেখিয়েছেন।

তিনি ধর্মীয় চিত্রকে বৌদ্ধিক ও মানবিকভাবে ব্যাখ্যা করতেন।

পুসাঁর স্টাইল পরবর্তীতে ইংল্যান্ড ও জার্মান শিল্পেও প্রভাব ফেলে।

তিনি “Landscape with a Calm” এর মতো দৃশ্যচিত্রেও খ্যাত।

তাঁর দৃশ্যচিত্রে প্রকৃতি কখনও সহানুভূতিশীল, কখনও দার্শনিক।

“Landscape with Orpheus and Eurydice” চিত্রে প্রেম ও ট্র্যাজেডির সংমিশ্রণ দেখা যায়।

তিনি ছিলেন কাব্যিক বুদ্ধিবৃত্তির একজন মাস্টার।

তিনি কোনো স্কুল প্রতিষ্ঠা করেননি, কিন্তু তাঁর অনুসারী অসংখ্য।

“Poussinists” নামে একটি গোষ্ঠী তাঁর স্টাইলের পক্ষে ছিল।

১৭শ শতাব্দীর ফ্রান্সে “Poussinists vs Rubenists” নামে বিতর্ক বিখ্যাত।

পুসাঁর অনুসারীরা রেখাকে প্রাধান্য দিতেন; রুবেনিস্টরা রঙকে।

সেই বিতর্ক ফরাসি শিল্পচিন্তায় গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

তাঁর প্রভাব দেখা যায় নিওক্লাসিকাল আন্দোলনে।

তাঁর কাজের প্রতিটি চরিত্র নৈতিক বার্তা বহন করে।

তিনি বিশ্বাস করতেন—“চিত্রকলা হলো জ্ঞানের প্রকাশ।”

তাঁর স্কেচগুলো আজও অধ্যয়নের বিষয়।

লুভর জাদুঘরে তাঁর বহু চিত্র সংরক্ষিত আছে।

ব্রিটিশ ন্যাশনাল গ্যালারিতেও তাঁর একাধিক শ্রেষ্ঠ কাজ আছে।

আধুনিক যুগে তাঁকে “Visual Philosopher” বলা হয়।

তাঁর আঁকা প্রকৃতি যেন মঞ্চের পটভূমি—চিন্তা ও নাটকের জন্য তৈরি।

পুসাঁ বলতেন, “আবেগকে যুক্তির মাধ্যমে প্রকাশ করো, না হলে তা বিশৃঙ্খলা।”

তাঁর জীবনের শেষ বছরগুলোতে তিনি একা থাকতেন ও চিন্তায় নিমগ্ন থাকতেন।

তিনি বলেছিলেন—“আমি এমন ছবি আঁকি যা হৃদয় নয়, মস্তিষ্ক দিয়ে দেখা যায়।”

তাঁর শিল্প মানবতার সার্বজনীন সত্য প্রকাশ করে।

তিনি শিল্পের শৃঙ্খলা, অনুপাত ও সংযমের আদর্শ স্থাপন করেন।

আজও নিকোলা পুসাঁকে “French Classical Painting”-এর মহান প্রবর্তক হিসেবে স্মরণ করা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top