Francisco Goya

Francisco Goya

ফ্রান্সিসকো গোয়ার পুরো নাম ছিল Francisco José de Goya y Lucientes।

তিনি জন্মগ্রহণ করেন ৩০ মার্চ, ১৭৪৬ সালে, স্পেনের Fuendetodos নামক ছোট একটি গ্রামে।

গোয়া ছিলেন ১৮শ ও ১৯শ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী ও ছাপচিত্রকর।

তাকে অনেক সময় “আধুনিক শিল্পের জনক” বলা হয়।

গোয়ার পিতা ছিলেন একজন গিল্ডেড কারিগর (gilder), যিনি গির্জার সজ্জা তৈরি করতেন।

তার মা Gracia Lucientes মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছিলেন।

গোয়া ছোটবেলাতেই আঁকার প্রতি গভীর আগ্রহ দেখান।

তিনি প্রথম চিত্রকলার প্রশিক্ষণ নেন José Luzán-এর কাছ থেকে।

পরে তিনি Madrid-এ চলে যান এবং Francisco Bayeu-এর কাছে শিক্ষা নেন।

গোয়া Bayeu-এর বোন Josefa Bayeu-কে বিয়ে করেন।

তিনি ১৭৭৩ সালে Josefa-কে বিয়ে করেন।

গোয়ার জীবনে গভীর রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাব ছিল।

তিনি প্রথমে রাজকীয় ট্যাপেস্ট্রি ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরু করেন।

তার ট্যাপেস্ট্রি কার্টুনগুলো ছিল দৈনন্দিন জীবনের দৃশ্যভিত্তিক।

উদাহরণস্বরূপ — The Parasol, The Kite, The Blind Man’s Bluff ইত্যাদি।

১৭৮৬ সালে তিনি স্পেনের রাজকীয় দরবারের চিত্রশিল্পী হন।

পরে তিনি রাজা Charles IV-এর Court Painter পদে উন্নীত হন।

গোয়া রাজপরিবারের বেশ কয়েকজনের প্রতিকৃতি এঁকেছেন।

তার অন্যতম বিখ্যাত রাজকীয় চিত্রকর্ম হলো “Charles IV of Spain and His Family”।

এই চিত্রে রাজপরিবারের সদস্যদের চিত্রায়নে সূক্ষ্ম রসিকতা ও ব্যঙ্গ রয়েছে।

গোয়া প্রায়ই সমাজের ভণ্ডামি ও দুর্নীতি তুলে ধরতেন।

তিনি Rococo ধারার প্রভাব নিয়ে কাজ শুরু করলেও পরে Romanticism ও Realism-এর দিকে অগ্রসর হন।

১৭৯২ সালে তিনি মারাত্মক অসুস্থ হন।

এই অসুস্থতার ফলে তিনি চিরকালের জন্য বধির হয়ে যান।

তার বধির হওয়া জীবনের ও শিল্পের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

অসুস্থতার পর তার চিত্রকর্মগুলো অন্ধকার, দুঃস্বপ্নময় ও গভীর হয়।

তিনি মানুষের মনের ভয়, যুদ্ধ, হিংসা ও পাগলামি চিত্রিত করতে শুরু করেন।

এই সময়ে তিনি তৈরি করেন বিখ্যাত etching সিরিজ — Los Caprichos।

Los Caprichos (১৭৯৯) সমাজের নৈতিক অবক্ষয় ও অজ্ঞানতাকে ব্যঙ্গ করে।

এর মধ্যে বিখ্যাত চিত্র — “The Sleep of Reason Produces Monsters”।

এই ছবিতে এক মানুষ ঘুমিয়ে আছে, চারপাশে ভয়ংকর প্রাণী ঘিরে আছে।

গোয়া বলেছিলেন, “Reason যখন ঘুমায়, তখন দানবেরা জন্ম নেয়।”

গোয়া ছিলেন একজন গভীর চিন্তাশীল ও মানবতাবাদী শিল্পী।

তার শিল্পে রাজনীতি, ধর্ম ও সমাজের কঠিন বাস্তবতা স্থান পেয়েছে।

১৮০৮ সালে ফ্রান্স স্পেন আক্রমণ করে — Napoleonic invasion।

এই সময়ের ঘটনা গোয়াকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দেয়।

তিনি যুদ্ধের ভয়াবহতা চিত্রিত করেন তার বিখ্যাত সিরিজে — The Disasters of War।

The Disasters of War (১৮১০–১৮২০) সিরিজে ৮২টি প্রিন্ট রয়েছে।

এতে দেখা যায় যুদ্ধের নির্মমতা, দুঃখ, মৃত্যু ও মানবতা হারানো।

তার অন্যতম বিখ্যাত যুদ্ধচিত্র হলো “The Third of May 1808”।

এই চিত্রে ফরাসি সৈন্যদের দ্বারা স্প্যানিশ নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যার দৃশ্য ফুটে উঠেছে।

এই চিত্রকে আধুনিক যুদ্ধচিত্রের সূচনা বলা হয়।

“The Third of May” আজ Museo del Prado-এ সংরক্ষিত।

গোয়ার অনেক চিত্র আজও প্রাডো মিউজিয়ামের প্রধান আকর্ষণ।

তিনি অন্ধকার ও মানসিক বিকারকে ফুটিয়ে তুলেছেন Black Paintings সিরিজে।

Black Paintings তিনি তার বাড়ির দেয়ালে এঁকেছিলেন।

সেই বাড়ির নাম ছিল Quinta del Sordo (“The House of the Deaf Man”)।

সেখানে তিনি একাকীত্বে বসবাস করতেন।

Black Paintings-এ রয়েছে ১৪টি ভয়ঙ্কর চিত্র।

তার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো “Saturn Devouring His Son”।

এই চিত্রে দেবতা স্যাটার্নকে নিজের সন্তানকে খেতে দেখা যায়।

এটি সময়, মৃত্যু ও ক্ষমতার ভয়াবহ প্রতীক।

গোয়ার শিল্পে অন্ধকার, হিংসা ও মানুষের দুর্বলতার প্রতিফলন দেখা যায়।

তার কৌশলে তেলরং, ইচিং ও অ্যাকুয়াটিন্টের চমৎকার সংমিশ্রণ রয়েছে।

তিনি স্পেনের রয়্যাল অ্যাকাডেমি অব সান ফার্নান্দো-এর সদস্য ছিলেন।

তার কাজগুলো সমসাময়িক স্প্যানিশ সমাজের প্রতিচ্ছবি।

গোয়ার পরবর্তী কাজগুলো মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মতো।

তিনি মানুষের মনের গভীরতাকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন।

গোয়া ছিলেন অত্যন্ত স্বাধীন চিন্তার শিল্পী।

তিনি ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরোধী ছিলেন।

তার কিছু কাজ Inquisition দ্বারা সমালোচিত হয়েছিল।

তিনি The Nude Maja ও The Clothed Maja চিত্রের জন্য বিতর্কে পড়েন।

এগুলো স্পেনের প্রথম প্রকাশ্য নগ্ন নারীচিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম।

ধারণা করা হয়, ছবিগুলোর মডেল ছিলেন Duchess of Alba।

Duchess of Alba ছিলেন গোয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, সম্ভবত প্রেমিকা।

গোয়ার প্রতিকৃতি আঁকার দক্ষতা ছিল অতুলনীয়।

তিনি চরিত্রের মানসিক অবস্থা মুখাবয়বে ফুটিয়ে তুলতেন।

তার স্বাক্ষরধর্মী স্টাইল ধীরে ধীরে Impressionism-এর পূর্বসূরি হয়ে ওঠে।

গোয়ার প্রভাব পরবর্তীতে Édouard Manet, Picasso, Dalí, Francis Bacon প্রমুখ শিল্পীর ওপর পড়ে।

তিনি তার সময়ের সবচেয়ে সাহসী ও আধুনিক চিন্তার শিল্পী হিসেবে বিবেচিত।

তার চিত্রে রাজনৈতিক সাহস ও মানবিকতার মিশ্রণ দেখা যায়।

গোয়া ১৮২৪ সালে রাজনৈতিক চাপে স্পেন ছেড়ে ফ্রান্সের বোর্দো (Bordeaux)-তে যান।

তিনি জীবনের শেষ বছরগুলো সেখানেই কাটান।

ফ্রান্সে থেকেও তিনি আঁকা চালিয়ে যান।

সেখানেই তিনি তৈরি করেন La Tauromaquia (bullfighting series)।

তিনি ছাপচিত্রের কৌশলে বহু নতুনত্ব এনেছিলেন।

গোয়া একাধারে বাস্তববাদী ও কল্পনাপ্রবণ ছিলেন।

তার কাজ “reason vs. madness” বা “civilization vs. barbarism”-এর দ্বন্দ্ব প্রকাশ করে।

তার পুত্রদের মধ্যে মাত্র একজন, Javier Goya, বেঁচে ছিলেন।

গোয়া জীবনের শেষ দিকে একদম একাকী হয়ে যান।

তার শ্রবণশক্তিহীনতা তাকে গভীর আত্মচিন্তায় নিমজ্জিত করে।

তিনি খুব কম মানুষকেই দেখা করতেন।

তার Black Paintings ব্যক্তিগত যন্ত্রণা ও হতাশার প্রতিফলন।

তিনি নিজের জীবনের অনিশ্চয়তা ও মৃত্যুভয়কে শিল্পে রূপ দেন।

১৮২৮ সালের ১৬ এপ্রিল, ফ্রান্সের বোর্দোতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তার মৃত্যুর সময় বয়স ছিল ৮২ বছর।

প্রথমে তার কবর ছিল বোর্দোতে।

পরে ১৯০১ সালে তার দেহাবশেষ মাদ্রিদে স্থানান্তরিত করা হয়।

তার মাথা কফিনে পাওয়া যায়নি, আজও রহস্য রয়ে গেছে।

অনেকেই মনে করেন, গোয়া নিজেই মৃত্যুর পর শরীর-মনের অমরত্বের প্রতীক হয়ে ওঠেন।

গোয়া ছিলেন Enlightenment যুগের অন্যতম সৃজনশীল কণ্ঠস্বর।

তিনি যুক্তিবাদ ও মানবিক মূল্যবোধের প্রবক্তা ছিলেন।

তার কাজ সমাজের মুখোশ খুলে দিয়েছিল।

গোয়ার কাজ একদিকে সৌন্দর্য, অন্যদিকে ভয়াবহ সত্য তুলে ধরে।

তিনি রেনেসাঁর পর স্পেনের শ্রেষ্ঠ শিল্পী হিসেবে স্বীকৃত।

গোয়া ছিলেন Velázquez-এর উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচিত।

তার কাজ Picasso-র Guernica পর্যন্ত প্রভাব ফেলেছিল।

তিনি জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে নিজের শৈলী বদলেছেন।

গোয়া ইতিহাসে এমন শিল্পী যিনি সৌন্দর্যের মধ্যেও অন্ধকার দেখতে শিখিয়েছেন।

আজ গোয়ার নাম স্পেনের শিল্প-ঐতিহ্যের গর্ব ও মানব চেতনার প্রতীক।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top