অ্যামব্রোজ গুইনেট বিয়ার্স (১৮৪২ – ১৯১৩?)। নামটি শুনলেই মনে পড়ে তীক্ষ্ণ বিদ্রূপ, কালো হাস্য আর মানব প্রকৃতির নির্মম বিশ্লেষণ। তিনি ছিলেন সাংবাদিক, গল্পকার, কব্যঙ্গকার, কবি, অভিধানকার এবং আমেরিকান গৃহযুদ্ধের সৈনিক। কিন্তু সবচেয়ে বড় পরিচয়—তিনি ছিলেন আধুনিক কালো হাস্য সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ। এডগার অ্যালান পো-র পর তিনিই প্রথম আমেরিকান লেখক যিনি ভয়, মৃত্যু ও অস্তিত্বের শূন্যতাকে হাস্যরসের আয়নায় দেখিয়েছেন এমন নির্মম নিষ্ঠুরতায় যে পাঠক হাসতে হাসতে শিউরে ওঠেন।
প্রারম্ভিক জীবন ও গৃহযুদ্ধের অভিজ্ঞতা
১৮৪২ সালের ২৪ জুন ওহাইওর মেগস কাউন্টিতে জন্ম। বাবা-মা দুজনেই ধর্মান্ধ পিউরিটান। তেরো সন্তানের মধ্যে দশম। বিয়ার্স নিজেই লিখেছিলেন, “আমার বাবা-মা আমাকে ধর্ম দিয়েছিলেন, কিন্তু আমি তা ফেরত দিয়ে দিয়েছি।” কৈশোরে বাড়ি ছেড়ে পালান। কিছুদিন কেনটাকির একটি সংবাদপত্রে টাইপসেটারের কাজ করেন।
১৮৬১ সালে আমেরিকান গৃহযুদ্ধ শুরু হলে মাত্র ঊনিশ বছর বয়সে ইউনিয়ন আর্মিতে যোগ দেন। ইন্ডিয়ানা নবম রেজিমেন্টে সৈনিক। শিলোহ, চিকামাউগা, কেনেস মাউন্টেন, পিকেটস মিল—যে যুদ্ধগুলো আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তাক্ত, তার প্রায় সবকটিতেই তিনি ছিলেন। ১৮৬৪ সালে কেনেস মাউন্টেন যুদ্ধে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। যুদ্ধ শেষে লেফটেন্যান্ট পদে অবসর নেন।
যুদ্ধের এই অভিজ্ঞতাই বিয়ার্সের সাহিত্যের মূল উপাদান। তাঁর বিখ্যাত গল্পসমূহ—“An Occurrence at Owl Creek Bridge”, “Chickamauga”, “Killed at Resaca”, “A Horseman in the Sky”—সবই গৃহযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত। কিন্তু এগুলো কোনো বীরত্বগাথা নয়; বরং যুদ্ধের উন্মাদনা, মৃত্যুর নিরর্থকতা ও মানুষের পশুত্বের নগ্ন চিত্র।
সান ফ্রান্সিসকো ও সাংবাদিক জীবন
যুদ্ধের পর সান ফ্রান্সিসকো চলে যান। সেখানে উইলিয়াম র্যান্ডল্ফ হার্স্টের সংবাদপত্রে কলামিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। “The Argonaut”, “The Wasp”, “San Francisco Examiner”—এই সব কাগজে তাঁর বিদ্রূপমূলক কলাম প্রকাশিত হতে থাকে। তাঁর কলামের নাম ছিল “Prattle” এবং “The Devil’s Dictionary” ধারাবাহিক।
বিয়ার্সের কলম ছিল ছুরির ফলার মতো ধারালো। তিনি রাজনীতিবিদ, ধর্মযাজক, ব্যবসায়ী, সাহিত্যিক—কাউকে রেহাই দিতেন না। তাঁর একটি বিখ্যাত উক্তি: “War is God’s way of teaching Americans geography.” (যুদ্ধ হল ঈশ্বরের আমেরিকানদের ভূগোল শেখানোর উপায়।)
বিখ্যাত গ্রন্থাবলী
অ্যামব্রোজ বিয়ার্সের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বইগুলোর তালিকা নিম্নরূপ:
১. The Fiend’s Delight (১৮৭৩) – প্রথম বই, ব্যঙ্গকাহিনি ও কবিতার সংকলন।
২. Nuggets and Dust Panned Out in California (১৮৭৩) – ক্যালিফোর্নিয়ার সোনার খনি শ্রমিকদের নিয়ে ব্যঙ্গ।
৩. Cobwebs from an Empty Skull (১৮৭৪) – ছোট গল্প ও কৌতুক।
৪. The Dance of Death (১৮৭৭) – উইলিয়াম হারমানের সঙ্গে যৌথভাবে লেখা, নাচ ও যৌনতার বিরুদ্ধে ব্যঙ্গ।
৫. Tales of Soldiers and Civilians (১৮৯১, পরে In the Midst of Life নামে পুনর্মুদ্রিত) – এটিই তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত গল্পসংকলন। এতে আছে “An Occurrence at Owl Creek Bridge”, “Chickamauga”, “A Horseman in the Sky” ইত্যাদি।
৬. Can Such Things Be? (১৮৯৩) – অতিপ্রাকৃত ও ভৌতিক গল্পের সংকলন। “The Damned Thing”, “Moxon’s Master” এখানে আছে।
৭. Fantastic Fables (১৮৯৯) – ঈশপের মতো কিন্তু অত্যন্ত কালো হাস্যের উপকথা।
৮. The Cynic’s Word Book (১৯০৬, পরে The Devil’s Dictionary নামে ১৯১১ সালে প্রকাশ) – তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় ও টিকে থাকা কীর্তি।
৯. A Son of the Gods and A Horseman in the Sky (১৯০৭) – গল্প সংকলন।
১০. The Shadow on the Dial (১৯০৯) – প্রবন্ধ সংকলন।
১১. Write It Right (১৯০৯) – ভাষার ব্যবহার নিয়ে ছোট বই।
১২. The Collected Works of Ambrose Bierce (১৯০৯–১৯১২) – ১২ খণ্ডের সংস্করণ, নিউইয়র্কের Neale Publishing Company থেকে প্রকাশিত।
মৃত্যুর পর আরও কিছু সংকলন বেরিয়েছে, যেমন A Much Misunderstood Man (চিঠিপত্র), A Sole Survivor ইত্যাদি।
The Devil’s Dictionary: এক অমর কীর্তি
“The Devil’s Dictionary” বিয়ার্সের সবচেয়ে বড় উপহার মানবজাতির প্রতি। এটি একটি অভিধান যেখানে প্রতিটি শব্দের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে চরম বিদ্রূপে। কয়েকটি উদাহরণ:
Admiration: Our polite recognition of another’s resemblance to ourselves.
(প্রশংসা: অন্যের মধ্যে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখার ভদ্র স্বীকৃতি।)
Bride: A woman with a fine prospect of happiness behind her.
(কনে: যার সুখের সম্ভাবনা পিছনে রয়ে গেছে।)
Christian: One who believes that the New Testament is a divinely inspired book admirably suited to the spiritual needs of his neighbor.
(খ্রিস্টান: যে বিশ্বাস করে নতুন নিয়ম একটি ঐশ্বরিক গ্রন্থ যা তার প্রতিবেশীর আধ্যাত্মিক চাহিদার জন্যে অপূর্ব উপযোগী।)
Peace: In international affairs, a period of cheating between two periods of fighting.
(শান্তি: দুটি যুদ্ধের মাঝখানে প্রতারণার সময়কাল।)
এই বই আজওয়াজ এখনো সমান তাজা। মার্ক টোয়েনের পর আমেরিকান সাহিত্যে এমন নির্মম ব্যঙ্গ আর কেউ লেখেননি।
ব্যক্তিগত জীবন ও রহস্যময় অন্তর্ধান
১৮৭১ সালে মেরি এলেন ডে-কে বিয়ে করেন। তিন সন্তান। কিন্তু দুই ছেলে অল্প বয়সে মারা যায়—একজন দ্বন্দ্বযুদ্ধে, আরেকজন মদের নেশায়। ১৯০৪ সালে স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ। জীবনের শেষ দিকে তিনি একা, তিক্ত ও ক্লান্ত।
১৯১৩ সালের অক্টোবরে ৭১ বছর বয়সে তিনি মেক্সিকো চলে যান। পাঞ্চো ভিয়ার বিপ্লবী বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিতে চেয়েছিলেন বলে মনে করা হয়। শেষ চিঠি লেখেন ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে তাঁর সেক্রেটারিকে: “To be a Gringo in Mexico—ah, that is euthanasia!” (মেক্সিকোতে একজন গ্রিঙ্গো হওয়া—আহ, এটাই তো সুখমৃত্যু!)
তারপর থেকে আর কোনো খোঁজ নেই। কেউ বলেন মেক্সিকোতেই গুলিতে মারা গেছেন। কেউ বলেন চিহুয়াহুয়ার কোনো গির্জার সামনে তাঁর মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল। কেউ বলেন তিনি আত্মহত্যা করেছেন। আবার কেউ বলেন গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে ঝাঁপ দিয়েছেন।
আজ পর্যন্ত অ্যামব্রোজ বিয়ার্সের মৃত্যু রহস্যই রয়ে গেছে। তাঁর শেষ কথা যেন তাঁর জীবনের সারাংশ: “I leave here tomorrow for an unknown destination.”
বিয়ার্সের প্রভাব
এইচ. এল. মেনকেন, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, জর্জ স্টার্লিং, এমনকি জর্জ ওরওয়েল পর্যন্ত বিয়ার্সের প্রশংসা করেছেন। “An Occurrence at Owl Creek Bridge” গল্পটি সাহিত্যের ইতিহাসে একটি মাইলফলক—সময়ের বিভ্রম ও মৃত্যুর মুহূর্তের মনস্তত্ত্ব এমন নিখুঁতভাবে আর কেউ লেখেননি। ফরাসি চলচ্চিত্রকার রবার্ট এঙ্কো এই গল্প অবলম্বনে ১৯৬২ সালে “La Rivière du hibou” নামে ছোট ছবি বানান, যা অস্কার জিতেছিল।
অ্যামব্রোজ বিয়ার্স ছিলেন এক অদ্ভুত মানুষ। তিনি বিশ্বাস করতেন না কোনো কিছুতেই—ধর্মে নয়, দেশপ্রেমে নয়, মানবতায় নয়। তবু তাঁর লেখায় যে তীব্রতা ও সততা আছে, তা আজও পাঠককে না হেসে থাকতে দেয় না, না কাঁদতে। তিনি যেন শয়তানের মুখপাত্র হয়ে মানুষের মুখোশ খুলে দিয়েছেন।
তাঁর শেষ কথায় ফিরে যাই: “Good-bye—if you hear of my being stood up against a Mexican stone wall and shot to rags please know that I think that a pretty good way to depart this life. It beats old age, disease, or falling down the cellar stairs.”
অ্যামব্রোজ বিয়ার্স চলে গেছেন, কিন্তু তাঁর কালো হাসি আজও আমাদের তাড়া করে বেড়ায়।
১. The Devil’s Dictionary (1906 / 1911)
বিস্তারিত ব্যাখ্যা
এটি বিয়ার্সের সবচেয়ে বিখ্যাত ও অবিনাশী সৃষ্টি। একে সাধারণ অভিধান ভাবলে চলবে না—এটি এক ব্যঙ্গাত্মক “উল্টো-অভিধান,” যেখানে প্রতিটি শব্দকে তিনি মানুষের ভণ্ডামি, সামাজিক কপটতা ও সভ্যতার অন্ধ কারুকাজ দেখানোর জন্য নতুন অর্থ দিয়েছেন।
এই অভিধান মানুষের মানসিক অন্ধকারকে এমনভাবে তুলে ধরে, যেন সাধারণ শব্দগুলো হঠাৎ আয়নার মতো বিদ্রূপে ঝকমক করে ওঠে।
উদাহরণ:
“Love” শব্দকে তিনি বলেছেন—মানুষের “মাতলামি-জাতীয় অনুভূতি, যা বিয়ে নামক চিকিৎসায় কিছুটা সেরে যায়।”
এই রসিক, দগ্ধ, শাণিত ভাষাশৈলী পুরো বই জুড়ে উপস্থিত। বিয়ার্স এখানে সমাজকে কটাক্ষ করেছেন; তবু অদ্ভুত এক বিদ্যুৎ-চমক হাস্যরস পাঠককেও টেনে নেয়।
২. Tales of Soldiers and Civilians (1891)
(আরেকটি শিরোনাম In the Midst of Life)
বিস্তারিত ব্যাখ্যা
এটি বিয়ার্সের গৃহযুদ্ধ–অভিজ্ঞতা থেকে তৈরি গল্পসংকলন। যুদ্ধের মাঠে মানুষের ভাঙা চেহারা, পালাতে না-পারা ভাগ্য, মৃত্যুর ঠাণ্ডা শ্বাস—সব মিলিয়ে বইটি একটি অদ্ভুত আলো-অন্ধকারের নাটমঞ্চ।
সবচেয়ে বিখ্যাত গল্প An Occurrence at Owl Creek Bridge—মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে মানুষের মস্তিষ্ক কীভাবে শেষ মুহূর্তে স্বপ্ন-বিভ্রম তৈরি করে, তার শিহরণজাগানো উপাখ্যান।
অন্যান্য গল্পে রয়েছে—যুদ্ধক্ষেত্রের আতঙ্ক, সামরিক ভুল, সৈন্যদের ট্র্যাজেডি, এবং মানবস্বভাবের টানাপোড়েন।
এটি মূলত বাস্তববাদ, ভয়, মনস্তত্ত্ব ও তীব্র মানবিকতার মিশ্রণ—যেন যুদ্ধের কুয়াশায় মানুষের সত্যিকার মুখ হঠাৎ দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
৩. Can Such Things Be? (1893)
বিস্তারিত ব্যাখ্যা
এটি অতিপ্রাকৃত, রহস্যময়, ভূতুড়ে ও অজ্ঞানাতীত ঘটনার গল্পসমগ্র।
বিয়ার্স এখানে বাস্তব আর অবাস্তবের মধ্যে পাতলা এক পর্দা টাঙিয়ে দিয়েছেন, যেন পাঠক হাঁটতে হাঁটতে আচমকা অন্য এক জগতের ফিসফিসানি শুনতে পায়।
গল্পগুলোতে দেখা যায়—
মৃত্যুর পর আত্মার প্রত্যাবর্তন,
অদৃশ্য শক্তির হস্তক্ষেপ,
সময়-ভ্রমণ ও অতীন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা,
দুর্বোধ্য ঘটনা যেখানে যুক্তি ব্যর্থ।
বিয়ার্সের ভাষা এখানে ঘন কুয়াশার মতো—শীতল, তীক্ষ্ণ, আঁধারভরা। পাঠক কখনো নিশ্চিত হতে পারে না, কী সত্য আর কোনটা শুধুই ভয়-সৃষ্টি।
৪. Black Beetles in Amber (1892)
বিস্তারিত ব্যাখ্যা
এটি ব্যঙ্গ-রচনার কাব্যগ্রন্থ—অদ্ভুত ধারালো কবিতা, যেখানে বিয়ার্স রাজনীতি, সমাজ, মানুষের মুখোশ, ভণ্ড নৈতিকতা—সবার ওপর আগুনের মতো শব্দ বর্ষণ করেছেন।
কবিতা কিন্তু কোমল নয়; এগুলো যেন তিরের মতো ছুটে আসে।
আধুনিক আমেরিকার রাজনীতিবিদদের জড়তা, সামাজিক কপটতা, নানা প্রতিষ্ঠান—সবকিছুকে তিনি কবিতার ক্ষুরধার ভাষায় বিদ্ধ করেছেন।
ফলে এই বইটি পাঠকের মনে জ্বলে ওঠে কঠিন, কিন্তু নেশাময় আগুনের মতো।
৫. Shapes of Clay (1903)
বিস্তারিত ব্যাখ্যা
এটিও ব্যঙ্গ-ভাষায় লেখা কবিতার সংকলন, তবে আগের তুলনায় আরও গাঢ়, আরও বিষণ্ণ।
এখানে বিয়ার্স মানবসভ্যতাকে মাটির নরম আকৃতির মতো দেখেছেন—যা সহজে বিকৃত হয়, ভেঙে যায়, অথবা ভেতরের অন্ধকারে মিশে যায়।
বইটিতে রয়েছে—
অনৈতিক সমাজব্যবস্থার সমালোচনা
মানুষের স্বভাবগত লোভ
ভণ্ডামির আড়ালে লুকোনো পশুত্ব
সময়ের নিষ্ঠুর রসিকতা
কবিতাগুলোতে রসিকতা আছে—তবে তা যেন ধোঁয়াটে হাসি, যার নিচে প্রচ্ছন্ন কষ্ট ও ক্ষোভ।
৬. The Cynic’s Word Book (1906)
(এটি The Devil’s Dictionary-এর প্রাথমিক সংস্করণ)
বিস্তারিত ব্যাখ্যা
এটি মূলত *The Devil’s Dictionary *-এর আগের রূপ। একই ব্যঙ্গাত্মক ভাষায় মানুষের আচরণ, চিন্তাভাবনা, নৈতিকতার বালখিল্যতা—সবকিছুকে শব্দের ভেতর থেকে উন্মোচিত করেছেন।
এতে বহু সংজ্ঞা পরবর্তীতে চূড়ান্ত অভিধানে স্থান পেয়েছে।
ফলে এই বইটি বিয়ার্সের চিন্তার প্রথম দিকের আগ্নেয় ধারা বুঝতে সাহায্য করে।
৭. Fantastic Fables (1899)
বিস্তারিত ব্যাখ্যা
এটি ক্ষুদ্রাকৃতির ফেবল বা উপকথার সংকলন, কিন্তু এগুলো আদতে “উল্টো-নৈতিকতার গল্প।”
প্রচলিত উপকথায় যেখানে নৈতিকতা শিখিয়ে দেওয়া হয়, বিয়ার্স সেখানে নৈতিকতার ভেতরের ফাঁক-ধরা সত্যগুলো তুলে ধরেছেন তীক্ষ্ণ রসিকতায়।
প্রতিটি গল্প সংক্ষিপ্ত—একটি দংশনকারী সত্যকে এক কামড়েই পাঠকের মনে ঢুকিয়ে দেয়।
মানুষের লোভ, অহংকার, ক্ষমতার অপব্যবহার, সমাজের ভঙ্গুর কাঠামো—সবই এই ক্ষুদ্র ফেবলসমূহে উপস্থিত।
৮. Ashes of the Beacon (1909)
বিস্তারিত ব্যাখ্যা
এটি ভবিষ্যত-ভিত্তিক, দার্শনিক ও কল্পনামূলক প্রবন্ধের সংকলন।
বিয়ার্স এখানে লিখেছেন এমন এক ভবিষ্যৎ সভ্যতার কথা, যেখানে মানুষ নৈতিক ও রাজনৈতিক ভুলের কারণে ধ্বংসের দিকে এগিয়েছে।
এটিকে “ডিস্টোপিয়ান এসের সংকলন” বলা যায়।
গভীর ব্যঙ্গ, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি, সামাজিক ভুলের পরিণতি—এসব নিয়ে লেখাগুলো নির্মিত।
যেন ভবিষ্যতের ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে বিয়ার্স ইতিহাসকে দেখছেন।
৯. Write It Right (1909)
বিস্তারিত ব্যাখ্যা
এটি ভাষা ও লেখনশৈলী নিয়ে বিয়ার্সের প্রবন্ধ।
তিনি ভুল ব্যাকরণ, ভুল ব্যবহার, দুর্বল লেখালেখি—সব কিছুকে রসিক বিদ্রূপে তুলে ধরেছেন।
বইটি শুধু নির্দেশিকা নয়; এটি এক ব্যতিক্রমী শৈলীশিক্ষা, যেখানে ভাষার শুদ্ধতা আর ব্যঙ্গ-রস একই স্রোতে বয়ে যায়।




















