মোঃ ফখরুল ইসলাম সাগর
২০৩০ সাল। ঢাকা এখন ‘স্মার্ট সিটি’ নয়, একটি ‘অতি-স্মার্ট’ শহর। প্রতিটি আবেগ, প্রতিটি সিদ্ধান্ত অ্যালগরিদমের অধীন। অনিক সেন, শহরের সবচেয়ে ধনী ডেটা আর্কিটেক্ট, তার পুরো জীবনটাই ছিল কোড আর স্ক্রিনের পেছনে বন্দি। তার সাফল্যের পারদ যত উপরে উঠেছে, তার জীবনের শূন্যতা তত বেড়েছে। তার সব ব্যক্তিগত তথ্য সামরিক-গ্রেডের এনক্রিপশনে সুরক্ষিত, কারণ এই জগতে গোপনীয়তাই শেষ বিলাসিতা।
একদিন দুপুরে, তার নতুন এআই-অ্যাসিস্ট্যান্টকে ফাঁকি দিয়ে, অনিক এক স্যাঁতসেঁতে গলির মুখে একটি পুরনো সাইনবোর্ড দেখতে পেল: “নিরালা কফি হাউস”।
দোকানটি ছিল প্রযুক্তির সমাধি। এখানে ক্যাশ ছাড়া আর কিছু চলে না। নেই কোনো ওয়াই-ফাই সংকেত, নেই কোনো ডিজিটাল মেনু। ধোঁয়া ওঠা কফির সুবাস আর পুরনো কাঠের গন্ধ সেখানে এক হারিয়ে যাওয়া সময়ের জাল বুনেছিল। কাউন্টারে বসে ছিলেন রমা দেবী, শীর্ণকায়া কিন্তু চোখে প্রখর বুদ্ধি।
অনিক ইতস্তত করে কফির অর্ডার দিল।
কফি হাতে নিয়ে তিনি দেখলেন, রমা দেবীর মুখে এক অদ্ভুত হাসি। “অনিক, তুমি যে কফিটি পান করছ, সেটা শুধু কফি নয়। তুমি তোমার দাদুর কথা খুব ভাবো, তাই না? সেই শেষ বৃষ্টিভেজা দিনটি, যেদিন তুমি বলতে পারোনি, তাঁকে কত ভালোবাসো…”
অনিক চমকে চেয়ার থেকে প্রায় পড়ে গেল। রমা দেবী তার সবচেয়ে গোপন এবং এনক্রিপ্ট করা অনুশোচনার কথা জানলেন কী করে? এই তথ্য পৃথিবীর কোনো সার্ভারে নেই!
রুদ্ধশ্বাসে অনিক প্রশ্ন করল, “কীভাবে জানলেন? আমার সব তথ্য…”
রমা দেবী হেসে উত্তর দিলেন, “তথ্য? সে তো বাইরের জিনিস, বাবা। আমার কফি বিনগুলো অন্যরকম। সে অ্যালগরিদম বোঝে না, সে শুধু স্বাদ নেয়। কফি তৈরির সময় যে বাষ্প ওঠে, আমি তাতে তোমার আত্মার সবচেয়ে গভীরতম অপ্রকাশিত স্মৃতিটার স্বাদ পাই।” তিনি একটি পুরনো কফির পাত্র দেখালেন, “এইটা তোমার ‘মেমরি এসেন্স’। তোমার হৃদয় যা কিছু লুকিয়ে রাখে, আমার কফি তা-ই বের করে আনে।”
অনিক কফিতে চুমুক দিল। আজ তার কফিতে কোনো ডিজিটাল তিক্ততা নেই, আছে শুধু নস্টালজিয়া আর অব্যক্ত ভালোবাসার উষ্ণতা। সে বুঝতে পারল, পৃথিবীতে এমন কিছু গোপনীয়তা আছে, যা প্রযুক্তির নাগালের বাইরে—আর সেটাই এই গল্পের সবচেয়ে বড় ‘হিট’ হওয়ার মতো মোচড়। নিরালা কফি হাউসের কফি বিনগুলো কেবল কফি নয়, সেগুলো আসলে হারিয়ে যাওয়া মানবিক অনুভূতির বীজ।
Md Fakhrul Islam Sagor





















“লেখাটি এপ্রুভ ও প্রকাশিত হওয়ায় খুব ভালো লাগছে।
আপনাদের এই প্ল্যাটফর্ম আমাকে আরও নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে লিখতে উৎসাহিত করবে।
ভবিষ্যতে আরও আকর্ষণীয় গল্প নিয়ে আপনাদের সামনে আসার চেষ্টা করব।
পাশে থাকবেন।”
শুভেচ্ছা ।