মোঃ ফখরুল ইসলাম সাগর
অধ্যায় ১: ❝ শেষ ফোনকল। ❞
ঢাকার রাত তখন ভিজে অন্ধকার। আকাশে ঘন মেঘ, মাঝে মাঝে বজ্রপাত।
মিরপুরের রোড-৭ এ বসে সাংবাদিক আরাফাত হোসেন রাত জাগা নিউজ ফাইল করছিল।
অফিস থেকে সে অনেক আগেই ফিরে এসেছে, কিন্তু মাথায় এক অদ্ভুত অস্বস্তি ঘুরছিল।
আজ যেন বাতাসেও সতর্কবার্তা মিশে আছে।
ঘড়িতে তখন ২:১৬ AM।
কম্পিউটার স্ক্রিনের আলোতে ঘরটা ফিকে নীল হয়ে আছে।
ঠিক তখনই-
তার ফোন কাঁপতে শুরু করল।
Unknown Number Calling…
আরাফাত বিরক্ত হল, কিন্তু কৌতূহলও কাজ করল।
ফোন ধরতেই-
“হ-হ্যালো?”
গলার স্বর কাঁপছে।
এক তরুণী।
ভয়ে যেন কথা বের হচ্ছে না।
আরাফাত জিজ্ঞেস করল,
“আপনি কে?”
মেয়েটি ফিসফিস করে বলল-
“সময় নেই… ওরা আমাকে দেখছে… আপনি শুনছেন?”
আরাফাত চমকে উঠল।
চোখের সামনে সবকিছু ধীরে যেতে লাগল।
ঘড়ির কাঁটা ঠিক তখন ২:১৭ AM-এ টিক করল।
পরের সেকেন্ডেই ফোনের ওপার থেকে শোনা গেল-
ধপ!
একটা জিনিস মাটিতে পড়ার শব্দ।
তারপর ছুটোছুটি, অচেনা কারো ভারী পায়ের শব্দ,
আর সেই সাথে মেয়েটির ভয়ঙ্কর চিৎকার-
“না! প্লিজ-নাaaaa-”
লাইন কেটে গেল।
এক মুহূর্তের জন্য ঘরের সব শব্দ যেন থেমে গেল।
কেবল ঝুম ঝুম করে তার হৃদযন্ত্রের ধুকপুকানি শোনা যাচ্ছে।
কে ছিল মেয়েটি?
কোথায় ছিল?
আর “ওরা” কারা?
আরাফাত বুঝতেই পারেনি যে মাত্র ত্রিশ সেকেন্ডের এই ফোনকল তার আগামীর প্রতিটি রাতকে নরকে পরিণত করবে।
—
পরের সকাল: অস্বস্তির শুরু
সকালে ঘুম থেকে উঠে সে ভাবে হয়তো রাতে স্বপ্ন দেখেছিল।
কিন্তু ডেস্কে গিয়ে দেখে-
তার দরজার নিচে ঢুকানো রয়েছে একটি লাল খাম।
আরাফাতের হাত অবশ হয়ে এল।
লাল খামের উপরে কালো কালি দিয়ে লেখা মাত্র তিনটি শব্দ-
“গেম শুরু হলো।”
ভিতরে ছিল একটি ছবি…
একটি মেয়ের হাসিমাখা ছবি।
আরাফাতের গলা শুকিয়ে গেল।
এই মেয়েটিকে সে কোথাও যেন দেখেছে… কিন্তু কোথায়?
ঠিক তখনই মোবাইলে নিউজ নোটিফিকেশন আসে-
“গাবতলীতে অজ্ঞাত এক নারীর মৃতদেহ উদ্ধার।”
মেয়েটির বয়স, মুখের গড়ন…
সব কিছু ছবির সাথে হুবহু মিলে যায়।
আর সবচেয়ে শকিং বিষয়-
রিপোর্ট বলছে মেয়েটি তিন দিন আগে মারা গেছে।
আরাফাতের চোখ বড় হয়ে গেল।
তাহলে…
গত রাত ২:১৭ AM-এ যিনি ফোন করেছিলেন…
তিনি কে?
তার বুকের ভেতর হিম হয়ে গেল।
কেউ যেন তার নিঃশ্বাস চেপে ধরেছে।
একটাই জিনিস স্পষ্ট-
এই মৃত্যুতে শুধু রহস্য নেই,
পেছনে আছে এমন এক দল, যারা মানুষের মৃত্যুর পরও তাদের কণ্ঠ ব্যবহার করতে পারে।
আরাফাত প্রথমবারের মতো অনুভব করল-
তার ওপর কেউ নজর রাখছে। খুব কাছ থেকে।
তার প্রতিটি নড়াচড়া, প্রতিটি শ্বাস।
এবং রাতের শেষ সেই ফোনকল-
এখন কেবল সাহায্যের চিৎকার নয়,
এটা ছিল একটি বার্তা।
একটি সতর্কবার্তা।
অধ্যায় ২: ❝ ছায়ার শুরু। ❞
আরাফাত ছুটে গেল গাবতলী ক্রাইম সিনে।
সকাল ১০টা। গরমের মধ্যে অদ্ভুত ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছিল।
মাঠের মাঝখানে পুলিশের টেপ টানানো, লোকজন দাঁড়িয়ে আছে,
আর মাঝখানে পড়ে আছে একটি মেয়ের নিথর দেহ-
সাদা কাপড়ে ঢাকা।
বাতাসে পচা গন্ধ, ভয়ের গন্ধ, আর যেন একটা অদৃশ্য চাপ।
কিন্তু আরাফাত লোকজনের ভিড় ঠেলে যেই সামনে এগোল…
সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা একজন পুলিশ অফিসার তার দিকে এমনভাবে তাকাল,
যেন তাকে দেখে অবাক হয়নি-
বরং অপেক্ষা করছিল।
গায়ের রঙ শ্যামলা, চোখ দুইটা অস্বাভাবিক স্থির, ঠাণ্ডা।
নামপ্লেটে লেখা: সাব-ইন্সপেক্টর নাসির উদ্দিন।
নাসির ধীর গলায় বলল-
“আপনার আসার কথা ছিল না, মি. আরাফাত।”
আরাফাত কুঁচকে গেল।
“আপনারা আমাকে চেনেন কিভাবে?”
নাসির মুচকি হাসল।
“অনেক কিছুই জানি। এমনকি গত রাতের ফোনকলটাও।”
আরাফাতের বুক কেঁপে উঠল।
“আপনি কিভাবে জানলেন?”
নাসির আরও কাছে ঝুঁকে বলল-
“এই শহরে কোন শব্দ গোপন থাকে না,
যখন ‘ওরা’ শুনতে চায়।”
আর কিছু বলার আগেই হঠাৎ করে অন্য পুলিশরা ঘাবড়ে গিয়ে মৃতদেহের কভার তুললো।
মেয়েটির মুখ দেখা গেল-
আরাফাতের হাতে থাকা ছবির মেয়েটি!
একটুও ভুল নেই।
কিন্তু তার শরীরের দাগ দেখে আরাফাতের গা শিহরে উঠল।
মেয়েটির কানে, গলায়, হাতে ছিল অদ্ভুত কালো কালো পোড়া দাগ-
যেন কেউ ইলেকট্রিক শক দিয়েছে,
বা কোন অদ্ভুত যন্ত্র পরীক্ষা করেছে।
মেয়েটির চোখ খোলা, তীব্র ভয়ের ছাপ জমে আছে।
নাসির বলল-
“রিপোর্টে বলা হচ্ছে মেয়েটি তিন দিন আগে মারা গেছে।
কিন্তু…”
সে আঙুল তুলে মৃতদেহের দিকে দেখালো-
“দেখুন, আজ ভোরের দিকে রক্ত… জমাট বাঁধা।
এটা তিন দিনের মৃতদেহের মতো না।”
আরাফাত থমকে দাঁড়িয়ে থাকল।
তার গলা শুকিয়ে আসছে।
সে ধীরে বলল-
“মানে… মেয়েটি হয়তো গত রাতে… বেঁচে ছিল?”
নাসির ঠান্ডা গলায় বলল,
“এটা আপনি বললেন, আমি না।”
তারপর পুলিশরা আচমকা সব মিডিয়াকে পেছনে ঠেলে সরিয়ে দিল।
যেন ঘটনা গোপন করা হচ্ছে।
যেন কেউ নেইচ্ছে-প্রমাণ মুছে ফেলার নির্দেশ।
ঠিক তখনই রাস্তার কোণে একটি শব্দ-
ইঞ্জিনের মৃদু গর্জন।
আরাফাত ঘুরে তাকিয়ে দেখল…
একটি কালো SUV
ধীরে ধীরে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কাঁচ পুরো কালো।
ভিতরে দেখা যায় না কিছুই।
কিন্তু গাড়ির ভেতর থেকে কেউ তাকে দেখছে-
একদম নিঃশব্দ, অস্বাভাবিক ঠান্ডা দৃষ্টি।
নাসিরও গাড়িটি দেখে যেন ভিতরে ভিতরে কেঁপে উঠল।
তার মুখের স্বর বদলে গেল।
সে ফিসফিস করে বলল-
“মি. আরাফাত… এখান থেকে চলে যান।
এখনই।”
“কিন্তু কেন?”
নাসির তাকালো সেই SUV-এর দিকে…
তারপর খুব নিচু গলায় বলল-
“ওই গাড়িতে যারা আছে…
তাদের সামনে পড়ে যারা বেঁচে গেছে,
তাদের তালিকা খুব ছোট।”
আরাফাত দাঁড়িয়ে থাকে।
গলা শুকিয়ে গেছে।
SUV-টা ধীরে ধীরে পাশ কাটিয়ে চলে যায়,
এবং যেতে যেতে কাচের ভেতর থেকে খুব ক্ষীণ আলোতে দেখা গেল-
একটি মুখ।
একটা অদ্ভুত পরিচ্ছন্ন, হাসিমাখা মুখ।
যার চোখে মানুষের মত আবেগ নেই…
বরং সম্পূর্ণ যন্ত্রের মত খালি, নিষ্ঠুর।
SUV চলে যায়।
নাসির পিছনে তাকায় না।
শুধু বলে-
“আপনি দৌঁড়ানো শুরু করুন, মি. আরাফাত।
কারণ ‘ওরা’ এখন আপনার কণ্ঠও শুনছে।”
আর ঠিক সেই মুহূর্তে…
আরাফাতের পকেটের ভেতর ফোন ভাইব্রেট করতে শুরু করল।
স্ক্রিনে লেখা-
📞 Unknown Caller – 2:17 AM (Recorded)
গত রাতের কল আবার বাজছে।
কিন্তু সে কল তো ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছিল…
তাহলে কে আবার চালাচ্ছে?
কে আবার বাজাচ্ছে?
আরাফাত বুঝল-
এটা কোনো সাধারণ ফোনকল নয়।
এটা এক ধরনের খেলা।
এবং খেলা এখনো শেষ হয়নি।
বরং শুরু হয়েছে।
অধ্যায় ৩: ❝ দরজার ওপাশে যে দাঁড়িয়ে ছিল। ❞
রাত প্রায় ১১টার দিকে বাসায় ফিরল আরাফাত।
আজকের দিনটা তার পুরো মানসিকতা নেড়ে দিয়েছে।
মেয়েটির মৃতদেহ, সেই অদ্ভুত পোড়া দাগ, নাসিরের সতর্কবার্তা…
আর সেই কালো SUV-র ভিতরের ঠান্ডা চোখ।
যেন কেউ তাকে কাছাকাছি থেকে দেখছে।
শ্বাসের ভেতরেও ছায়া ঢুকে গেছে।
বাড়িতে ঢুকে দরজা বন্ধ করতেই
ঘরটা অস্বাভাবিক নিস্তব্ধ লাগল।
এমন নিস্তব্ধতা যেখানে নিজের হৃদস্পন্দনের শব্দও শোনা যায়।
সে ব্যাকপ্যাক খুলছে-
ঠিক তখনই…
📞 ট্রিং… ট্রিং…
তার ফোন বেজে উঠল।
স্ক্রিনে ভেসে উঠল সেই আতঙ্কের বার্তা-
📞 Unknown Caller – 2:17 AM (Recorded)
রেকর্ডেড কল কিভাবে আবার ফোনে বাজছে?
কেউ কি ফোনে হ্যাক করেছে?
নাকি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে সেই মুহূর্তটা তাকে শুনতে বাধ্য করছে?
আরাফাত কাঁপা হাতে ফোন ধরল।
ফোনের ওপাশে সেই একই মেয়ের ভয়ে থরথর করা কণ্ঠ-
“প্লিজ… ওরা আসছে… আমাকে বাঁচান… প্লিজ… শুনছেন?”
তারপর-
ধপ!
চিৎকার।
হিংস্র শব্দ।
দৌড়ানোর আওয়াজ।
এবং একটি পুরুষ কণ্ঠ-
“Find him.”
কল কেটে গেল।
আরাফাতের পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে এল।
সে বুঝে গেল-
এই কল কোন রেকর্ড নয়।
এটা ‘ওরা’ নিজেই বাজাচ্ছে।
একটি বার্তার মতো।
একটি খেলার ধাপের মতো।
তার বুকের ভিতর প্রচণ্ড চাপ অনুভূত হচ্ছিল।
সে পানি খেতে গিয়েছে…
শুধু তখনই-
কঠিন শব্দে দরজায় ধাক্কা পড়ল।
ধড়াম!
একবার।
ধড়াম!
দুইবার।
আরাফাত স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
এই সময়ে কে আসবে?
পুলিশ?
নাসির?
নাকি… ‘ওরা’?
সে ধীরে ধীরে দরজার কাছে গিয়ে পিপহোল দিয়ে তাকাল।
দেখে তার বুক হিম হয়ে গেল।
দরজার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে-
একজন উঁচু, কালো কোট পরা মানুষ।
মুখ দেখা যায় না, পুরোটা কালো হুডে ঢাকা।
শুধু দুটো চোখ…
অস্বাভাবিক স্থির।
অমানবিক।
যেন আলো শুষে নিচ্ছে।
লোকটা কথা বলে না।
শুধু দাঁড়িয়ে থাকে।
অপেক্ষা করে।
আরাফাত পিছিয়ে গেল।
তার মোবাইল কাঁপছে।
নতুন মেসেজ।
ফোন খুলতেই চোখ বড় হয়ে গেল।
মেসেজে মাত্র তিনটি শব্দ-
“Open the door.”
তার হাত কাঁপছে।
ঘামে পুরো শরীর ভিজে গেছে।
আরো একটি মেসেজ আসে-
“We know you’re alone.”
আরাফাত সাহস নিয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে রাস্তার দিকে তাকাল।
রাস্তার লাইটের নীচে দাঁড়িয়ে আছে-
সেই কালো SUV।
ইঞ্জিন অফ।
কাঁচ পুরো কালো।
কিন্তু এইবার গাড়ির ভেতর থেকে
দুটি ভিন্ন জোড়া চোখ
তার দিকে তাকিয়ে আছে।
তিন…
চার…
না-
ছয়টি চোখ!
যেন তিনজন ভিতরে বসে থেকে তাকে দেখছে।
তাদের চোখে মানুষত্বের কোন চিহ্ন নেই।
শুধু ঠান্ডা নির্দেশ-
“দরজা খোলো।”
দরজায় আবার ধাক্কা-
ধড়াম!
এবার আগের চেয়ে জোরে।
আরাফাত ব্যাকপ্যাক থেকে নিজের ল্যাপটপ বের করে
কল রেকর্ড, ছবি, প্রমাণ সব স্ক্যান করে
একটি মাত্র ইমেইল অ্যাড্রেসে পাঠিয়ে দিল-
“If anything happens to me, publish it.”
ফলোয়ার বেশি এমন এক সাংবাদিক বন্ধুকে পাঠিয়ে দিল।
হঠাৎ-
দরজার নিচের ফাঁক দিয়ে
একটি কাগজ ঢুকে এল।
আরাফাত তুলে দেখে জমে গেল।
কাগজে লেখা-
“২:১৭ AM – শুরু মাত্র।
এখন পালানোর সময়।
আপনার জীবন আমাদের হাতে।”
তার নিচে
মেয়েটির হাসিমাখা ছবি-
আর পাশে লেখা-
“She called you for a reason.”
দরজার ওপাশে লোকটা আর নেই।
রাস্তার SUV-টাও নেই।
পুরো জায়গাটা আগের মতো নিঃশব্দ।
সব কিছু যেন হঠাৎ গায়েব।
কিন্তু বাতাসে ভাসছে ঠান্ডা ছায়া।
আরাফাত ভয় নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখল-
ঘরের ভেতর
তার ঠিক পিছনে
কারো শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ।
সে ধীরে, খুব ধীরে পিছনে তাকালো…
তখন-
ঘর অন্ধকার হয়ে গেল।
অধ্যায় ৪: ❝ যখন আলো জ্বলে উঠল। ❞
ঘরের সব আলো একসাথে নিভে যাওয়ার পর
পুরো ঘরটা কবরের মতো অন্ধকারে ঢেকে গেল।
আরাফাত স্থির হয়ে দাঁড়িয়েছিল-
শ্বাস নিতে পারছিল না।
কারণ তার ঠিক পেছনে, হাতের দূরত্বে,
কেউ একজন গভীর, ভারী শ্বাস নিচ্ছে-
“হুউউউ… হাআআ…”
এই শ্বাস মানুষের মতো নয়,
যেন ভেতরে বরফের পাহাড় গলছে-
ঠান্ডা, গভীর, ভৌতিক।
আরাফাত ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করল।
তার শরীর কাঁপছে।
গলা শুকিয়ে গেছে।
এক সেকেন্ডে হাজারটা চিন্তা মাথায়।
ঠিক তখনই-
ক্লিক!
আলো হঠাৎ জ্বলে উঠল।
আরাফাত চোখ কুঁচকে সামনে তাকাল-
এবং দেখে তার পায়ের উপর রক্তের একটা দাগ!
ড্রপ… ড্রপ… করে পড়ে যাচ্ছে।
সে মাথা তুলে তাকাতেই বুকের ভেতর যেন সব হাওয়া বের হয়ে গেল।
তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে-
একজন লম্বা, অদ্ভুতভাবে শুষ্ক মানুষ।
মুখের অর্ধেক হুডে ঢাকা।
বাকি অর্ধেক…
জৈব নয়।
যেন ত্বকের নিচে
মেশিনের কাঠামো।
এক চোখ পুরো কালো,
অন্য চোখ লাল আলোতে জ্বলছে।
লোকটা ঠান্ডা গলায় বলল-
“আপনি ফোনকলটা পেয়েছেন।”
আরাফাত পিছিয়ে গেল।
“কে… কে আপনি!?”
লোকটা হাসল।
সেই হাসি মানুষের মতো নয়-
টেনে আনা, যেন রেকর্ড প্লে হচ্ছে।
সে ধীরে ধীরে সামনে এলো।
তার হাতের শিরায় ধাতব তার,
যেন কোন যান্ত্রিক পরিবর্তন করা হয়েছে।
“আপনি সত্যের খুব কাছে চলে এসেছেন, মি. আরাফাত।”
এ কথা বলেই লোকটা তার ব্যাগের ভেতর ঢুকে
একটি ছোট, ভাঙা ভয়েস রেকর্ডার বের করে ধরল।
“এটাই সেই ডিভাইস যেটা ব্যবহার করে ওর কণ্ঠ বজায় রাখা হয়েছিল।”
আরাফাতের চোখ বড় হয়ে গেল।
“মেয়েটা… সে কি বেঁচে ছিল!?”
ছায়া-মানুষটি মাথা দোলাল।
“হ্যাঁ।
ওর কণ্ঠ আমরা কয়েক ঘন্টা আগেও ব্যবহার করেছি।”
আরাফাত বাকরুদ্ধ।
মেরুদণ্ড পর্যন্ত ঠান্ডা স্রোত বইল।
ছায়া-মানুষটি এবার খুব ধীরে বলল-
“সে তোমাকে ফোন করার কারণ ছিল।”
“কি কারণ!?”
আরাফাত চিৎকার করে উঠল।
লোকটা তাকালো সোজা আরাফাতের চোখে-
এবং বলল এক শীতল সত্য-
“কারণ তুমি-ই আগের বিরোধী রিপোর্টে তার নাম প্রকাশ করেছিলে।”
আরাফাত জমে গেল।
তার পা কাঁপছে।
মাথায় ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
সে তো জানতই না… কখনো ছবিতেও মেয়েটাকে চেনেনি-
তাহলে কি কোনও ভুল রিপোর্টে
অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে
মেয়েটার পরিবারকে, জীবনকে
ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছিল?
ছায়া-মানুষটি এবার কাছে এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বলল-
“ওরা তাকে নিয়েছিল তোমার কারণে…
এবং এবার তোমাকেও নেবে।”
এ কথা বলার সাথে সাথে-
ধাম!
দরজা ভেঙে
আরও দু’জন কালো ফিগার ঘরে ঢুকে পড়ল।
সবাই মুখহীন, চোখে অদ্ভুত শূন্যতা।
আরাফাত দৌড়ে জানালার দিকে গেল-
কিন্তু এক ফিগার শূন্য গলায় বলল-
“Run… We like it when they run…”
হঠাৎ ঘরের আলোর তীব্র ঝলকানি।
বিদ্যুৎ আবার চলে আসে।
আর আলো জ্বলার সাথে কি দেখা গেল?
ঘরটা ফাঁকা।
কেউ নেই।
সেই মানুষগুলো যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।
কিন্তু…
মেঝেতে পড়ে আছে-
একটি ছেঁড়া কাগজ।
আর তাতে লেখা-
“২:১৭ AM – পরের ধাপ:
মেয়েটির সত্য জানো।
তুমি সময় হারাচ্ছো।”
আর নিচে লাল কালি দিয়ে লেখা-
“She trusted you.”
আরাফাত মেঝেতে বসে পড়ে।
মাথা ঘুরছে।
হৃদপিণ্ড দ্রুত চলছে।
হঠাৎ মোবাইল আবার কাঁপল।
নতুন ভয়েস মেসেজ-
মেয়েটির কণ্ঠ।
“Last clue… খুঁজে নাও…
আমার নাম… সাইরা…”
তারপর ভয়ঙ্কর নীরবতা।
আরাফাত নামটা প্রথমবার শুনল।
সাইরা।
এই নামই তার পুরো জীবন ওলটপালট করে দেবে।
অধ্যায় ৫: ❝ সাইরার সত্য। ❞
রাত তখন ২:৪০।
ঘরের বাতাস ভারী, যেন অক্সিজেনেও ভয় মিশে আছে।
ফোনের স্পিকারে সাইরার শেষ কাঁপা কণ্ঠের প্রতিধ্বনি-
“…আমার নাম… সাইরা…”
এই নাম যেন পুরো ঘরটাকে ধাক্কা দিল।
আরাফাতের মাথায় ঝড় ওঠে।
সে তো এই নাম কখনো শুনেইনি।
কিন্তু মেয়েটা তাকে কেনই বা বিশ্বাস করলো?
আরাফাত ডেস্কে ফিরে বসল।
কম্পিউটার অন করল।
সাইরা নামটি সার্চ করতেই-
ফলাফলে যা আসল, তা দেখে তার বুক থেমে গেল।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ইন্টার্ন-
সাইরা রহমান।
এক বছর আগের খবর।
ট্রেনিং চলাকালীন গায়েব হয়ে গিয়েছিল।
পরিবার অভিযোগ করেছিল-
“সরকারি একটি গোপন বিভাগ তাকে তুলে নিয়ে গেছে।”
আর একটা লাইন স্পষ্ট করে লেখা-
“তিনি শিশু পাচার, মানব অর্গান ট্রেড, এবং প্রশাসনের দুর্নীতির রিপোর্ট একাই তৈরি করছিলেন।”
এরপর আর কোন আপডেট নেই।
নিউজ সব মুছে ফেলা হয়েছে।
ফেসবুক প্রোফাইল অদৃশ্য।
তার অস্তিত্ব যেন বাতাসে মিলিয়ে গেছে।
আরাফাত ফিসফিস করে বলল-
“তাহলে সাইরা… তুমি কি ওই রিপোর্টের জন্যই মারা গেলে?”
ঠিক তখনই-
ল্যাপটপের স্ক্রিন অদ্ভুতভাবে ঝলসে উঠল।
তারপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে গেল একটি ভিডিও ফাইল।
ফাইলটির নাম-
“2:17_AM_Last_Message.mp4”
আরাফাত স্থির হয়ে ভিডিওতে ক্লিক করল।
স্ক্রিনে এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখা গেল-
অন্ধকার ঘর।
মাঝখানে সাইরাকে বেঁধে রাখা।
তার মুখে আঘাতের চিহ্ন, চোখে ভয়ের ছাপ।
কিন্তু তার কণ্ঠ-
তবুও শক্ত, দৃঢ়।
সে বলছে-
“আরাফাত ভাই… আপনি আমাকে চিনবেন না।
কিন্তু আপনি সত্যের জন্য লড়েন।
আমার রিপোর্ট আপনার কাছে আছে…
যেন না-থাকলেও আপনি সেটা অফিসে পৌঁছে দিয়েছিলেন।”
আরাফাত চমকে উঠল।
কখন!?
কীভাবে!?
ভিডিওতে সাইরা কাঁপতে কাঁপতে বলছে-
“ওরা শুধু আমাকে না…
আরও ১৭ জনকে তুলে নিয়েছে।
আমরা এমন কিছু দেখেছি যেটা তারা চায় না বিশ্ব জানুক…”
ভিডিও কাঁপতে কাঁপতে চলছিল।
পেছন থেকে কারো ভারী পায়ের শব্দ আসছিল।
সাইরা তাড়াতাড়ি ক্যামেরার দিকে ঝুঁকে বলল-
“ওরা সরকারি নয়…
সে রকম ভাববেন না।
এরা ‘ব্ল্যাক হেক্স’-
একটা বেসরকারি গোপন সংগঠন…
যারা মানুষের ভয়েস, স্মৃতি-
অবধি কপি করতে পারে।”
আরাফাতের হৃদপিণ্ড থেমে যাওয়ার মতো।
এই নাম-
ব্ল্যাক হেক্স
সে আগে শুনেছে।
পুলিশ কাস্টডি থেকে পলাতক অপরাধী,
মডেল নিখোঁজ,
সাংবাদিক আততায়ীর শিকার-
সব ঘটনার পেছনে থাকা অদৃশ্য দল।
কিন্তু কেউ কখনো তাদের মুখ দেখেনি।
এখন দেখছে আরাফাত।
ভিডিওতে সাইরার চোখ ভিজে যাচ্ছে।
সে ধীরে বলছে-
“আরাফাত ভাই…
আপনার রিপোর্টটা যেদিন ‘নামহীন সূত্র’ হিসাবে প্রকাশ হলো-
ওরা ভেবেছিল আপনি জানেন।
যদিও আপনি জানতেন না…”
আরাফাত যেন মগজের ভেতরে চাবুকের আঘাত অনুভব করল।
“মানে…! ওরা ভাবছে আমি ব্ল্যাক হেক্স-এর বিরুদ্ধে তথ্য প্রকাশ করেছি!?”
ভিডিওতে হঠাৎ করেই জোরে শব্দ হলো।
দরজা ভেঙে কেউ ঢুকল।
সাইরা আতঙ্কে পেছনে তাকাল।
তারপর-
ভিডিও হঠাৎ কালো হয়ে গেল।
শেষ সেকেন্ডে একটি মাত্র দৃশ্য দেখা গেল-
একটি কালো হাত
সাইরার মুখ জাপটে ধরছে।
তারপর কণ্ঠ নিস্তব্ধ।
ভিডিও শেষ।
স্ক্রিনে নতুন বার্তা ভেসে উঠল-
“Phase 2 Activated”
আরাফাতের শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল।
এটা কোন হ্যাকার নয়।
এটা ব্ল্যাক হেক্স।
এরা তার ল্যাপটপের ভিতরও ঢুকে গেছে।
হঠাৎ বাইরে সাইরেনের শব্দ।
পুলিশের।
এত রাতে!
কে ডাকল!
কেন!?
জানালার দিকে দৌড়ে গিয়ে তাকাতেই-
তার চোখ অবিশ্বাসে বড় হয়ে গেল।
রাস্তার নিচে
দাঁড়িয়ে আছে নাসির।
পুলিশের ইউনিফর্মে।
কিন্তু তার পাশে-
তিনটি ব্ল্যাক SUV।
সবগুলো গাড়ির কাচ কালো-
আগের মতোই।
নাসির তাকিয়ে বলল-
“Mr. Arafat…
You have something we need.”
এদিকে ছাদে,
দেয়ালের পাশে,
বিল্ডিংয়ের অন্ধকারের মধ্যে-
আরও ফিগার দাঁড়িয়ে আছে।
তারা নড়ছে না।
শুধু তাকিয়ে আছে।
তাদের সবাইয়ের চোখ লাল।
আরাফাত জিভ শুকিয়ে যেতে যেতে বুঝল-
এই শহরে তার আর কোথাও নিরাপত্তা নেই।
কেউ নেই পাশে।
কেউ নেই রক্ষা করার মতো।
কিন্তু…
হঠাৎই
ফোনে আরেকটি নাম ভেসে উঠল-
📞 Saira – Last Safe Contact
সাইরা কি মৃত্যুর আগেই একটা ব্যাকআপ রেখে গেছে?
নাকি…
এবং এই কল কি সত্যিই তার?
নাকি আবার ব্ল্যাক হেক্স-এর ফাঁদ?
আরাফাত ফোন তুলবে-
নাকি পালাবে-
নাকি মোকাবিলা করবে?
ফোন ক্রমশ বেজেই চলেছে…
কাঁপছে…
টেনশন বাড়ছে…
২:১৭ AM পর্যন্ত আর ১৮ মিনিট।
সেই সময়েই পরের ধাপ শুরু হবে।
অধ্যায় ৬: ❝ ব্ল্যাক হেক্সের তাড়া। ❞
ঢাকার রাত ভীষণ অন্ধকার।
রাস্তা ফাঁকা, শুধু রাস্তায় কুয়াশার মতো আলো।
আরাফাত ছাদ থেকে নিচ তাকিয়ে আছে।
পাশে তার ব্যাকপ্যাক, ল্যাপটপ, ফোন-
সবকিছু তার জীবনের একমাত্র হাতিয়ার।
পেছনে দাঁড়িয়ে আছে নাসির।
কিন্তু আজ নাসিরের চোখে আর সেই সাব-ইন্সপেক্টর ভঙ্গি নেই।
এবার চোখে কঠিন, অদ্ভুত ঠান্ডা।
যেন… সে অন্তর্দৃষ্টি ছাড়া কিছু ভাবছে না।
নাসির বলল-
“দৌড়ো, আরাফাত।
ব্ল্যাক হেক্সের গাড়ি আসছে।
এরা এখনই ধরবে।
যদি তোমার কাছে সাইরার রিপোর্ট থাকে,
তাহলে তুমি লক্ষ্য।”
আরাফাত মনে মনে বলল-
“ঠিক আছে… পালাবো।
কিন্তু পালানোর আগে, জানবো কে এই ব্ল্যাক হেক্স।”
হঠাৎ আকাশে হঠাৎ অদ্ভুত আলোর ঝলক।
ড্রোন।
উড়ছে।
উপর থেকে লাইভ ফিড করছে।
আরাফাত বুঝল-এরা শুধু বাসায় নয়, পুরো শহার উপর নজর রাখছে।
নিচে রাস্তার মোড়ে দাঁড়ানো কালো SUV-গুলো।
তাদের সংখ্যা তিনটি।
এরা চারপাশে ঘুরে ঘুরে ঘরের ভেতর চোখ রাখছে।
নাসির ধীর গলায় বলল-
“আপনি আমাকে বিশ্বাস করুন, মি. আরাফাত।
আমি আপনার পাশে আছি।
কিন্তু সতর্ক থাকুন, একজনও ভুল করলে প্রাণ যায়।”
আরাফাতের মন ঠিক হলো।
সে ব্যাকপ্যাক থেকে সাইরার USB বের করল।
সেটিতে শুধু রিপোর্ট নেই।
একটি ছোট ফাইল আছে-“Phase2_Key.txt”
এটি ব্ল্যাক হেক্সের নেটওয়ার্কের প্রবেশপথ।
যদি সে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে,
তাহলে ব্ল্যাক হেক্সকে চাপে ফেলা সম্ভব।
হঠাৎ নিচ থেকে শোরগোল।
SUV-এর এক কাচ খসে গেল।
অজানা কেউ গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নামল।
কালো হুড, মুখ অদৃশ্য।
চালাকভাবে ছাদে চলে আসছে।
নাসির বলল-
“এরা ছায়া।
তাদের কোন নাম নেই।
তাদের মুখ দেখার আগেই মৃত্যু আসে।”
আরাফাত হঠাৎ USB-তে কিছু কোড রান করল।
ল্যাপটপের স্ক্রিনে হঠাৎ সব SUV-এর অবস্থান দেখা গেল।
এরা রিয়েল-টাইমে ট্র্যাক করা হচ্ছে।
তারা এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গুলশান পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে।
ঠিক তখনই ছাদে ধাক্কা।
ছায়া-মানুষ আঘাত করে।
আরাফাতের হাত থেকে ল্যাপটপ ছিটকে পড়ল।
USB-র ফাইল ঝলসে গেল।
হঠাৎ সব গাড়ি এক সঙ্গে থেমে গেল।
ড্রোনের ফিডে দেখা গেল-
SUV-এর ভেতর বসা লোকেরা স্থির।
একটা শক্তিশালী ইলেকট্রনিক হ্যাক।
USB-এর কোড কাজ করছে।
নাসির চেঁচালো-
“এটাই সুযোগ! দৌড়াও আরাফাত!”
আরাফাত ছাদ থেকে লাফ দিল।
নিচে কাঁঠাল বাগানের পথে গিয়ে SUV-গুলোকে এড়িয়ে দৌড় শুরু করল।
পিছন থেকে গাড়ির হর্ন, লেজার লাইট, এবং ভাঙাচোরা ধাতব ছোঁড়া আসছে।
নাসির সাইড থেকে বলল-
“ল্যাপটপটা ধরে রেখো!
সাইরার তথ্য ছাড়া তুমি বেঁচে থাকতে পারবে না!”
আরাফাত ড্রোনের ক্যামেরা ব্যবহার করে পথ পরিবর্তন করল।
ছোট রাস্তা, গলি, অব্যবহৃত বিল্ডিং-
SUV-রা তাকে অনুসরণ করছে।
হঠাৎ USB-তে ল্যাপটপ থেকে সংকেত বের হলো।
“Phase2 – Shutdown Initiated”
SUV-এর ইঞ্জিন থেমে গেল।
ছায়া-মানুষদের চোখে চমক।
তারা বুঝল-এরা হারাচ্ছে।
নাসির হঠাৎ বলল-
“তুমি বুঝলে কি করছ?
এই কোড একবার চালালে তারা আর কখনো তোমার পিছনে আসতে পারবে না।
কিন্তু এটি শেষ ঝুঁকি!”
আরাফাত গভীর নিশ্বাস নিয়ে হ্যাঁ বলল।
USB-এর বাটনে চাপ দিল।
সব গাড়ির লাইট এক মুহূর্তে নিভে গেল।
ড্রোনও ক্র্যাশ।
শহর অন্ধকার।
আরাফাত ও নাসির একে অপরের দিকে তাকাল।
কেউ কিছু বলল না।
শুধু জানল-
ব্ল্যাক হেক্সের ছায়া অন্তত এক রাতের জন্য থমকে গেছে।
কিন্তু…
দূরে কোনো স্থানে,
অন্ধকারে,
একটি কণ্ঠ ফিসফিস করে বলল-
“Phase 3… শুরু হলো।”
অধ্যায় ৭: ❝ Phase 3 – শেষ খেলা। ❞
ঢাকার আকাশ কালো মেঘে ঢাকা।
শহরের আলো খুব দূরে।
আরাফাত ও নাসির এক অন্ধকার রাস্তায় দৌড়াচ্ছে।
USB-এর কোড কাজ করেছে, SUV-গুলো এখন থেমে আছে, কিন্তু তারা জানে-ব্ল্যাক হেক্স থেমে থাকে না।
নাসির বলল-
“Phase 3… সব ঠিক করবে না।
এবার প্রধানের সঙ্গে মুখোমুখি হতে হবে।”
আরাফাত হঠাৎ থেমে গেল।
“প্রধান? মানে, কেউ আছে যিনি পুরো ব্ল্যাক হেক্সকে নিয়ন্ত্রণ করেন?”
নাসির মাথা নেড়ে বলল-
“হ্যাঁ। আর তার সঙ্গে লড়াই হবে।
এই লড়াই ছাড়া কেউ বাঁচতে পারবে না।”
দূরে, একটি পরিত্যক্ত কারখানা।
সেখানে এক অদ্ভুত আলো জ্বলে আছে।
গেট খুলতেই দেখা গেল-
ভেতরে, শতাধিক কালো কোট পরা মানুষ দাঁড়িয়ে।
সবাই স্থির, কেউ শব্দ করছে না।
এবং গ্যালারির শেষ প্রান্তে-
একটি চেয়ার, তার মধ্যে বসা আছে এক ছায়া চরিত্র।
সবার চোখ তার দিকে।
চেয়ার থেকে উঠে এল সেই মানুষ।
মুখ দেখা গেল।
নাকে-মুখে কোন মানুষের অনুভূতি নেই।
চোখ লাল, ঠোঁট অস্বাভাবিক সরু।
হাত গ্লাভস-এ ঢাকা।
এটাই ব্ল্যাক হেক্সের প্রধান।
প্রধান ধীর গলায় বলল-
“আরাফাত হোসেন।
তুমি খুব সাহসী।
তুমি আমার খেলা ভাঙছ।
কিন্তু জানো কি…
খেলা শেষ না হলে কেউ বাঁচবে না।”
আরাফাত গলা ধরে বলল-
“সাইরা কোথায়? তুমি কি তাকে করেছ?”
প্রধানের ঠান্ডা হাসি।
“সাইরা? সে বেঁচে আছে।
কিন্তু তার জীবন এখন তোমার হাতে।
USB-তে রাখা তথ্য ছাড়া, তুমি আর তাকে বাঁচাতে পারবে না।”
আরাফাত বুঝল-
এটাই শেষ ধাপ।
সবকিছু এখন তার উপর।
নাসির ফিসফিস করল-
“তুমি চাইলে প্রধানের কাছ থেকে সব ফাইল হ্যাক করতে পারো।
কিন্তু একটি ভুল হলে, সাইরা… শেষ।”
আরাফাত গভীর নিশ্বাস নিয়ে ল্যাপটপ খুলল।
USB-এর তথ্য ব্যবহার করে ব্ল্যাক হেক্সের সমস্ত সিস্টেমে প্রবেশ করল।
ড্রোন, SUV, নিরাপত্তা-সব কিছু তার হাতে।
প্রধান, হঠাৎ নিজের সিস্টেমে প্রবেশ হওয়া দেখল।
চোখ লাল হয়ে গেল।
সে দ্রুত ছুটল।
আরাফাত ধাপে ধাপে ল্যাপটপের কোড রান করল।
হঠাৎ, প্রধানের পাশে থাকা মানুষগুলো পড়ে গেল।
ল্যাপটপ থেকে একটি অদ্ভুত তরঙ্গ বের হলো।
সব চেহারা স্থির হয়ে গেল।
প্রধান চিৎকার করল-
“না! এটা সম্ভব নয়!”
আরাফাত USB-এর শেষ বাটনে চাপ দিল।
সব গ্যালারি কাঁপতে লাগল।
প্রধান, ছায়ামানুষরা, SUV-সব স্থির।
হঠাৎ দরজা খোলা হলো।
সাইরা, হাত বাঁধা হলেও, ধীরে ধীরে বের হলো।
তার চোখ আর ভয় দেখাচ্ছে না-
বরং ধীর সাহস, আস্থা, শক্তি।
সাইরা ফিসফিস করল-
“ধন্যবাদ, আরাফাত।
আপনি বাঁচালেন আমাকে…
এবার এই তথ্য প্রকাশ হবে।”
প্রধান চিৎকার করে লাফ দিল।
কিন্তু USB-এর ডাটা সব ব্ল্যাক হেক্সের সিস্টেমে ভাইরাস তৈরি করল।
তাদের শক্তি ভেঙে গেছে।
অন্ধকারের ছায়া ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল।
আরাফাত ও নাসির একে অপরের দিকে তাকাল।
শহর এখনও অন্ধকার,
কিন্তু জানে-সত্য জয় করেছে।
সাইরা ধীরে বলল-
“২:১৭ AM… সেই মৃত্যুর সেকেন্ডটি ছিল আমাদের প্রথম লড়াই।
এখন নতুন সূচনা।”
আরাফাত হেসে বলল-
“এবার আমরা বাঁচব।
এবার সত্য প্রকাশ পাবে।”
শহর ভোরের আলো পায়।
ঢাকা ধীরে ধীরে জেগে ওঠে।
কিন্তু কেউ জানে না-সন্ধ্যার আগে কী ভয়ংকর খেলা শুরু হয়েছিল।
শুধু তারা জানে-২:১৭ AM… মৃত্যুর সেকেন্ডটি কখনো ভুলানো যাবে না।
Md Fakhrul Islam Sagor




















