পরীর স্বপ্ন

আফছানা খানম অথৈ

পরী সবেমাত্র তৃতীয় শ্রেনিতে পড়ে।বাবা টেক্সির ড্রাইভার।কিন্তু পরীর স্বপ্ন সে জজ হবে,ন্যায় বিচার করবে।তাই বাবা ড্রাইভার হওয়া সত্বেও একমাত্র মেয়েকে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করেছেন।সে মন দিয়ে লেখাপড়া করছে।অভাব অনটনের মধ্য দিয়েও বাবা মা তার লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন।
আজ স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সময়মতো অনুষ্ঠান শুরু হলো।পরী একটা গান পরিবেশন করল।সে ফাস্ট হলো।স্কুল থেকে তাকে একটা পুরুস্কার দেয়া হলো।আর তখনি তার উপর চোখ পড়ল,স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সাদেক সাহেবের।
এতটুকু একটা শিশু যে কি না,এখনো বাবা মায়ের হাতে খাবার খায়,বাবা মায়ের কোলে ঘুমায়।

সেই পরীর উপর কু’নজর পড়ল স্কুল প্রতিষ্ঠাতা সাদেক সাহেবের।স্কুল ছুটির পর পরী দুই সহপাঠিনীসহ বাড়ির দিকে আসছে।তখনি সাদেক সাহেব তাকে গাড়ি করে নিয়ে যায়।এরপর ধর্ষণ করে রাস্তায় নির্জন স্থানে ফেলে রেখে আসে।
পথচারীরা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করাই।পরীর বাবা মায়ের কাছে খবর আসলে,তারা হাসপাতালে ছুটে যায়।ডাক্তার রুম থেকে বের হলে পরীর বাবা মা জিজ্ঞেস করে,
ডাক্তার সাহেব আমার মেয়ের কি হয়েছে?
আপনার মেয়ে রেফ্ হয়েছে।অবস্থা খুব সিরিয়াস।রক্ত লাগবে।তাড়াতাড়ি রক্ত যোগাড় করুণ।তা না হলে বাঁচানো সম্ভব হবে না।
ডাক্তার সাহেব,আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।আমার এতটুকুন মেয়ে রেফ্ হতে যাবে কেন?
ভুল নয়, যা সত্যিই তাই বলেছি।
ডাক্তারের কথা শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মা বাবা দুজনে।
এরপর ছুটে যান তার দুপাঠিনীর কাছে। তাদেরকে পরীর কথা জিজ্ঞেস করতেই পরীকে সাদেক সাহেব গাড়ি করে নিয়ে যাওয়ার কথাটা বলে দিলো।এই কথাটা শোনার পর পরীর বাবা বুঝতে পেরেছে তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে কে?
এরপর ছুটে গেলেন স্কুলে।প্রধান শিক্ষকের কাছে সাদেক সাহেবের বিরুদ্ধে কমপ্লেইন করলেন।তিনি সাদেক সাহেবের কথা শোনে থবনে হারিয়ে গেলেন।তারা ছাপছাপ জানিয়ে দিলেন,সাদেক সাহেবের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে তাদের কারো চাকরী থাকবে না।

এই ব্যাপারে তারা কিছুই করতে পারবে না।তারপর ছুটে গেলেন থানায়।থানায় যখন সাদেক সাহেবের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে চাইলেন,পুলিশ সুপার বলল,
সাদেক সাহেব অনেক ক্ষমতাধর ব্যক্তি। আমরা উনার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নিতে পারব না।তাছাড়া প্রমাণ লাগবে।
আমার মেয়ে অসুস্থ হাসপাতালে।এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কি হতে পারে?
না মানে তবুও আর ভালো প্রমাণ লাগবে।
তার মানে আপনারা কিছুই করতে পারবেন না?
না মানে ইয়ে…।
পরীর বাবা বুঝতে পেরেছে,এরা তার মামলা নিবে না।বুকভরা কষ্ট নিয়ে সে ফিরে এসেছে।এদিকে মেয়ে মৃত্যু সাথে পাঞ্জা লড়ছে।টাকার অভাবে তার চিকিৎসা হচ্ছে না।
পরীর স্বপ্ন আস্তে আস্তে নিভে যাচ্ছে।বাবা মা দুজনে পাশে বসে কাঁদছে। এমন সময় নার্স এসে দেখে পরীর কোনো সাড়াশব্দ নেই।তার মানে সে মারা গেছে।তখনি নার্স তার মুখ থেকে অক্সিজেনের পাইপ খুলে নিলেন।মা বাবা ছুটে এসে কেঁদে কেঁদে বলেন,

পরীর কি হয়েছে?কথা বলছে না কেন?
নার্স কোনো উত্তর না দিয়ে পরীকে সাদা কাপড় দিয়ে ডেকে দিলেন।এবার বাবা মা বুঝতে পারল তার মেয়ে মারা গেছে।কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল দুজন।পরীর বাবার ভিতরে ক্রোধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল।এই সমাজের বিত্তশালী মানুষের প্রতি তার মনে জন্ম হলো প্রচণ্ড ঘৃণা।”পরীর স্বপ্ন” ধুলিসাৎ হলো এই সমাজের মানুষরুপী এক জানোয়ারের কারণে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top