শতবর্ষের আলোকে কিশোর কবি সুকান্ত

বিধান চন্দ্র সান্যাল

সাহিত্যকর্মে সুকান্তের মূল দিকগুলো:

সাম্যবাদ ও বিপ্লবী চেতনা:
সুকান্তর সাহিত্য, বিশেষ করে তাঁর কবিতা, সাম্যবাদী আদর্শ ও বিপ্লবী চেতনার প্রতিফলন ঘটায়। তিনি সমাজের গরিব, দুঃখী ও বঞ্চিত মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন এবং তাদের অধিকারের জন্য সোচ্চার ছিলেন। তাঁর কবিতায় শোষিত মানুষের দুঃখ-দুর্দশা এবং সমাজের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ প্রকাশিত হয়েছে।


শ্রেণী-সচেতনতা:
সুকান্তর সাহিত্য শ্রেণী-সচেতনতায় পূর্ণ। তিনি সমাজের উচ্চ ও নিম্নবিত্তের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্যকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। তাঁর “ছাড়পত্র” কাব্যগ্রন্থে এই শ্রেণী-সচেতনতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়।


ভাষা ও শৈলী:
সুকান্তর ভাষা সহজ ও প্রাঞ্জল, যা সাধারণ মানুষের কাছে সহজে বোধগম্য ছিল। তাঁর কবিতার ভাষা ছিল বিপ্লবী, যা সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি ও শোষণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করত।


রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গীকার:
সুকান্তর সাহিত্য রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গীকারে পরিপূর্ণ ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন, সাহিত্য সমাজের দর্পণ এবং সমাজের পরিবর্তনের জন্য সাহিত্যিকদেরও সোচ্চার হওয়া উচিত।


স্বল্প সময়ের সাহিত্যিক জীবন:
মাত্র ২১ বছর বয়সে সুকান্তের প্রয়াণ হয়, যা তাঁর সাহিত্যিক জীবনকে সংক্ষিপ্ত করে তোলে। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি বাংলা সাহিত্যকে যা দিয়েছেন, তা আজও বিশেষভাবে সমাদৃত।


সুকান্ত ভট্টাচার্য বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমী প্রতিভা। তাঁর সাহিত্যকর্ম একদিকে যেমন বিপ্লবী, তেমনি অন্যদিকে মানবিক আবেদনে পরিপূর্ণ। তিনি সমাজের বঞ্চিত মানুষের কথা বলেছেন, শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়েছেন এবং মানবতাবাদী আদর্শ প্রচার করেছেন। তাঁর সাহিত্যকর্ম আজও বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির অমূল্য সম্পদ।

Bidhan Chandra Sanyal

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top