নতুন বিশ্বের ভোরবেলায়—যখন বসতি, বিশ্বাস, যুদ্ধ, উন্নতি ও অনিশ্চয়তা একসাথে ছায়া-আলো খেলত—সেই অস্থির সময়ের মধ্যে ইনক্রিজ ম্যাথার (Increase Mather, ১৬৩৯–১৭২৩) ছিলেন এক অদ্ভুত মিশ্র চরিত্র। তিনি ধর্মতত্ত্ববিদ, উপনিবেশিক নেতা, ঐতিহাসিক, রাজনীতি-সচেতন পুরোহিত এবং সমাজ-সংস্কারক—সব মিলিয়ে এক জটিল, বহুস্তর ব্যক্তিত্ব। তাঁর জীবন যেন আমেরিকার প্রথম বৌদ্ধিক মহাকাব্যের একটি অধ্যায়, যেখানে ঈশ্বরবিশ্বাস, উপনিবেশিক রাজনীতি, সেলেম ডাইনিবিদ্যা-আতঙ্ক, ধর্মীয় শুদ্ধতার দাবি, এবং নতুন সমাজ গড়ার স্বপ্ন একই সূত্রে গাঁথা।
১. জন্ম, পরিবার এবং পুরিটান ঐতিহ্যের ভিত্তি
ইনক্রিজ ম্যাথারের জন্ম ১৬৩৯ সালের ২১ জুন, ডরচেস্টার, ম্যাসাচুসেটস বেতে। তিনি ছিলেন আদর্শ পুরিটান পরিবারে জন্ম নেওয়া সন্তান—এক এমন পরিবার যেখানে ধর্ম ছিল দৈনন্দিন জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর পিতা রিচার্ড ম্যাথার, নিউ ইংল্যান্ডের প্রথম দিকের প্রভাবশালী পুরোহিতদের একজন; আর ভাই স্যামুয়েল ম্যাথার ও পরবর্তীতে তাঁর নিজের পুত্র কটন ম্যাথার যুক্ত হলেন এই বিশাল পুরিটান বংশগৌরবে।
ছোটবেলা থেকেই ইনক্রিজ ম্যাথার ধর্মতত্ত্বের আলোয় বড় হয়েছেন। তাঁর ঘরে ধর্মগ্রন্থ ও নৈতিক শিক্ষার আলোচনা ছিল প্রতিদিনের বাতাসের মতো স্বাভাবিক। শিশুকালেই তিনি শাস্ত্র, ল্যাটিন, ধর্মতত্ত্ব এবং বুদ্ধিবৃত্তিক শৃঙ্খলা রপ্ত করেন। বলা যায়, মানসিক জগতে যে কঠোরতা ও শৃঙ্খলার প্রয়োজন পুরিটান ধর্মে—তা তাঁর মজ্জায় প্রবেশ করেছিল।
২. শিক্ষা: হার্ভার্ড থেকে আয়ারল্যান্ড—অর্ধেক নতুন বিশ্ব, অর্ধেক পুরোনো
ইনক্রিজ ম্যাথার মাত্র বারো বছর বয়সে হার্ভার্ড কলেজে ভর্তি হন—যেখানে তাঁর বৌদ্ধিক পায়ের তলার জমি দৃঢ় হয়। ১৬৫৬ সালে স্নাতক হয়ে তিনি ইংল্যান্ডের তৎকালীন রাজনৈতিক-ধর্মীয় রূপান্তরের চিত্র নিজের চোখে দেখার উদ্দেশ্যে বিদেশযাত্রা করেন।
ইংল্যান্ডে তিনি লন্ডন ও ডাবলিনে সময় কাটান, আয়ারল্যান্ডের ট্রিনিটি কলেজে শিক্ষাগ্রহণ করেন, এবং ১৬৫৮ সালে সেখান থেকে M.A. ডিগ্রি অর্জন করেন। পুরোনো বিশ্বের ধর্ম সংঘাত, পুরিটানদের উত্থান-পতন, ক্যাভেলিয়ার-পিউরিটান রাজনীতির ছায়া—এসব অভিজ্ঞতা তাঁর মানসিক গঠনে শক্ত প্রভাব ফেলেছিল।
ইনক্রিজ ম্যাথারের ভাবনার জগৎ তাই ছিল দুই বিশ্বের সমন্বয়ে গড়া—ইউরোপের ধর্ম ও রাজনীতির অভিজ্ঞতা এবং আমেরিকার উপনিবেশিক বাস্তবতা।
৩. পুরোহিত ও নেতা হিসেবে নিউ ইংল্যান্ডে প্রত্যাবর্তন
১৬৬১ সালে তিনি ম্যাসাচুসেটসে ফিরে আসেন এবং দ্রুতই ধর্মীয় নেতৃত্বে নিজের অবস্থান শক্ত করেন। তিনি বোস্টনের নর্থ চার্চ–এর পুরোহিত হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং তাঁর বক্তৃতা, যুক্তিবাদ ও ধর্মীয় লেখনী তাঁকে সমাজের অন্যতম দৃঢ় কণ্ঠে পরিণত করে।
তাঁর ভাষণ ছিল তীক্ষ্ণ, গদ্য ছিল প্রখর, এবং বিশ্বাস ছিল অবিচল। বলা হয়, তাঁর উপদেশমালা ছিল অগ্নিশিখার মতো—যা একদিকে ভীতিপ্রদ, অন্যদিকে অনুসারীদের কাছে আলোকময়।
৪. সাহিত্য ও লেখনী: কঠোর ধর্মচিন্তার জগৎ
ইনক্রিজ ম্যাথার ছিলেন উর্বর লেখক। তিনি প্রায় ১৫০টিরও বেশি গ্রন্থ ও পুস্তিকা রচনা করেন—যার মধ্যে ছিল ধর্মতত্ত্ব, ইতিহাস, চিকিৎসা, সমাজ সংস্কার, প্রার্থনাপুস্তক, রাজনৈতিক ঘটনা ও দৈব বিচার সংক্রান্ত আলোচনা।
তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাগুলোর মধ্যে আছে:
A Brief History of the War with the Indians
Cases of Conscience
Illustrious Providences
Discourse Concerning Earthquakes
The Mystery of Christ
An Essay for the Recording of Illustrious Providences
তাঁর লেখায় পুরিটান আদর্শের অদম্য দৃঢ়তা ছিল; একইসাথে যুক্তির শৃঙ্খল দিয়ে যুক্ত হন তিনি অতিপ্রাকৃত ঘটনার বিশ্লেষণে। ম্যাথারের লেখা কখনও কখনও মেঘের গভীরে বজ্রধ্বনির মতো, আবার কখনও দাঁড়িপাল্লার মাপে মাপা যুক্তির নির্মাণশৈলী।
৫. হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি: জ্ঞানের কঠোর প্রশাসক
১৬৮৫ সালে তিনি হার্ভার্ড কলেজের সপ্তম সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন। তাঁর সভাপতিত্ব ছিল কখনও আলো, কখনও চাপে ঢাকা; ছাত্র ও শিক্ষকদের ওপর তিনি কঠোর নিয়ম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল—হার্ভার্ডকে পুরিটান ধর্মতত্ত্বের দুর্গে পরিণত করা, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পুরোহিতরা শুদ্ধ ও নৈতিকভাবে প্রশিক্ষিত হন।
তবে তাঁর প্রশাসনিক মনোভাব মাঝে মাঝে বিতর্কের জন্ম দেয়। বহু আধুনিক পণ্ডিত মনে করেন, তাঁর নেতৃত্ব ছিল কঠোর, প্রায় একনায়কসুলভ। তাঁর কঠিন নিয়ম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করেছে বলেও মত আছে।
৬. উপনিবেশিক রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা
ইনক্রিজ ম্যাথার শুধু ধর্মীয় নেতা নন—তিনি উপনিবেশিক রাজনীতিরও বড় মুখ।
১৬৮৮–১৬৯২ সময়কাল
ম্যাসাচুসেটসের পুরনো সনদ (Charter) ইংল্যান্ড বাতিল করে দিলে উপনিবেশবাসীরা বিশৃঙ্খলায় পড়েন। তখন ইনক্রিজ ম্যাথার ইংল্যান্ডের রাজার কাছে গিয়ে নতুন সনদ আদায়ের আন্দোলন পরিচালনা করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ১৬৯১ সালে নতুন সনদ প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং ম্যাসাচুসেটস একটি নতুন রাজনৈতিক কাঠামো পায়।
তবে নতুন সনদে কিছু শর্ত পুরিটানদের পছন্দ হয়নি, এবং অনেকে তাঁকে অভিযুক্ত করেন যে তিনি “নিউ ইংল্যান্ডের স্বাধীনতার বড় অংশ ত্যাগ করেছেন”—যদিও তার প্রমাণ ইতিহাসে বিতর্কিত।
৭. সেলেম ডাইনিবিদ্যা ঘটনা: দ্বিধা আর সংশয়ের রাজ্যে
ইনক্রিজ ম্যাথারকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত অধ্যায় হলো ১৬৯২ সালের সেলেম ডাইনিবিদ্যা বিচারের সময় তাঁর ভূমিকা।
তাঁর পুত্র কটন ম্যাথার এবং অন্য অনেক পুরোহিত “ডাইনিবিদ্যা”–র বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা সমর্থন করলেও, ইনক্রিজ ম্যাথারের দৃষ্টিভঙ্গি তুলনামূলকভাবে সতর্ক ছিল।
তাঁর অবস্থান ছিল দ্বিমুখী—
তিনি জাদুবিদ্যার অস্তিত্বে বিশ্বাস করতেন, এবং মনে করতেন সমাজে অশুভ শক্তির কার্যকলাপ বাস্তব।
কিন্তু তিনি “স্পেকট্রাল এভিডেন্স”–এর ব্যবহার—অর্থাৎ স্বপ্নে বা দর্শনে দেখা প্রেতাত্মার সাক্ষ্য—গ্রহণযোগ্য নয় বলে দৃঢ়ভাবে বলেন। এটি আদালতে ব্যবহৃত হচ্ছিল, এবং অনেক নিরপরাধ মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এই ভিত্তিতে।
ইনক্রিজ ম্যাথারের বিখ্যাত উক্তি ছিল—
“ভুল করে একজন ডাইনি বেঁচে গেলে যে ক্ষতি; কিন্তু ভুল করে একজন নিরপরাধকে হত্যা করলে তার ক্ষতি আরও ভয়াবহ।”
এই সতর্ক অবস্থান পরবর্তীতে সেলেম আদালতকে প্রমাণভিত্তিক বিচার ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনায় বাধ্য করে। তাঁর লেখনী Cases of Conscience এই পর্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তবে সমালোচকরা বলেন, তিনি যথাসময়ে যথেষ্ট জোরালো অবস্থান নেননি—ফলে মৃত্যুদণ্ড বন্ধ হতে দেরি হয়। এখনও ইতিহাসের কোর্টরুমে তাঁর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা জারি।
৮. ধর্মীয় দর্শন: ঈশ্বরের করুণা, মানবের দায়িত্ব, এবং নিউ ইংল্যান্ডের নীতিশৃঙ্খলা
ইনক্রিজ ম্যাথার ছিলেন ক্যালভিনিস্ট পুরিটান ধর্মতত্ত্বের অনুগত ধারক। তাঁর দর্শনের মূল সুর ছিল—
ঈশ্বর সর্বশক্তিমান
মানুষ মূলত পাপী, কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহে মুক্তি পেতে পারে
সমাজকে ঈশ্বর-নির্ধারিত নৈতিকতায় পরিচালিত হতে হবে
অশুভ শক্তির বাস্তব অস্তিত্ব আছে
তাঁর ধর্মতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দৈবহস্তক্ষেপ ছিল বাস্তব, এবং তিনি এটিকে ইতিহাসের ঘটনাবলির ব্যাখ্যা হিসেবে ব্যবহার করতেন—যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগব্যাধি, যুদ্ধ সবই তাঁর কাছে ঈশ্বরের সংকেত বা সতর্কবার্তা।
পুরিটান ধর্মতত্ত্বের যে কঠোর শৃঙ্খলা নিউ ইংল্যান্ডের সমাজগঠনে প্রভাব ফেলেছিল—তার সবচেয়ে শক্ত প্রতিনিধি ছিলেন ইনক্রিজ ম্যাথার।
৯. সমাজ ও সংস্কার: নৈতিকতার অগ্নিপথে হেঁটে যাওয়া এক উপনিবেশ
ইনক্রিজ ম্যাথার বিশ্বাস করতেন, নিউ ইংল্যান্ডকে একটি “ঈশ্বরনির্দেশিত জাতি” হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সেই লক্ষ্যে তিনি সমাজের নানা দিক নিয়ে বক্তব্য রাখেন—
শিক্ষায় নৈতিকতা
চার্চ-কেন্দ্রিক সমাজব্যবস্থা
শৃঙ্খলাবদ্ধ পরিবার কাঠামো
মদ্যপান, ব্যভিচার, অপব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব
ধর্মীয় উদারতার বিরুদ্ধে অবস্থান
তাঁর সামাজিক নির্দেশাবলি কখনও আধুনিক দৃষ্টিতে কঠোর মনে হতে পারে, কিন্তু তাঁর সময়ে এগুলো ছিল “স্বর্গীয় বিচারের হাত থেকে রক্ষার উপায়”।
১০. শেষ জীবন: পুরোনো আদর্শ ও নতুন বিশ্বের সংঘাত
১৭শ শতকের শেষভাগে যখন নিউ ইংল্যান্ড বদলাতে শুরু করল—বাণিজ্য বাড়ল, ধর্মীয় শৃঙ্খলা শিথিল হল, রাজনীতি বদলাল—ইনক্রিজ ম্যাথার ধীরে ধীরে পুরোনো বিশ্বের একাকী প্রদীপে পরিণত হন।
১৭০১ সালে তিনি হার্ভার্ড সভাপতির পদ হারান। এর পরে তাঁর প্রভাব কমে গেলেও তিনি লেখালিখি চালিয়ে যান, ধর্মব্যাখ্যায় যুক্ত থাকেন এবং সমাজকে ফেরাতে চান তাঁর বিশ্বাসের পথে।
১৭২৩ সালের ২৩ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে বোস্টনের কপস্ হিল সেমেট্রিতে সমাহিত করা হয়—যেখানে তাঁর পুত্র কটন ম্যাথারও শায়িত।
১১. উত্তরাধিকার: তাঁর আলো, তাঁর ছায়া
ইনক্রিজ ম্যাথারের উত্তরাধিকার একধরনের দ্বিমুখী স্মৃতি।
যা তাঁকে মহান করে তোলে—
ধর্মীয় নেতৃত্বে দৃঢ়তা
হার্ভার্ড ও নিউ ইংল্যান্ডের জ্ঞানচর্চায় অবদান
লেখনীর বিপুল ভাণ্ডার
সেলেম ঘটনায় যুক্তির কিছুটা আশ্রয়
উপনিবেশিক অধিকার রক্ষায় রাজনৈতিক উদ্যোগ
যে কারণে সমালোচনা হয়—
অতিরিক্ত কঠোর ধর্মনীতির পক্ষপাত
আধুনিক চিন্তার প্রতি অনমনীয়তা
সেলেম ঘটনার সময় ধীর ভূমিকা
উপনিবেশের রাজনৈতিক সনদ পরিবর্তনে বিতর্কিত ভূমিকা
সমাজে কঠোর নৈতিক শাসন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা
ইতিহাস তাই তাঁকে দেখে এক অগ্নিপিণ্ড হিসেবে—যিনি নিজের আলোয় পথ দেখিয়েছেন, আবার নিজের আকাঙ্ক্ষার চাপে অনেককে পুড়িয়ে ফেলেছেন।
নিউ ইংল্যান্ডের ইতিহাসে এক শক্তিমান ছায়া
ইনক্রিজ ম্যাথারের নাম উচ্চারণ করলে আমেরিকার উপনিবেশিক ইতিহাসের কর্কশ ঘণ্টাধ্বনি কানে ভেসে আসে। তাঁর জীবন ছিল বিশ্বাসের ইস্পাত দিয়ে নির্মিত; তাঁর চিন্তা ছিল বিচারের কঠিন মঞ্চ; তাঁর লেখনী ছিল নিউ ইংল্যান্ডের প্রথম যুগের মানসিক রূপকার।
তাঁর ভেতর ছিল একদিকে ঈশ্বরভীরু মানুষের কঠোর সতর্কতা, অন্যদিকে যুক্তিবাদী চিন্তার ক্ষীণ অঙ্কুর। নিউ ইংল্যান্ডের ধর্ম, রাজনীতি, সমাজ, শিক্ষা—সব ক্ষেত্রেই তাঁর গভীর ছাপ আছে।
তাঁকে ভালোবাসা যায় তাঁর দৃঢ়তার জন্য, আবার ভয় পাওয়া যায় তাঁর কঠোরতার জন্য। তিনি ইতিহাসের সেই চরিত্র—যাঁর আলো ও ছায়া মিলে এক অদ্ভুত আকর্ষণীয় মানবচিত্র তৈরি করে।
এক কথায়, ইনক্রিজ ম্যাথার ছিলেন নতুন পৃথিবীর ধর্মীয় চেতনাকে রূপদানকারী এক শক্তিমান স্থপতি, যিনি সময়ের পরিখায় দাঁড়িয়ে তাঁর সমাজকে পরিচালিত করতে চেয়েছিলেন ঈশ্বরের বিচারে আলোকিত পথের দিকে।


















