খন্দকার মেহেদী হাসান সুজন
সময়কে আমরা ক্যালেন্ডার, ঘড়ি কিংবা দিন-রাত্রির সংখ্যায় মেপে দেখি,
কিন্তু আত্মা সময়কে মাপে না ঘন্টায়—মাপে অনুভবে।
প্রত্যেক মানুষের আত্মায় সময়ের এক নিজস্ব প্রতিবিম্ব জন্ম নেয়।
এই প্রতিবিম্ব কখনো শান্ত জলের মতো স্থির, কখনো ঝড়ের মতো অস্থির।
মানুষ যত বড় হয়, ততই সে নিজের এই আয়নার গভীরে দেখতে শেখে—
যেখানে মুখ দেখা যায় না, দেখা যায় অস্তিত্বের বিবর্তন।
প্রত্যেক আত্মা সময়ের এক যাত্রী।
আমরা যখন বলি “সময় চলে গেছে”, আসলে চলে যায় আমাদের একাংশ,
একটি চিন্তা, একটি সম্পর্ক, একটি সম্ভাবনা।
তবু সময়ের নদী থেমে থাকে না—
সে আমাদের নতুন করে গড়ার আয়োজন করে।
এই আয়নায় আত্মা যখন নিজের পুরোনো ক্ষতগুলো দেখে,
তখন সে বুঝতে শেখে ক্ষমার সৌন্দর্য, ভুলের প্রয়োজনীয়তা,
এবং পরিবর্তনের অনিবার্যতা।
সময় কখনো শত্রু নয়—সে এক নির্লিপ্ত শিক্ষক।
যে আত্মা তার আয়নায় তাকাতে ভয় পায়,
সে নিজের পরিণতি থেকেও পালায়।
আর যে সাহস করে সেখানে চোখ রাখে,
সে আবিষ্কার করে নিজের গভীরে লুকানো নতুন সময়কে—
যে সময় তারই অন্তর থেকে উদ্ভূত,
যেখানে অতীত শুধু শিক্ষা, বর্তমান সঞ্চয়, আর ভবিষ্যৎ প্রতিশ্রুতি।
জীবনের সব উত্তর বাইরে পাওয়া যায় না,
কিছু উত্তর কেবল আত্মার আয়নায় দৃশ্যমান হয়।
এই আয়নায় সময় আমাদের প্রশ্ন তোলে:
তুমি কী সত্যিই বেঁচে আছ, নাকি কেবল চলছো?
তুমি কী ভালোবাসছো, নাকি কেবল অভ্যাসে আছো?
এই প্রশ্নগুলোর সামনে মানুষ নিজেকে নগ্নভাবে খুঁজে পায়—
তার অহং ভেঙে পড়ে, ভেসে ওঠে তার মৌলিক সত্তা।
আত্মার আয়নায় সময়ের প্রতিবিম্ব দেখা মানে
নিজের অস্থিরতার সঙ্গে শান্তির সন্ধান করা।
এটি ধ্যানের মতো, কিন্তু কোনো নির্জনে নয়—
জীবনের ভেতরেই ঘটে।
যখন কেউ নিজেকে দেখে সময়ের আয়নায়,
তখন সে শুধু সময়কে নয়,
নিজেকেও চিনে নেয় এক নবতর আলোকরেখায়।




















