Socialist Realism, গোরকির বিপ্লবী লেখা, শলঝেনিত্সিনের Gulag Archipelago—রাষ্ট্র, মানবাধিকার ও প্রতিরোধ
সোভিয়েত সাহিত্য বলতে আমরা সাধারণত দু’ধরনের শক্তিকে পাশাপাশি দেখতে পাই—একদিকে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী উচ্ছ্বাস, রাষ্ট্রচালিত ভাবাদর্শ, শ্রমিক-শ্রেণির নায়কোচিত মহিমা; অপরদিকে মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা, যন্ত্রণা, দমন-নির্যাতন ও সত্য ভাষণের অনিবার্য আকাঙ্ক্ষা। এই দুই শক্তির সংঘর্ষই সোভিয়েত সাহিত্যকে গড়ে তুলেছে একটি জটিল, বহুমাত্রিক, রাজনৈতিকভাবে উত্তাল ভূখণ্ডে। ম্যাক্সিম গোরকি থেকে আলেকজান্দর শলঝেনিত্সিন—এই পথরেখাটি শুধুই দু’জন লেখকের নাম নয়, বরং একটি যুগের বিবর্তন, একটি রাষ্ট্রের নিজেদের গল্প বলার চেষ্টার মধ্যেই সত্যের সঙ্গে আপস ও সত্যের জন্য সংগ্রামের দোলাচল।
প্রথম অধ্যায়: বিপ্লবের উন্মেষ ও সাহিত্যিক ডাকে গোরকি
ম্যাক্সিম গোরকি ছিলেন সোভিয়েত সাহিত্যিক প্রকল্পের এক প্রধান সংগঠক, এক অর্থে ‘রাষ্ট্রস্বীকৃত’ সাহিত্যিক আদর্শের প্রথম স্থপতি। তাঁর জীবন ছিল শ্রমজীবী মানুষের অন্তর্গত বাস্তবতার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। গোরকি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছিলেন—শ্রমিকদের দুঃখ, দারিদ্র্য, শোষণ কেবল ‘রোমান্টিক’ উপন্যাসে বর্ণনা করলেই হবে না; চাই এমন সাহিত্য যা নতুন সমাজের জন্য সংগ্রামরত মানুষের মানসিক শক্তিকে জাগিয়ে তোলে। তাঁর “Mother (মাদার)” উপন্যাস এই দৃষ্টিভঙ্গির সবচেয়ে শক্তিশালী প্রকাশ। এখানে বিপ্লবী তরুণেরা যেমন আছে, তেমনি রয়েছে এক সাধারণ মায়ের ক্রম-জাগরণ, যে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মনে করে—মানুষের মুক্তি সংগ্রাম ছাড়া অসম্ভব।
গোরকির সাহিত্য ‘বিপ্লবী রোমান্টিসিজম’ দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তীকালে তিনি যে ধারণার কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে গেলেন, তা হলো Socialist Realism—যা ১৯৩৪ সালে সোভিয়েত লেখক সংঘের প্রথম কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রীয় সাহিত্যিক নীতিরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়। গোরকিই ছিলেন এই কংগ্রেসের সভাপতি। তাঁর বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন—‘আমাদের সাহিত্য হবে এমন বাস্তবতার বর্ণনা, যা শুধুই আছে তাই নয়, যা থাকা উচিত।’ বাস্তবতা তখন আর স্বাধীন পর্যবেক্ষণ নয়; বাস্তবতা এখন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ‘আদর্শ ভবিষ্যৎ’-এর দিকে নির্দেশ করে এমন সত্য।
দ্বিতীয় অধ্যায়: সমাজতান্ত্রিক বাস্তববাদের শাসন—সৃষ্টি না নির্দেশনা?
সোভিয়েত রাষ্ট্র সাহিত্যকে দেখেছিল এক প্রকার আদর্শ প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে। তাই Socialist Realism ছিল একদিকে শিল্প নীতি, অন্যদিকে এক ধরনের রাজনৈতিক শাসন। এর মূল তত্ত্ব ছিল—
শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম ও শ্রেণীজয়ের অনিবার্যতা
কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে আদর্শ সমাজ গঠনের দৃঢ় বিশ্বাস
ব্যক্তির চেয়ে সমষ্টির অধিক গুরুত্ব
বীরত্ব, কর্মচাঞ্চল্য ও আশাবাদের বিশেষ নির্মাণ
‘সত্য’ বলতে বোঝানো হতো রাষ্ট্রের অনুমোদিত সত্য
এ কারণে অনেক লেখকের ক্ষেত্রে সৃষ্টিশীল স্বাধীনতা সংকুচিত হতে থাকে। সাহিত্য হয়ে ওঠে ‘সমাজতান্ত্রিক উৎপাদন’-এরই আরেক রূপ। সফল কৃষি সমবায়, আদর্শ শ্রমিক, যান্ত্রিকীকরণের জয়গাথা–এইসব নতুন নায়কোচিত ধারাপাত বইতে থাকে উপন্যাস, কবিতা, নাটকে। ১৯৩০-এর দশক থেকে ১৯৫০-এর দশক পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত সাহিত্য এমন এক কাঠামোয় আবদ্ধ ছিল যেখানে ব্যর্থতা, যন্ত্রণার সত্য, রাষ্ট্রের ভুল বা চাপা রাখা ঘটনা প্রায় অনুপস্থিত।
এই সময়ে অসংখ্য প্রতিভাবান লেখক ‘বিপথগামী’, ‘রাষ্ট্রবিরোধী’, ‘ফরমালিস্ট’ হিসেবে চিহ্নিত হন। অনেকেই নির্বাসিত, বন্দি অথবা নিষিদ্ধ হন। শিল্প সৃজনের এই একরৈখিকতা সমাজে এক ধরনের ‘নান্দনিক সন্ত্রাস’ জন্ম দেয়; সাহিত্য আর সে অর্থে সত্যের অনুসন্ধান নয়, বরং সত্যকে পুনর্লিখনের দায়ভার নেয়।
তৃতীয় অধ্যায়: গোরকির দ্বৈততা—রাষ্ট্রের কণ্ঠস্বর ও সাহিত্যিক মনন
গোরকির প্রতি শ্রদ্ধা যেমন প্রবল, তেমনি আছে প্রচুর সমালোচনা। তাঁর সাহিত্যিক অবদান অনস্বীকার্য, কিন্তু স্টালিন যুগে তাঁর ভূমিকা অনেক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। একদিকে তিনি ছিলেন শ্রমজীবী মানুষের দুর্দশার প্রত্যক্ষ ভাষ্যকার, অন্যদিকে তিনি হয়ে ওঠেন রাষ্ট্রস্বীকৃত সাহিত্য আন্দোলনের প্রধান মুখ। এই দ্বৈত ভূমিকা গোরকির অস্তিত্বকে রাজনৈতিকভাবে জড়িয়ে ফেলে—তিনি কি সত্যিই রাষ্ট্রের আদর্শবাদে বিশ্বাসী ছিলেন, নাকি ছিল বাধ্যতা, নাকি একটি জটিল সমঝোতা?
অনেক গবেষক মনে করেন, গোরকি ব্যক্তিগতভাবে অনেক রাষ্ট্রীয় অত্যাচারের বিরুদ্ধে ছিলেন; কিন্তু প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করতে পারেননি। তাঁর মৃত্যুতেও রহস্য রয়েছে—তিনি কি স্বাভাবিক অসুখে মারা গিয়েছিলেন নাকি সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ তাকে ‘ব্যবহার’ শেষে সরিয়ে দিয়েছিল? যদিও প্রমাণ অনির্দিষ্ট, বিতর্ক আজও চলমান।
গোরকি যেন সোভিয়েত সাহিত্যের ‘উত্থানের প্রতীক’—একই সঙ্গে তার ‘বন্দিত্বের’ও প্রতীক। তাঁর হাতে গড়া সাহিত্যিক নীতিই পরে হয়ে ওঠে রাষ্ট্রিক নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কঠোর হাতিয়ার।
চতুর্থ অধ্যায়: সত্যের ফিরে আসা—শলঝেনিত্সিনের আবির্ভাব
যেখানে গোরকির সাহিত্য ছিল রাষ্ট্রীয় স্বপ্ন নির্মাণের অবলম্বন, শলঝেনিত্সিনের সাহিত্য ছিল রাষ্ট্রীয় মিথ ভেঙে সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই। শলঝেনিত্সিন নিজে বন্দিত্ব, শ্রমশিবির এবং গোপন পুলিশি নজরদারির ভয়াবহতার মধ্য দিয়ে গেছেন। তাঁর নিজের জীবনই হয়ে ওঠে সোভিয়েত রাষ্ট্রের অন্ধকার গহ্বরের প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য।
১৯৬২ সালে “One Day in the Life of Ivan Denisovich” প্রকাশ—খ্রুশ্চেভ যুগের সীমিত উন্মুক্ততার ফসল—সোভিয়েত সমাজে এক বিস্ফোরণ এনে দেয়। এই উপন্যাসে শলঝেনিত্সিন দেখান কীভাবে এক রাজনৈতিক বন্দির একটি দিন কেটে যায়—কোনো নায়কোচিত মহিমা ছাড়াই, কোনো আদর্শিক উত্তোলন ছাড়াই, শুধু কঠোর শ্রম, শীত, ক্ষুধা ও টিকে থাকার সংগ্রাম। এটি ছিল প্রথমবার রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নির্যাতনের স্বীকৃতি।
কিন্তু শলঝেনিত্সিনের সবচেয়ে শক্তিশালী কাজ ছিল “The Gulag Archipelago”—এক বহুখণ্ডের অনুসন্ধানমূলক, স্মৃতিকথামূলক মহাকাব্য, যা সোভিয়েত শ্রমশিবির ব্যবস্থার সমস্ত নিষ্ঠুরতা, মিথ্যাচার, বিচারহীনতা এবং দমনকে উন্মোচন করে। এটি শুধু সাহিত্য নয়; এটি ছিল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র, ইতিহাসের সামনে রাখা সাক্ষ্যবহুল নথি।
Gulag Archipelago প্রকাশিত হওয়ার পর শলঝেনিত্সিন হয়ে ওঠেন রাষ্ট্রের শত্রু। ১৯৭৪ সালে তাঁকে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু তার বই সারা বিশ্বে সোভিয়েত রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রকৃত চেহারা প্রকাশ করে দেয়; বিশেষজ্ঞরা বলেন—এই বইই শীতল যুদ্ধ-মুহূর্তে পশ্চিমা বিশ্বকে সোভিয়েত ব্যবস্থার ভেতরের অমানবিকতা বুঝতে সহায়তা করে।
পঞ্চম অধ্যায়: রাষ্ট্র, সাহিত্য ও সত্যের সংঘর্ষ
গোরকি ও শলঝেনিত্সিনের দ্বৈত উপস্থিতি দেখায়—সাহিত্য কখনো রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করে, আবার কখনো রাষ্ট্রের ভিত্তিই নড়িয়ে দিতে পারে। সোভিয়েত সাহিত্য ছিল এক লড়াইয়ের ইতিহাস—
আদর্শবাদ বনাম অভিজ্ঞতা
রাষ্ট্রের প্রচার বনাম মানুষের সত্য
সমষ্টির বয়ান বনাম ব্যক্তির যন্ত্রণার বয়ান
নিরাপদ নীরবতা বনাম ঝুঁকিপূর্ণ সত্য ভাষণ
সোভিয়েত রাষ্ট্র চেয়েছিল সাহিত্য এমন হবে যা শ্রেণীসংগ্রাম, শিল্পোন্নতি ও সমাজতান্ত্রিক আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করে। কিন্তু একই রাষ্ট্রের ভিতর থেকেই জন্ম নেয় এমন সাহিত্যিক, যাদের লেখনী রাষ্ট্রের মিথ ভেঙে দেয়। গোরকি ছিলেন রাষ্ট্রের নির্মাতা নায়ক, শলঝেনিত্সিন ছিলেন রাষ্ট্রের ভেতরকার অন্ধকারের স্বাক্ষরকারী।
এই সংঘর্ষ আমাদের দেখায়—যে রাষ্ট্র যত বেশি সাহিত্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, সত্য ততই অন্য কোনো শরীরে জন্ম নিয়ে শব্দ খুঁজে পায়।
ষষ্ঠ অধ্যায়: মানবাধিকার ও প্রতিরোধ—শলঝেনিত্সিনের উত্তরাধিকার
শলঝেনিত্সিনের লেখায় মানুষের বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা, সত্যকে প্রতিষ্ঠার সাহস এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যক্তির প্রতিরোধই সবচেয়ে শক্তিশালী। তাঁর কাজ নোবেল সাহিত্য পুরস্কার পায় শুধু সাহিত্যিক মানের জন্য নয়; বরং দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে মানবাধিকার রক্ষার রাজনৈতিক ভূমিকার জন্যও।
Gulag Archipelago আজ শুধু ইতিহাসের নথি নয়; এটি প্রতিটি স্বৈরশাসিত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এক চিরকালীন সতর্কবার্তা। এটি প্রমাণ করে—যে রাষ্ট্র নিজেকে ‘সত্য’ হিসেবে ঘোষণা করে, তার ভেতরেই সবচেয়ে বড় মিথ বাস করে। সাহিত্য সেই মিথ ভাঙার অন্যতম অস্ত্র।
শলঝেনিত্সিন তাঁর সাহিত্যিক মিশন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছিলেন—“একটি শব্দও কখনো কখনো গোটা সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে।” এই বিশ্বাসই তাঁকে রাষ্ট্রের সব নিষেধাজ্ঞা অতিক্রম করতে সাহায্য করেছে।
সপ্তম অধ্যায়: সোভিয়েত সাহিত্য—এক জটিল উত্তরাধিকার
গোরকি থেকে শলঝেনিত্সিন—এই পথরেখা সোভিয়েত সাহিত্যের দ্বন্দ্ব ও সমৃদ্ধিরই চিত্র। কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য উল্লেখযোগ্য—
১. আদর্শবাদ বনাম বাস্তবতার লড়াই
গোরকি রাষ্ট্রনির্মাণের সাহিত্য প্রবর্তন করেছিলেন। শলঝেনিত্সিন রাষ্ট্রের নির্মাণের ভেতরের মানবিক বিপর্যয় দেখিয়েছেন।
২. সাহিত্যিক স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা
Socialist Realism ছিল এক প্রকার আনুষ্ঠানিক মানদণ্ড। শিল্পীকে বলা হয়েছিল—‘যা সত্য, তা নয়; যা হওয়া উচিত, তাই লেখো।’ এটি সাহিত্যকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল, কিন্তু একই সঙ্গে কিছু প্রতিরোধী কণ্ঠও জন্ম দিয়েছিল।
৩. লুকোনো ইতিহাসের উন্মোচন
Gulag Archipelago এমন সব দমন-পীড়নের সত্য উন্মোচন করেছে যেগুলো সোভিয়েত রাষ্ট্র দশকের পর দশক গোপন রেখেছিল।
৪. ব্যক্তি বনাম রাষ্ট্র
গোরকি দেখালেন সমষ্টিগত শক্তির সম্ভাবনা, শলঝেনিত্সিন দেখালেন কীভাবে ব্যক্তি সেই সমষ্টির ভেতর হারিয়ে যায় বা ধ্বংস হয়।
৫. বিশ্ব-রাজনীতিতে সাহিত্য
সোভিয়েত সাহিত্য শীতল যুদ্ধের ভেতরেও এক ধরনের রাজনৈতিক অস্ত্র হয়ে ওঠে—রাষ্ট্রের প্রচার বা রাষ্ট্রবিরোধী সত্য ভাষণ উভয় দিকেই।
অষ্টম অধ্যায়: আমাদের সময়ে সোভিয়েত সাহিত্যের পাঠ
আজকের পৃথিবীতে সোভিয়েত সাহিত্য পড়া মানে শুধু একটি যুগের রাজনৈতিক ইতিহাস বোঝা নয়। বরং দেখা—
রাষ্ট্র কীভাবে শিল্পকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়
সত্য কীভাবে চাপা থাকলেও শব্দ খুঁজে পায়
সাহিত্য কীভাবে মানুষের স্বাধীনতার কণ্ঠস্বর হতে পারে
দমন-নির্যাতনকে নথিবদ্ধ করা কেন জরুরি
ক্ষমতার বিরুদ্ধে লেখকের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ
এ কারণেই গোরকির “মাদার” যেমন সমষ্টিগত সংগ্রামের প্রেরণা, তেমনি শলঝেনিত্সিনের Gulag Archipelago আমাদের শেখায়—লেখা একপ্রকার সাক্ষ্য, যা রাষ্ট্রের যন্ত্রের বিরুদ্ধে মানবিক মর্যাদাকে রক্ষার পথ।
প্রতিরোধ, সত্য ও মানবতার স্থায়িত্ব
সোভিয়েত সাহিত্য এক অদ্ভুত বৈপরীত্যে ভরা—এটি যেমন স্বপ্ন দেখায়, তেমনি দুঃস্বপ্নের ইতিহাসও তুলে ধরে। গোরকি রাষ্ট্রকে সাহিত্য দিয়ে ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন, আর শলঝেনিত্সিন সেই রাষ্ট্রের অন্ধকার ভেদ করে সত্যকে আলোর দিকে তুলে এনেছিলেন।
এই দুই লেখক আমাদের মনে করিয়ে দেন—
সাহিত্য কখনোই কেবল কাহিনি নয়। সাহিত্য কখনো কখনো বিপ্লবের ডাক, কখনো ইতিহাসের নথি, কখনো দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে মানুষের সর্বশেষ প্রতিরোধ।
এটাই সোভিয়েত সাহিত্যের প্রকৃত উত্তরাধিকার—
মানুষের স্বাধীনতা, যন্ত্রণার সত্য, এবং কথার অদম্য শক্তিতে বিশ্বাস।

















