শূন্য সংকেত।

রাত তখন দুইটা।
‎শহরের আকাশ নীরব, বাতাসে অদ্ভুত চাপ।
‎পুরনো প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ঝলমল করছে লাল ডায়নামো ক্লক, টিকটিক করছে যেন সময়কে গণনা করছে।
‎কেবল ক্লক নয়, এটি পুরো এলাকা উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

‎শহর জুড়ে সবাই জানে—আজ রাতটি মায়েস্ট্রোর রাত।
‎প্রতিবার সে কাজের আগে রেখে যায় সাহিত্যিক ধাঁধা, সংকেত, এবং পরীক্ষা।

‎অধ্যাপক রুদ্র রায়, এক সময়ের কিংবদন্তি ক্রিপ্টোগ্রাফার, আজ আবার অন্ধকার থেকে টেনে আনা হয়েছে।
‎পুলিশ প্রধান বললেন—
‎“রুদ্র, সময় হাতে মাত্র দুই ঘণ্টা। মায়েস্ট্রোর শেষ সংকেতটি এখানে।”

‎ট্যাবলেটে জ্বলজ্বল করছে তিনটি শব্দ এবং একটি উক্তি।
‎রুদ্র চোখ আটকে তাকালো।


‎—

‎⭐ প্রথম সংকেত।

‎রুদ্র নিজের কণ্ঠে ফিসফিস করল—

‎ “আমি বিদ্রোহী… আমি সেই দিন শান্ত হব, যেদিন অগ্নি নিভে যাবে, যেদিন অন্যায়ের নিঃশ্বাস আর ভয়ে ঘেরা হবে না।”



‎প্রিয়াঙ্কা কিছু বুঝে উঠতে পারল না।
‎“স্যার, এর মানে কী?”

‎রুদ্র উত্তর দিল,

‎ “বিদ্রোহ শুধু শব্দ নয়, আগুন। যে জায়গায় প্রথম বিদ্রোহ জ্বলে, সেখানেই তার অনুপ্রেরণা থাকে। আজ সেই আগুনকে আমরা শান্ত করব।”



‎প্রিয়াঙ্কা দ্রুত লাইব্রেরির ডাটাবেস খুঁটিয়ে দেখল—
‎একটি পুরনো লাইব্রেরি, যেখানে বিগত শতকের এক সাহিত্যিক তার প্রথম কবিতা লিখেছিল।
‎“সেখানেই যেতে হবে!” রুদ্র বলল।

‎রুদ্র নিজের ভেতরের কণ্ঠ শুনল—

‎ “যে মুহূর্তে মানুষ নিজের ভেতরের আগুনকে শান্ত করে, তখনই সত্যিকারের বিজয় আসে।”
‎“অন্ধকার যত ঘন, সাহস তত উজ্জ্বল হয়।”




‎—

‎⭐ দ্বিতীয় সংকেত।

‎লাইব্রেরির ভেতরে রুদ্র খুঁজে পেল দ্বিতীয় সংকেত।
‎একটি বাক্সে লেখা—

‎ “অসম্ভব শব্দ কেবল তাদের অভিধানে থাকে, যারা নিজের সীমারেখা জানে না। সত্যিকারের কৌশল সবসময় ভিড়ের বিপরীতে যায়।”



‎রুদ্র প্রিয়াঙ্কার দিকে তাকিয়ে বলল,

‎ “সত্যিকারের বিজয় আসে যখন তুমি প্রত্যাশার বিপরীত কাজ করো। যেখানে সবাই পিছনে দাঁড়ায়, তুমি সামনে যেও।”



‎উচ্চতম স্থানে পৌঁছতে তারা লাইব্রেরির ছাদে ওঠে।
‎একটি ভাঙা দূরবীনের ফোকাসে লক্ষ্য করল—দূরে একটি স্মারক স্তম্ভ।

‎রুদ্র মনেহল—

‎ “সীমারেখা ভাঙার সাহসই মানুষকে ইতিহাসে লিখে।”

‎“যেখানে সবাই চোখ বন্ধ করে, তুমি তাকাও—সেখানেই উত্তর লুকিয়ে থাকে।”



‎⭐ তৃতীয় সংকেত।

‎ড্রোনে পাঠানো চূড়ান্ত সংকেতটি দেখল—

‎ “ভয় যদি মনকে দখল করে, মাথা আর উঠতে পারে না। সাহস হলো হাত, যা মানুষকে নিজের ভিতরের দরজা খুলতে শেখায়। যেখানে দাঁড়ালে মনে হয় আকাশও নিচু হয়ে আসে।”



‎রুদ্র হেসে বলল,

‎ “মুক্তি পাহাড়ের চূড়ায় নয়, মুক্তি আসে নিজের ভিতরের অন্ধকারকে জয় করার ক্ষমতায়। আজ আমাদের কাজ—ভয়কে চুপ করানো।”
‎“মুক্তি শুধুমাত্র পাহাড়ের চূড়ায় নয়, নিজের ভেতরের অন্ধকারকে জয় করলে আসে।”



‎প্রিয়াঙ্কা কেঁপে কেঁপে বলল,
‎“স্যার, সময় নেই! এটি শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্মারক।”

‎রুদ্র চিন্তিতভাবে বলল—

‎ “ভয়কে অতিক্রম না করলে, কখনো তোমার পাখা খুলবে না।”
‎“প্রত্যেকটি সংকেতই ঠিক তখনই বোঝা যায়, যখন তুমি নিজেকে পুরোপুরি বিশ্বাস করো।”




‎—

‎⭐ চূড়ান্ত মুহূর্ত।

‎স্মারকের নিচে পৌঁছে তারা দেখল—লাল ডায়নামো ক্লক, যা বোমা সক্রিয় রাখছে।
‎তিনটি তার ঝুলছে—লাল, হলুদ, নীল।

‎প্রিয়াঙ্কা চিৎকার করে বলল,
‎“সবকিছু সংযুক্ত! কোনটা কাটব, স্যার?”

‎রুদ্র চোখ বন্ধ করে বলল,

‎ “যে মুহূর্তে তুমি নিজের ভেতরের ভয়কে চুপ করাবে, ঠিক তখনই পৃথিবী তোমার দিকে তাকাবে। সাহস এখন সিদ্ধান্ত নেবে।”
‎“ভয় কখনো কাউকে রক্ষা করে না, কিন্তু সময়ের দিকে তাকিয়ে সাহস সবকিছু রক্ষা করে।”
‎“যেখানে সবাই হাল ছেড়ে দেয়, সেখানে তুমি দাঁড়াও—তাহলে বিশ্ব তোমার দিকে তাকাবে।”



‎হলুদ এবং নীল তার প্রথমে কাটল।
‎শেষে লাল তার।
‎ক্লক থেমে গেল।

‎শহরের নীরবতা।
‎এক মিনিট, দুই মিনিট…
‎সব ঠিক আছে।


‎—

‎⭐ পোস্টকার্ডের রহস্য।

‎পরের দিন সকালে রুদ্রের ডেস্কে আসে একটি রহস্যময় পোস্টকার্ড—

‎ “তুমি শুধুমাত্র প্রথম ধাপ পেরেছ। জয় আসে সেখানে, যেখানে মানুষ তার দুর্বলতা জয় করে। আমি ফিরব।”
‎— মায়েস্ট্রো



‎শহরের আলো ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে আসছে। বাতাসে এখন কেবল নীরবতা, কিন্তু রুদ্র জানে—এই নীরবতার আড়ালে একটি নতুন বিপদ পেছনে তাকিয়ে আছে।

‎রুদ্র নিজের কণ্ঠে ফিসফিস করল—

‎ “যেখানে অন্ধকার যত ঘন, সাহস তত উজ্জ্বল হয়… এবং যেখানেই মানুষ ভয়কে চুপ করাতে পারে, সেখানে শুরু হয় সত্যিকারের যুদ্ধ।”



‎তার চোখ ভেসে গেল স্মারকের দিকে, যেখানে বোমা বন্ধ হলেও মনে হলো কেউ এখনও তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করছে।

‎এক মিনিট।
‎দুই মিনিট।
‎একটি দূরবর্তী সাইরেন হালকা আওয়াজে ভাঙল নীরবতা।

‎রুদ্র জানল—আজ রাত শেষ হলেও, মায়েস্ট্রোর খেলা এখনো চলছে।
‎এবার না জড়িয়ে পড়লে, মানুষ কখনো সত্যিকারের সাহসের মুখোমুখি হবে না।

‎রুদ্র মুখে এক ছোট হাসি আঁকলো—

‎ “ভয়কে অতিক্রম করো, অন্ধকারকে চ্যালেঞ্জ দাও… এবং ঠিক তখনই তুমি সেই সংকেত পাবে যা সবকিছু বদলে দেবে।”



‎শেষ লাইন:

‎ “আজ রাত শেষ, কিন্তু সত্যিকারের খেলা এখন শুরু।”

Md Fakhrul Islam Sagor

মোঃ ফখরুল ইসলাম সাগর

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top