মোঃ ফখরুল ইসলাম সাগর
রাত তখন দুইটা।
শহরের আকাশ নীরব, বাতাসে অদ্ভুত চাপ।
পুরনো প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ঝলমল করছে লাল ডায়নামো ক্লক, টিকটিক করছে যেন সময়কে গণনা করছে।
কেবল ক্লক নয়, এটি পুরো এলাকা উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
শহর জুড়ে সবাই জানে—আজ রাতটি মায়েস্ট্রোর রাত।
প্রতিবার সে কাজের আগে রেখে যায় সাহিত্যিক ধাঁধা, সংকেত, এবং পরীক্ষা।
অধ্যাপক রুদ্র রায়, এক সময়ের কিংবদন্তি ক্রিপ্টোগ্রাফার, আজ আবার অন্ধকার থেকে টেনে আনা হয়েছে।
পুলিশ প্রধান বললেন—
“রুদ্র, সময় হাতে মাত্র দুই ঘণ্টা। মায়েস্ট্রোর শেষ সংকেতটি এখানে।”
ট্যাবলেটে জ্বলজ্বল করছে তিনটি শব্দ এবং একটি উক্তি।
রুদ্র চোখ আটকে তাকালো।
—
⭐ প্রথম সংকেত।
রুদ্র নিজের কণ্ঠে ফিসফিস করল—
“আমি বিদ্রোহী… আমি সেই দিন শান্ত হব, যেদিন অগ্নি নিভে যাবে, যেদিন অন্যায়ের নিঃশ্বাস আর ভয়ে ঘেরা হবে না।”
প্রিয়াঙ্কা কিছু বুঝে উঠতে পারল না।
“স্যার, এর মানে কী?”
রুদ্র উত্তর দিল,
“বিদ্রোহ শুধু শব্দ নয়, আগুন। যে জায়গায় প্রথম বিদ্রোহ জ্বলে, সেখানেই তার অনুপ্রেরণা থাকে। আজ সেই আগুনকে আমরা শান্ত করব।”
প্রিয়াঙ্কা দ্রুত লাইব্রেরির ডাটাবেস খুঁটিয়ে দেখল—
একটি পুরনো লাইব্রেরি, যেখানে বিগত শতকের এক সাহিত্যিক তার প্রথম কবিতা লিখেছিল।
“সেখানেই যেতে হবে!” রুদ্র বলল।
রুদ্র নিজের ভেতরের কণ্ঠ শুনল—
“যে মুহূর্তে মানুষ নিজের ভেতরের আগুনকে শান্ত করে, তখনই সত্যিকারের বিজয় আসে।”
“অন্ধকার যত ঘন, সাহস তত উজ্জ্বল হয়।”
—
⭐ দ্বিতীয় সংকেত।
লাইব্রেরির ভেতরে রুদ্র খুঁজে পেল দ্বিতীয় সংকেত।
একটি বাক্সে লেখা—
“অসম্ভব শব্দ কেবল তাদের অভিধানে থাকে, যারা নিজের সীমারেখা জানে না। সত্যিকারের কৌশল সবসময় ভিড়ের বিপরীতে যায়।”
রুদ্র প্রিয়াঙ্কার দিকে তাকিয়ে বলল,
“সত্যিকারের বিজয় আসে যখন তুমি প্রত্যাশার বিপরীত কাজ করো। যেখানে সবাই পিছনে দাঁড়ায়, তুমি সামনে যেও।”
উচ্চতম স্থানে পৌঁছতে তারা লাইব্রেরির ছাদে ওঠে।
একটি ভাঙা দূরবীনের ফোকাসে লক্ষ্য করল—দূরে একটি স্মারক স্তম্ভ।
রুদ্র মনেহল—
“সীমারেখা ভাঙার সাহসই মানুষকে ইতিহাসে লিখে।”
“যেখানে সবাই চোখ বন্ধ করে, তুমি তাকাও—সেখানেই উত্তর লুকিয়ে থাকে।”
⭐ তৃতীয় সংকেত।
ড্রোনে পাঠানো চূড়ান্ত সংকেতটি দেখল—
“ভয় যদি মনকে দখল করে, মাথা আর উঠতে পারে না। সাহস হলো হাত, যা মানুষকে নিজের ভিতরের দরজা খুলতে শেখায়। যেখানে দাঁড়ালে মনে হয় আকাশও নিচু হয়ে আসে।”
রুদ্র হেসে বলল,
“মুক্তি পাহাড়ের চূড়ায় নয়, মুক্তি আসে নিজের ভিতরের অন্ধকারকে জয় করার ক্ষমতায়। আজ আমাদের কাজ—ভয়কে চুপ করানো।”
“মুক্তি শুধুমাত্র পাহাড়ের চূড়ায় নয়, নিজের ভেতরের অন্ধকারকে জয় করলে আসে।”
প্রিয়াঙ্কা কেঁপে কেঁপে বলল,
“স্যার, সময় নেই! এটি শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্মারক।”
রুদ্র চিন্তিতভাবে বলল—
“ভয়কে অতিক্রম না করলে, কখনো তোমার পাখা খুলবে না।”
“প্রত্যেকটি সংকেতই ঠিক তখনই বোঝা যায়, যখন তুমি নিজেকে পুরোপুরি বিশ্বাস করো।”
—
⭐ চূড়ান্ত মুহূর্ত।
স্মারকের নিচে পৌঁছে তারা দেখল—লাল ডায়নামো ক্লক, যা বোমা সক্রিয় রাখছে।
তিনটি তার ঝুলছে—লাল, হলুদ, নীল।
প্রিয়াঙ্কা চিৎকার করে বলল,
“সবকিছু সংযুক্ত! কোনটা কাটব, স্যার?”
রুদ্র চোখ বন্ধ করে বলল,
“যে মুহূর্তে তুমি নিজের ভেতরের ভয়কে চুপ করাবে, ঠিক তখনই পৃথিবী তোমার দিকে তাকাবে। সাহস এখন সিদ্ধান্ত নেবে।”
“ভয় কখনো কাউকে রক্ষা করে না, কিন্তু সময়ের দিকে তাকিয়ে সাহস সবকিছু রক্ষা করে।”
“যেখানে সবাই হাল ছেড়ে দেয়, সেখানে তুমি দাঁড়াও—তাহলে বিশ্ব তোমার দিকে তাকাবে।”
হলুদ এবং নীল তার প্রথমে কাটল।
শেষে লাল তার।
ক্লক থেমে গেল।
শহরের নীরবতা।
এক মিনিট, দুই মিনিট…
সব ঠিক আছে।
—
⭐ পোস্টকার্ডের রহস্য।
পরের দিন সকালে রুদ্রের ডেস্কে আসে একটি রহস্যময় পোস্টকার্ড—
“তুমি শুধুমাত্র প্রথম ধাপ পেরেছ। জয় আসে সেখানে, যেখানে মানুষ তার দুর্বলতা জয় করে। আমি ফিরব।”
— মায়েস্ট্রো
শহরের আলো ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে আসছে। বাতাসে এখন কেবল নীরবতা, কিন্তু রুদ্র জানে—এই নীরবতার আড়ালে একটি নতুন বিপদ পেছনে তাকিয়ে আছে।
রুদ্র নিজের কণ্ঠে ফিসফিস করল—
“যেখানে অন্ধকার যত ঘন, সাহস তত উজ্জ্বল হয়… এবং যেখানেই মানুষ ভয়কে চুপ করাতে পারে, সেখানে শুরু হয় সত্যিকারের যুদ্ধ।”
তার চোখ ভেসে গেল স্মারকের দিকে, যেখানে বোমা বন্ধ হলেও মনে হলো কেউ এখনও তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করছে।
এক মিনিট।
দুই মিনিট।
একটি দূরবর্তী সাইরেন হালকা আওয়াজে ভাঙল নীরবতা।
রুদ্র জানল—আজ রাত শেষ হলেও, মায়েস্ট্রোর খেলা এখনো চলছে।
এবার না জড়িয়ে পড়লে, মানুষ কখনো সত্যিকারের সাহসের মুখোমুখি হবে না।
রুদ্র মুখে এক ছোট হাসি আঁকলো—
“ভয়কে অতিক্রম করো, অন্ধকারকে চ্যালেঞ্জ দাও… এবং ঠিক তখনই তুমি সেই সংকেত পাবে যা সবকিছু বদলে দেবে।”
শেষ লাইন:
“আজ রাত শেষ, কিন্তু সত্যিকারের খেলা এখন শুরু।”
Md Fakhrul Islam Sagor
মোঃ ফখরুল ইসলাম সাগর




















