শিশির কণা

নাদিয়া রিপাত রিতু

মোবাইলে মেসেজের শব্দ  শিশির মোবাইলটা হাতে‌ নিতে মেসেজ “জান আই মিস ইউ”
আই লাভ ইউ জান দিয়ে সেভ করা নাম্বার দেখে  বুকটা কেঁপে উঠলো শিশিরের মোবাইলটা আর কারোর না তার স্বামী রায়ানের অনেক দিন ধরে খেয়াল করছে স্বামী রায়ান অন্য মনস্ক ব্যবসার জন্য  সে অন্য দেশে থাকে ছয় মাস পরপর দেশে আসে আজ মোবাইলে এমন মেসেজ দেখে শিশির অবাক গ্যালারি তে ঢুকবে এমন সময় রায়ান হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিলো
রায়ান :এই কি তুমি আমার মোবাইলে কেন হাত দিয়েছো আমাকে না বলে

শিশির:না বলে নিয়েছি তাই তো জানতে পারলাম আমি ছাড়া তোমার অন্য একটা জান আছে

রায়ান হেসে বললো ,,ওহ আচ্ছা ভালো হলো তুমি সব জেনে গেছো আমার লুকোচুরি করতে আর ভালো লাগছিলো না

শিশির:আমি তোমার বিয়ে করা বউ আর তুমি হয়তো ভুলে গেছো রায়ান আমাদের একটা সন্তান আছে

রায়ান:আয়ান আমার সাথে থাকবে আমার কোনো সমস্যা নেই
বিয়ে করা বউ মানে তুমি তো এখন আমার বউ নেই আমি এত কাঁচা কাজ করিনা রায়ান হেসে একটা কাগজ দিলো শিশিরের হাতে

চোখ দিয়ে দুফোঁটা অশ্রু কাগজে পরলো এটা কি দেখছি আমি রায়ান?? ডিভোর্স পেপার আর আমার সাইন কিভাবে আমি তো সাইন করিনি তাহলে
রায়ান: মনে করে দেখো ছয় মাস আগে একটা পেপার সাইন করেছিলে মনে পরে তোমার সে কথা

শিশির : সেটা আমার বিদেশ যাওয়ার কাগজ ছিলো

রায়ান :জ্বী না মেডাম ঐটাই ডিভোর্স পেপার আমি জানতাম তুমি নিজে থেকে আমাকে ডিভোর্স দেবে না কত রকম চেষ্টা তো করলাম তুমি তো যাচ্ছো না

শিশির:আমার সংসার রেখে আমি কোথায় যাবো এসব কি বলছো তুমি

রায়ান: আইনগত ভাবে তুমি আমার বউ না তাই তোমার তো যেতে হবে

শিশির: একটা মেয়ের জন্য তুমি আমাদের ভালোবাসার সংসার বাচ্চা সব এইভাবে নষ্ট করলে

রায়ান :টাকা থাকলে তোর চেয়ে সুন্দরী আমি পেয়ে যাবো

শিশির: আমার থেকে সুন্দর তো পাবে কিন্তু সত্যিকারের ভালোবাসা আর পাবে না রায়ান চলে গেল বাইরে

মিসেস রেহেনা এই বড়লোকের বেডি রাতের খাবার বানাতে হবে সেই খেয়াল আছে
শিশির কান্না কান্না চোখ নিয়ে মা আসলে বুঝতে পারিনি সময় দেখিনি

রেহেনা :বুঝবে কিভাবে আমার ছেলের মাথা খাওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ আছে তোমার

শিশির: কান্না করতে করতে রান্না গুলো শেষ করে রুমে দরজা লাগিয়ে কান্না করতে লাগলো

রেহেনা: ও বউ আয়ান কান্না করছে ওকে একটু খাইয়ে দাও তো

শিশির: আয়ানকে কোলে নিয়ে খাইয়ে দিচ্ছে আর ভাবছে বাচ্চাটার ভবিষ্যত কি হবে আমি তো আর বেশি দিন নেই এই বাড়িতে

আয়ানকে ঘুম পাড়িয়ে দিলো নিজে কখন ঘুমিয়ে গেছে জানেনা

রায়ান রাতে ১১টার সময় বাড়ি আসলো মা-বাবার সাথে খাওয়া দাওয়া করলো

রুমে ঢুকতে দেখলো আয়ান শিশিরের বুকে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে

রাতে শিশির আর খেলোনা কেউ একটা বার ডাকলো না ওকে খাওয়ার জন্য

রায়ান রাতে লিমার সাথে কথা বলছিলো আজ মেসেজে নয় কলে অনেক বড় বড় সাউন্ডে
লিমা হচ্ছে ‌রায়ানের প্রেমিকা

রায়ান :আর বেশি দিন নেই আমরা একসাথে থাকবো

শিশিরের ঘুম ভেঙ্গে গেল রায়ানের কথা বলার শব্দে
শিশির বললো দয়া করে আস্তে কথা বলুন আয়ান ঘুমাচ্ছে

রায়ান কল রেখে দিলো শিশিরের দিকে তাকিয়ে কিছু বললো না

শিশির আয়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ঘুমিয়ে গেলো

পরের দিন ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিলো
মিসেস রেহেনা ডাক দিলো কিরে ঘুম এখনো ভাঙ্গেনি নাস্তা কে বানাবে

কোনো শব্দ না পেয়ে রুমে এসে দেখলো ব্যাগ পত্র গুছানো

রেগে ঘর মাথায় তুললো আমাকে না জানিয়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে বউমা
চিৎকার শুনে সবাই বের হলো মেজ বউমা আসলো ওর নতুন বিয়ে হয়েছে তিন -চার মাস ও এসব চিৎকার শুনে এক প্রকার ভয় পেলো

শিশির ব্যাগ হাতে নিয়ে বললো মা আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি

রেহেনা মানে কি হচ্ছে এসব কিছুই তো বুঝতে পারছি না.. তুমি এই একবছরে একবার ও বাবার বাড়ি গেলে না হঠাৎ না বলে ব্যাগ গুছিয়ে নিলে যে

শিশির: আপনার ছেলে তো না বলে  অনেক কিছু করে ফেলেছে মা

রেহেনা: রায়ান কি করেছিস ?

রায়ান:মা আমি  আর এই মেয়ের সাথে সংসার করবো না ডিভোর্স পেপার সাইন করে দিয়েছে কোর্ট ডিভোর্স মঞ্জুর করলে আমরা আলাদা হয়ে যাবো

রেহেনা: তুই যখন সিদ্ধান্ত নিয়ে পেলেছিস আমি আর কি বলবোএই মেয়ের সাথে এমনিতে সংসার করা যায় না

শিশির:আমি যাচ্ছি মা আপনাকে মায়ের মতই সেবা করার যথেষ্ট চেষ্টা করেছি এরপর ও যদি কোনো ভুল হয়ে যায় মাফ করে দিবেন পায়ে হাত দিয়ে গেলে

রেহেনা:থাক পায়ে হাত দিতে হবে না তুমি এখন আমার বউমা নেই

শিশির: আচ্ছা মা যাচ্ছি সাদিয়া তোমার সাথে আর বোনের মত থাকা হলোনা পরিবারটা দেখে রেখো

সাদিয়া: ভাবি ভাইয়া এমন কেন করলো আমি জানিনা তবে আমার হাসবেন্ড হলে আমি শিক্ষা দিতাম আপনার মত বউ ভাইয়া পাবেনা এই সংসারটা আপনাকে ছাড়া ভালো থাকবেনা

রেহেনা:মেজ বউমা তুমি এই বাড়িতে আসছো কইদিন এসব বলছো আমি এত বছর ধরে সংসার করছি আমি জানি কে কেমন

শিশির আয়ান কে নিয়ে যাবে এমন সময়
রেহেনা বলে উঠলো আমার নাতিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো
শিশির বললো আমার ছেলেকে আমি এই চিড়িয়াখানায় রেখে যাবো না হতে পারে ও আপানাদের রক্ত ওকে পেতে আমি যে কষ্ট করেছি

রায়ান: থাক মা আমার ছেলেকে আমি নিয়ে আসবো তুমি চিন্তা করো না

শিশির: আয়ান কে নিয়ে বেরিয়ে গেল

রেহেনা: যাও নাস্তা বানিয়ে নাও মেজো বউমা আমি রুবি কে কল দিচ্ছি

সাদিয়া আমি রুমে যাচ্ছি মা আমার শরীর টা খারাপ লাগছে বমি বমি লাগছে নাস্তাটা মনে হয় বানাতে পারবোনা
এই বলে সাদিয়া চলে গেলো

রেহেনা: এখন কি সব কাজ আমাকে করতে হবে নাকি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top