ছোট গল্প – সেই ছোট্ট মেয়েটি

Nadia- Ripat - Ritu

নিলু ছোট্ট বেলা থেকেই আত্মবিশ্বাসী। কোনো কিছুতেই হার মানতে শেখেনি। নিলুরা তিনবোন এক ভাই ; মা-বাবার প্রথম সন্তান নিলু।নিলুদের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার কদলপুর। দেখতে দেখতে চোখের সামনে নিলু বড় হতে থাকে।নিলু যখন এসএসসি পরীক্ষা দেয় তখন তার বাবার ক্যান্সার ধরা পড়ে।নিলু দেখতে বেশ সুন্দরী।তাই গ্রামের কিছু মানুষ পরামর্শ দেয় ।তুমি যখন অসুস্থ বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দাও।নিলুর অল্প বয়সে বিয়ে হয়।বিয়ের ছয় মাস পর তার বাবা পরলোকগমন করেন।একজন মেয়ের অল্প বয়সে মা-বাবাকে হারানোর ব্যথা যারা মা-বাবা হারিয়েছে তারা বুঝবে। কিছু দিন পর নিলু কলেজে ভর্তি হয় ক্লাস করেনা শুধু পরীক্ষা দিতো।বিয়ের একবছরের মাথায় নিলুর কোল আলো করে একটা কন্যা সন্তান জন্ম নেয়।তখন বেশ হাসিখুশিতে নিলুর দিন কাটছে স্বামী সংসার নিয়ে। কিন্তু হঠাৎ একটা দূর্ঘটনায় তার জীবনের সব আলো কেড়ে নিলো। মেয়ের যখন একবছর তখন তার স্বামী মারা যায়। বয়স বা কত১৬-১৭; একদিকে বাবা অন্যদিকে স্বামী হারিয়ে নিলু প্রায় ভেঙ্গে পরে। তার কোলে আছে ছোট্ট শিশু,বাবার মৃত্যুর পর ভাই বোনরা ও ছন্নছাড়া। স্বামীর মৃত্যুর পর মেয়েদের শ্বশুর বাড়িতে গুরুত্ব থাকেনা।তাই নিলু বাবার সংসারে হাল ধরতে চলে আসে।নিলু এইচএসসি পরীক্ষা দেয়।সংসার চালানোর জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিউশন করাতে থাকে।তখন কার যুগে টিউশনিতে বেতন খুব অল্প। যা দিয়ে সংসার আর ভাই বোনদের লেখাপড়া অসম্ভব। যদিও জিনিস পত্রের দাম সীমিত ছিলো। ভালোভাবে সংসার চালানোর জন্য বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকার চাকরিতে যোগ দেয়।স্কুল ক্লাস শেষে সেই আবার টিউশনি করতে থাকে।তখন তার ছোট্ট রাজকন্যাকে রেখে যেত তার মায়ের কাছে। সারাদিন কাজ করে যখন বাড়ি ফিরতো মেয়েকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করতো। এসবের মাঝেও সে পড়ালেখা বন্ধ করেনি। অনার্স হিসাববিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যায়; পাশাপাশি ভাই বোনদের পড়ালেখা করিয়েছে।এসব দেখে সমাজের কিছু মানুষ জন বাঁধা দেয় এই সমাজে বিধবা, ডিভোর্সী মেয়েদেরকে ভালো চোখে দেখে না।তাই নিলু কে নিয়ে অনেক সমালোচনা হতে থাকে।নিলুর মাকে ও অনেক কথা শুনতে হয় । কিন্তু কাজ না করলে এসব মানুষ খাওয়াবে না। আমাদের ইসলাম তো বিধবা মেয়েদের রোজগার করতে বাঁধা দেয়নি। পর্দা মধ্যে থেকে মেয়েরা কাজ করতে পারবে।তবে কেন সমাজের মানুষের এত সমস্যা নিলুকে নিয়ে।নিলুর মনে‌ প্রশ্ন জাগে উত্তর মেলেনা।তার মা তাকে অনেক বিশ্বাস করতো সব সময় পাশে থাকতো।এসব মানুষের কথায় কান না দিয়ে সে নিজের কাজে মনোযোগ দেয়। নিজের ক্যারিয়ার ভালো কিছু করেছে।তার ভাই -বোনদের ক্যারিয়ার নিজের হাতে গড়ে দেয় এখন সবাই স্বাবলম্বী। স্কুলে চাকরি করতে করতে একজন অবিবাহিত ছেলে নিলুকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।নিলু নতুন করে জীবন শুরু করতে চাইনা সবার কথা রাখতে নতুন করে বিয়ে করে ।আগের জীবনটাকে ভুলে নতুন অধ্যায় শুরু করে সেই অন্ধকার অধ্যায় পেরিয়ে।এখন সেই নিজের স্বামী সন্তান নিয়ে অনেক সুখী ।এখন মানুষ গুলো নিলুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ।যারা একসময় নিলুকে নিয়ে খারাপ কথা বলতো।নিলু হয়তো মনের জোর বেশি ছিলো তাই এত কিছুর পরেও সবটা সামলে নিয়েছে।আমি হলে সত্যি পরতাম না।সেই ছোট্ট নিলুটি আর কেউ না আমার শিক্ষিকা নিলীমা হক।আমি ওনার কাছে বেশীদিন পড়ার সুযোগ পাইনি ।আমি গর্বিত ওনার মত সাহসী নারীর ছাত্রী হতে পেরে।ওনার জীবনের অধ্যায়টা শুনে মনে হয় কারো মৃত্যুতে কারো জীবন থেমে থাকে না। মনোবল থাকলে পাথরে ও ফুল ফোটানো যায়।

Nadia Ripat Ritu

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top