লাশ

Dead Body

“লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি”
বাড়ি ফেরার সময় হঠাৎ গাড়ির লেখাটায় চোখ আটকে গেলো। প্রত্যেক গাড়িই একটি নির্দিষ্ট গন্তব্যে গিয়ে থামে। এই গাড়িও তার ব্যতিক্রম নয়, তবে সামান্য তফাৎ আছে। এই গাড়ির যাত্রী যে গন্তব্যে যায়, সেখান থেকে আর ফেরা হয় না তার।

সেদিন বাড়ির সামনে যখন এই গাড়ি থামানো দেখলাম, মনের কোথায় যেন কিঞ্চিৎ খারাপ লাগা কাজ করলো। এই খারাপ লাগার অনুভূতি খানিকটা তীব্র হলো যখন দেখতে পেলাম সাদা কাপড়ে মোড়ানো দেহটা গাড়িতে ওঠানো হচ্ছে। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়েই দেখছিলাম, তার মুখটা মলীন—যেন কত বছর পর আজ সে শান্তিতে ঘুমিয়েছে। তার এই শান্তিতে ব্যাঘাত ঘটানোর সাধ্য এ পৃথিবীর কারোর নেই।
মানুষটাকে দেখার পর থেকেই এক আজব অনুভূতি শুরু হলো, অস্থির লাগলো—যেন আমার জীবনের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে গেলো অথচ মানুষটাকে আমি আগে কখনো দেখিনি। তবে এই খারাপ লাগা কিসের? মানুষ বলাটা কতটুকু প্রাসঙ্গিক তা জানি না। কারো নিঃশ্বাস থেমে গেলে আমরা তাকে ‘লাশ’ বলি। আচ্ছা, আমাদের আশেপাশে যত নিঃশ্বাস নেওয়া লাশেরা ঘুরে বেড়ায়, তাদের কি বলা উচিত?

যাইহোক, আপাতত শ্বাস-প্রশ্বাসহীন লাশের কথাই বলি; ঠিক যেই মুহূর্তে তার নিঃশ্বাস থেমে গেলো, তার নাম হয়ে গেলো ‘লাশ’। তার সুন্দর নামটা হারিয়ে গেলো—এমনভাবে হারালো যেন কখনো সেই নামের অস্তিত্বই ছিলো না। আহা জীবন! আহা বাস্তবতা! স্বল্পদৈর্ঘ্যের এ জীবনের অধিকাংশ সময় কাটে সুদিনের অপেক্ষায়, দুর্দিনকে সঙ্গী করে।
সময় যায়, বছর যায়, আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পায়, তবে পূর্ণ হয় কি? সুদিন হয়তো ঠিকই আসে, তবে তখন আর তার প্রয়োজন থাকে না। হয়তো সুদিন ঠিকই আসে, এসে দেখে আমাদের দরজায় অপেক্ষায় আছে “লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি”। পরিচয়টাও বদলে যায়, নাম হয় “লাশ”।

Razia Khan

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top