রজার উইলিয়ামস: ধর্মীয় স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও আধুনিক রাজনীতির পথিকৃৎ

Roger Williams

রজার উইলিয়ামস (Roger Williams, ১৬০৩–১৬৮৩)—আমেরিকার উপনিবেশিক যুগের অন্যতম আলোচিত ও প্রভাবশালী চিন্তাবিদ, ধর্মতাত্ত্বিক, রাজনৈতিক দার্শনিক এবং মানবাধিকার-ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রথম মৌলিক তাত্ত্বিকদের একজন। আজকের যুক্তরাষ্ট্রে যে ধর্মীয় স্বাধীনতা, বহুবাদ, রাষ্ট্র ও গির্জার বিচ্ছেদ, ব্যক্তিগত অধিকার—এগুলো যেভাবে গণতান্ত্রিক আদর্শের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত—তার শেকড়ে রজার উইলিয়ামসের চিন্তা এক অনিবার্য প্রেরণা। তিনি এমন এক সময়ে এই ধারণাগুলো উচ্চারণ করেছিলেন, যখন ভিন্নমত প্রকাশ করা কিংবা প্রচলিত ধর্মীয় কর্তৃত্বকে প্রশ্ন করা ছিল সাহসিকতা নয়, বরং মৃত্যুদণ্ড বা নির্বাসনের ঝুঁকি।

উইলিয়ামস ছিলেন পুরিতান ঐতিহ্যের মধ্যে জন্ম নেওয়া একজন অধ্যয়নশীল ধর্মতাত্ত্বিক, কিন্তু তাঁর মানস চিন্তার ছিল বিস্তৃত, মানবিক এবং বিপ্লবাত্মক। ধর্মীয় শাসনব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের মধ্যে যে জটিল সম্পর্ক ১৭শ শতকের ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার উপনিবেশগুলোতে বিদ্যমান ছিল—তিনি তার বিরুদ্ধে যুক্তি তুলে সমাজে এক নতুন মানবতাবাদী আলো জ্বালান। তাঁর জীবনের গল্প, চিন্তার রূপায়ণ এবং উপনিবেশিক রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকা আজকের আধুনিক উদার চিন্তার পীঠস্থান রোড আইল্যান্ড (Rhode Island)-এর ভিত্তি তৈরি করেছে।

শৈশব ও শিক্ষাজীবন

রজার উইলিয়ামস ১৬০৩ সালে লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবার ছিল মধ্যবিত্ত; পিতা জেমস উইলিয়ামস ছিলেন একজন বস্ত্র ব্যবসায়ী। উইলিয়ামস খুব ছোটবেলায়ই শিক্ষার প্রতি গভীর আগ্রহ দেখান। স্যার এডওয়ার্ড কোকের মতো বিখ্যাত আইনজ্ঞ তাঁর বুদ্ধিমত্তা লক্ষ্য করে তাঁকে পৃষ্ঠপোষকতা করেন। পরবর্তীকালে উইলিয়ামস কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পেমব্রোক কলেজে ভর্তি হন, যেখানে তিনি ধর্মতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব, দর্শন ও আইন নিয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন।

কেমব্রিজে পড়াশোনার সময় তিনি পুরিতান আন্দোলনের প্রগতিশীল ধারার সঙ্গে পরিচিত হন। ইংল্যান্ডের চার্চে যে কর্তৃত্ববাদী ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণ চলছিল, তার বিরুদ্ধে পুরিতানদের সমালোচনার সঙ্গে তাঁর চিন্তার সাদৃশ্য গড়ে ওঠে। কিন্তু তিনি কখনোই অন্ধভাবে পুরিতান মতবাদের অনুসারী হননি; বরং যুক্তির আলোয় ধর্মীয় প্রশ্নের ব্যাখ্যা খুঁজে বেড়িয়েছেন।

১৬২৯ সালে তিনি ক্যামব্রিজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ইংল্যান্ডে তখন চার্লস প্রথমের শাসনাধীন ধর্মীয় অস্থিরতা তুঙ্গে। পুরিতানবিরোধী নীতির ফলে অসংখ্য ধর্মীয় নেতাকে কারাবরণ বা নির্বাসনের শিকার হতে হয়। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির সন্ধানেই উইলিয়ামস পরবর্তীতে আমেরিকায় অভিবাসনের সিদ্ধান্ত নেন।

আমেরিকায় আগমন ও পুরিতান সমাজের সঙ্গে দ্বন্দ্ব

১৬৩১ সালে রজার উইলিয়ামস স্ত্রী মেরি বার্নার্ডকে সঙ্গে নিয়ে ম্যাসাচুসেটস বে কলোনিতে পৌঁছান। প্রথমে বোস্টনে, পরে সেলেম এবং শেষ পর্যন্ত প্লাইমাউথে কাজ করেন। তিনি ছিলেন একজন জনপ্রিয় ধর্মযাজক, কিন্তু খুব দ্রুতই তাঁর চিন্তা ম্যাসাচুসেটসের পুরিতান নেতাদের সঙ্গে সংঘর্ষ সৃষ্টি করে।

ধর্মতাত্ত্বিক বিরোধ

উইলিয়ামস মনে করতেন—

রাষ্ট্র কোনো অবস্থাতেই ধর্মীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না

প্রকৃত ধর্মীয় আস্থা জোরপূর্বক প্রতিষ্ঠিত করা যায় না

গির্জার ওপর রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব আরোপ করলে তা আধ্যাত্মিক স্বাধীনতার বিরোধী

সকল মানুষের ধর্মচর্চা, এমনকি নাস্তিক হওয়ার স্বাধীনতাও রক্ষা করা উচিত

এই ধারণাগুলো ১৭শ শতকের উপনিবেশিক আমেরিকায় একেবারেই অস্বাভাবিক ছিল। ম্যাসাচুসেটস বে-এর পুরিতান নেতৃত্ব বিশ্বাস করত রাষ্ট্র ও গির্জা একত্রে কাজ করবে ঈশ্বরের আইন অনুসারে সমাজকে পরিচালনা করতে। উইলিয়ামস সরাসরি বলেছিলেন—গির্জা রাষ্ট্রের অধীন হতে পারে না এবং রাষ্ট্রের আইন গির্জার বিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়।

এটি ছিল এক প্রকার বিপ্লবী ঘোষণা।

ভূমি অধিকার নিয়ে বিতর্ক

উইলিয়ামস উপনিবেশিকদের নেটিভ আমেরিকানদের কাছ থেকে বিনা অনুমতিতে ভূমি দখলের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি যুক্তি দেন—

“যে ভূমি নেটিভদের, তা তাদের সম্মতি ও ন্যায্য পারিশ্রমিক ছাড়া দখল করা চরম অন্যায়।”

এই অবস্থান ম্যাসাচুসেটসের জন্য ছিল রাজনৈতিকভাবে অস্বস্তিকর। ভূমি দখল সেই সময় উপনিবেশিক সম্প্রসারণের ভিত্তি, আর উইলিয়ামসের প্রশ্ন সমাজের কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করেছিল।

নির্বাসন

ম্যাসাচুসেটস সরকার উইলিয়ামসকে “বিপজ্জনক মতের প্রচারক” ঘোষণা করে ১৬৩৫ সালে তাঁকে কলোনি থেকে নির্বাসিত করার আদেশ জারি করে। শীতের তীব্র ঠান্ডার মধ্যে তিনি প্রায় ৮০ কিলোমিটার জঙ্গল পাড়ি দিয়ে ন্যারাগানসেট (Narragansett) আদিবাসীদের অঞ্চলে আশ্রয় নেন। নেটিভ নেতারা তাঁর ন্যায়পরায়ণতা ও শ্রদ্ধাশীল আচরণে মুগ্ধ ছিলেন; তাঁদের সাহায্যেই তিনি নতুন বসতি গড়ে তোলার পথ খুঁজে পান।

রোড আইল্যান্ড প্রতিষ্ঠা: স্বাধীনতার পরীক্ষাগার

১৬৩৬ সালে রজার উইলিয়ামস প্রভিডেন্স (Providence) নামক নতুন বসতি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে এটি রোড আইল্যান্ড অ্যান্ড প্রভিডেন্স প্ল্যান্টেশনসের ভিত্তি হয়—যা আজকের রোড আইল্যান্ড রাজ্যের জন্ম।

রোড আইল্যান্ডের অনন্য বৈশিষ্ট্য

রজার উইলিয়ামস যে রোড আইল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন, তার মূল ভিত্তি ছিল—

সম্পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা

বিবেকের স্বাধীনতা

গির্জা ও রাষ্ট্রের বিচ্ছেদ

ন্যায্য ভূমি অধিগ্রহণ

নাগরিকদের সমান অধিকার

তিনি ঘোষণা করেন:

“আমাদের এই ভূমি হবে বিবেকের স্বাধীনতার আশ্রয়স্থল—একটি মুক্ত উপসাগর যেখানে কেউ বিশ্বাসের জন্য অত্যাচারিত হবে না।”

রোড আইল্যান্ডে—

ইহুদি, কোয়াকার, ক্যাথলিকসহ যেকোনো ধর্মের মানুষ অবাধে বসবাস করতে পারত

সরকারের কোনো ধর্মীয় কর্তৃত্ব ছিল না

কোনো ধর্মীয় পরীক্ষা ছাড়াই সকল নাগরিক ভোট দিতে পারত

নেটিভ আমেরিকানদের সাথে ন্যায্য চুক্তির মাধ্যমে ভূমি ক্রয় করা হতো

১৭শ শতকের পৃথিবীতে এমন সমাজ ছিল বিরল।

ইংল্যান্ডের কাছ থেকে রাজকীয় সনদ

১৬৪৩–৪৪ সালে উইলিয়ামস ইংল্যান্ডে গিয়ে রোড আইল্যান্ডের জন্য একটি রাজকীয় সনদ সংগ্রহ করেন। এই সনদ কলোনির রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। উইলিয়ামসের নিজস্ব কূটনৈতিক দক্ষতা ও যুক্তিভিত্তিক বক্তব্য ইংল্যান্ডের সংসদের সমর্থন পেতে সাহায্য করে।

নেটিভ আমেরিকানদের প্রতি সম্মান ও ভাষাগত অবদান

রজার উইলিয়ামস শুধু ধর্মীয় স্বাধীনতার চ্যাম্পিয়ন নন; তিনি ছিলেন নেটিভ আমেরিকানদের প্রথম প্রকৃত ভাষাবিদ, মানবতাবাদী বন্ধু এবং ন্যায্য আচরণের প্রবক্তা।

নেটিভদের প্রতি শ্রদ্ধা

তিনি ন্যারাগানসেট, ওয়াম্পানোগ প্রভৃতি গোষ্ঠীর সঙ্গে পারস্পরিক সম্মান, সহানুভূতি ও ন্যায়ের ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তাঁর যুক্তি ছিল—

নেটিভরা প্রকৃত মানুষ এবং ঈশ্বরের সন্তান

তাঁদের সংস্কৃতি ও অধিকারকে সম্মান করা জরুরি

যুদ্ধ বা দখল নয়, আলোচনাই শান্তির পথ

উইলিয়ামস এমন সময়ে এই মত প্রকাশ করেন, যখন ইউরোপীয় উপনিবেশবাদীরা নেটিভ জনগোষ্ঠীকে প্রায়ই “অসভ্য” বা “অমানবিক” হিসেবে দেখত।

ভাষাগত কাজ

১৬৪৩ সালে প্রকাশিত তাঁর বই A Key into the Language of America ছিল ন্যারাগানসেট ভাষার প্রথম পূর্ণাঙ্গ ব্যাকরণ ও শব্দভাণ্ডারভিত্তিক গ্রন্থ।

এই বই—

শুধু ভাষা নয়, নেটিভদের জীবনযাত্রা, খাদ্য, আচার, নীতিবোধ, সামাজিক কাঠামো, কাব্য ও গান সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য প্রদান করে

উপনিবেশবাদীদের কাছে নেটিভদের নতুনভাবে বুঝতে সাহায্য করে

আমেরিকার প্রথম নৃতত্ত্বমূলক গ্রন্থগুলোর অন্যতম হিসেবে বিবেচিত

রজার উইলিয়ামসের চিন্তাধারা ও দার্শনিক অবদান
১. ধর্মীয় স্বাধীনতা

উইলিয়ামস বিশ্বাস করতেন, ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাসের বিষয়। এ কারণে রাষ্ট্র যদি ধর্ম নির্ধারণ করে দেয়, সেটা হবে মানুষের বিবেকের ওপর আক্রমণ।

তাঁর মতে—

বিশ্বাস জোর করে প্রতিষ্ঠা হয় না

রাষ্ট্রীয় ধর্ম মানুষের আধ্যাত্মিকতা নষ্ট করে

ভুল বিশ্বাসকে যুক্তি দিয়ে মোকাবিলা করা উচিত, দমন করে নয়

এই ভাবনা আজকের আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মূল নীতিতে পরিণত হয়েছে।

২. চার্চ ও রাষ্ট্রের বিচ্ছেদ

তাঁর বক্তব্য ছিল—

“রাষ্ট্রের কাজ নাগরিকের জীবন-সম্পত্তি রক্ষা করা; আত্মার উপর কোনো রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব নেই।”

উইলিয়ামস প্রথম চিন্তাবিদদের একজন যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ সংবিধানের ভিত্তি গড়ে তোলার মতো ধারণা দেন।

৩. মানবাধিকার ও সমতা

উইলিয়ামস সবার সমান অধিকারকে সমর্থন করতেন, ধর্ম বা জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্যকে তিনি অগ্রহণযোগ্য বলতেন। তাঁর রোড আইল্যান্ডেই প্রথম এমন সমাজ তৈরি হয় যেখানে ধর্মীয় পরীক্ষা ছাড়াই যে কাউকে নাগরিক অধিকার দেওয়া হয়।

৪. সহনশীলতা ও বহুত্ববাদ

তিনি বিশ্বাস করতেন, ভিন্নমত সমাজকে সমৃদ্ধ করে। বিরোধী মতকে নিঃশেষ না করে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা সমাজকে স্থায়ী শান্তির দিকে এগিয়ে দেয়।

রাজনৈতিক সংগ্রাম ও বিরোধ

রজার উইলিয়ামসের চিন্তাধারা অনেক সময় তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠিত রোড আইল্যান্ডের মধ্যেও বিতর্ক সৃষ্টি করে। তিনি ছিলেন অত্যন্ত নীতিবান এবং সমালোচনামূলক চিন্তার মানুষ; তাই তাঁর বক্তব্য মাঝে মাঝে সহকর্মী পুরিতানদের কাছেও কঠোর মনে হতো।

কোয়াকারদের কিছু মতবাদ তিনি ভুল মনে করতেন, তবে তাঁদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। আবার কিছু ক্ষেত্রে তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে অতিরিক্ত স্বাধীনমনা বলে অভিযুক্ত করতেন। কিন্তু উইলিয়ামস দৃঢ় ছিলেন—মানুষের স্বাধীনতা কোনো মতবাদ বা চার্চের কাছে বন্ধক রাখা যাবে না।

প্রধান বইসমূহ

রজার উইলিয়ামস তাঁর জীবনে বহু গুরুত্বপূর্ণ বই লেখেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—

১. A Key into the Language of America (১৬৪৩)

নেটিভ আমেরিকান ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত প্রথম বিস্তৃত গ্রন্থ।

২. The Bloudy Tenent of Persecution (১৬৪৪)

ধর্মীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে দৃঢ় যুক্তি; আধুনিক ধর্মীয় স্বাধীনতার ভিত্তিপ্রস্তর।

৩. The Bloudy Tenent yet More Bloody (১৬৫২)

ধর্মীয় প্রশ্নে সহনশীলতার আরও গভীর দার্শনিক ব্যাখ্যা।

৪. Letters and pamphlets

রাজনীতি, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে প্রভাবশালী চিঠি ও প্রবন্ধ।

শেষ জীবন

জীবনের শেষভাগে উইলিয়ামস ধর্মযাজক, লেখক এবং রাজনীতিবিদ হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। তিনি প্রভিডেন্সে শান্তভাবে বসবাস করে মানবিক মূল্যবোধ ও স্বাধীনতার বার্তা ছড়িয়ে গেছেন। ১৬৮৩ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর তাঁর কাজ ধীরে ধীরে আমেরিকান রাজনৈতিক দর্শনের কেন্দ্রে স্থান পায়।

রজার উইলিয়ামসের উত্তরাধিকার
১. যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মীয় স্বাধীনতার ভিত্তি

আজকের যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের “First Amendment”—যেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও রাষ্ট্র-গির্জা বিচ্ছেদের নীতি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত—তা উইলিয়ামসের চিন্তার সুস্পষ্ট প্রতিফলন।

২. মানবাধিকার ও গণতন্ত্র

মানুষের বিবেকের স্বাধীনতা, সমান অধিকার, ন্যায্য ভূমি অধিগ্রহণ—এসব নীতি আজ আমেরিকান গণতন্ত্রের মূলভিত্তি।

৩. বহুসংস্কৃতিবাদের অগ্রদূত

রোড আইল্যান্ড ছিল আমেরিকার প্রথম প্রকৃত বহুধর্মীয় ও বহুসংস্কৃতির সমাজ—ধর্মীয় অভয়ারণ্য—যা সমগ্র বিশ্বের জন্য উদাহরণ।

৪. নেটিভ আমেরিকানদের প্রতি সম্মান

তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে উপনিবেশবাদ মানেই দখল ও শোষণ নয়; সম্মানজনক সম্পর্কের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানও সম্ভব।

রজার উইলিয়ামস ছিলেন তাঁর সময়ের অনেক বেশি অগ্রবর্তী এক চিন্তাবিদ—যার দর্শন আজও আশ্চর্যভাবে প্রাসঙ্গিক। তিনি শুধু ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য লড়েননি; তিনি মানুষের বিবেকের মর্যাদা রক্ষার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন।
তাঁর কণ্ঠ বলেছিল:

সহিষ্ণুতাই সভ্যতার শক্তি

স্বাধীনতাই শান্তির ভিত্তি

ভিন্নতার মধ্যেই মানবতার পূর্ণতা

১৭শ শতকের উপনিবেশিক অস্থিরতা পেরিয়ে উঠে আসা রজার উইলিয়ামসের চিন্তা আজকের আধুনিক আমেরিকার মূল্যবোধ, এমনকি সমগ্র বিশ্বের মানবাধিকার ধারণাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। তাই তাঁকে শুধু রোড আইল্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা নয়—মানব স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের মহান আর্কিটেক্ট হিসেবে স্মরণ করা উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top