অনুগল্প: সময়-চোর ও অদৃশ্য টিউলিপ

শহরের লাইটপোস্টগুলো যখন নিভে যেত, তখন সে আসত। তার নাম কেউ জানত না, আমি ডাকতাম—সময়-চোর। সে মানুষের মূল্যবান সময় চুরি করত না, চুরি করত কেবল সেই সব স্মৃতি, যা তীব্র কষ্টের জন্ম দেয়। কিন্তু আমার কাছে এসে সে থমকে যেত।
​কারণ, আমার সবথেকে কষ্টের স্মৃতি ছিল আমার প্রেম—অনামিকা। সে চলে গেছে পাঁচ বছর হলো। চলে যাওয়ার আগে সে আমাকে একটি নীল টিউলিপ উপহার দিয়েছিল, যা শত চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি। সেই হাহাকার সময়-চোরের প্রিয় খাদ্য ছিল।
​একদিন সে আমার সামনে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল, “তোমার হৃদয়ের ক্ষত এত গভীর কেন? এটা তো আমার কাজ সহজ করে দেবে।” আমি বললাম, “তুমিও পারবে না, কারণ এটা শুধু কষ্ট নয়—এটা অপূর্ণ ভালোবাসা।”
​সে কৌতূহলী হয়ে আমার দিকে হাত বাড়ালো। তার স্পর্শে আমার চারপাশের জগৎটা মুহূর্তেই নীলচে হয়ে গেল। আমি দেখলাম—অনামিকা! সেই পুরোনো নীল শাড়ি পরে সে দাঁড়িয়ে আছে। সে বলল, “আমি চলে যাইনি, শুধু আমার সময়ের পাতাগুলো চুরি হয়ে গিয়েছিল।”
​সময়-চোর হাসল। “এই মেয়েটি ফ্যান্টাসির জগতে বন্দী। আমি সেই গেটকিপার। শুধু তুমিই তাকে মনে রেখেছো, তাই আজ সে ক্ষণিকের জন্য তোমার কাছে।”
​আমি ছুটে গেলাম অনামিকার দিকে, কিন্তু আমার হাত তার শরীর ভেদ করে গেল। সে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার আগে শুধু বলল, “ভালোবাসা স্মৃতি চুরি হতে দেয় না।”
​পরমুহূর্তেই সময়-চোর উধাও। কিন্তু টেবিলের ওপরের শুকিয়ে যাওয়া টিউলিপটা হঠাৎ করেই উজ্জ্বল নীল হয়ে ফুটতে শুরু করল। আমি বুঝলাম, আমার গভীরতম প্রেম তাকে ফিরিয়ে আনতে পারেনি, কিন্তু আমার স্মৃতি তাকে অমর করে রেখেছে। আর সেই টিউলিপটা এখন আমার এবং তার ফ্যান্টাসি জগতের মাঝে একমাত্র সেতু।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 thought on “অনুগল্প: সময়-চোর ও অদৃশ্য টিউলিপ”

Scroll to Top