থমাস মরটন: উপনিবেশিক আমেরিকার বৈপরীত্যের কবি, বিদ্রোহী মানবতাবাদী

Thomas Morton

উত্তর আমেরিকার প্রারম্ভিক ইংরেজ উপনিবেশিক ইতিহাস নানা রকম চরিত্রে পূর্ণ—ন্যায়পরায়ণ পিউরিটান, ধর্মান্তরিত মিশনারি, বাণিজ্যনির্ভর ব্যবসায়ী, অভিযাত্রী, সামন্তপ্রথার উত্তরসূরি আবার সাম্যের এক নরম স্বপ্নদ্রষ্টাও। এই বিচিত্র মানচিত্রের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থমাস মরটন (Thomas Morton, প্রায় 1579–1647) এক অদ্ভুত আলো ছড়ান। তিনি ছিলেন একই সঙ্গে আইনজ্ঞ, কবি, ভোগবিলাসী, বিদ্রূপাত্মক ব্যঙ্গকার, মানবতাবাদী, আবার ধর্মীয় কট্টরপন্থীদের চরম সমালোচক। কেউ তাঁকে বলেন “উপনিবেশিক আমেরিকার প্রথম সত্যিকারের স্বাধীনচেতা ব্যক্তি”, কেউ বলেন “নৈতিক নিয়মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী উন্মাদ”, আবার কেউ মনে করেন তিনি ছিলেন মানবিকতা ও সহাবস্থানের প্রথম দার্শনিক প্রস্তাবক।

থমাস মরটনের জীবন ও ভাবনার আলোচনায় আমরা দেখি—একদিকে পিউরিটানদের গম্ভীর দাবি ও কঠোর ঈশ্বরনীতি, অন্যদিকে মরটনের আনন্দ-বিলাস ও স্থানীয় নেটিভ সমাজের সঙ্গে সমতার সম্পর্ক। তাঁর বাসস্থান মেরি মাউন্ট (Merry Mount) যেন ছিল প্রাথমিক আমেরিকান ভূখণ্ডে একটি উল্টো-দুনিয়া—যেখানে নাচ, গান, পানাহার, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও নিখাদ স্বাধীনতাকে উৎসবের মতো উদযাপন করা হতো।

১. জন্ম ও শিক্ষা: প্রাক-উপনিবেশিক ইংল্যান্ডের সন্তান

থমাস মরটন জন্মেছিলেন ইংল্যান্ডে, সম্ভবত ডেভনশায়ারের আশেপাশে। তাঁর পরিবার ছিল মধ্যবিত্ত–উচ্চবিত্তের মাঝামাঝি স্তরে, এবং তিনি আইন পড়েছিলেন। তাঁর জীবনের প্রথম অংশ বেশিরভাগই কেটেছিল ইংল্যান্ডের সামাজিক অবস্থান ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থেকে।

আইনজ্ঞ হিসেবে তিনি ছিলেন প্রশিক্ষিত, কিন্তু তিনি শুধুমাত্র একটি পেশার মানুষ ছিলেন না—তিনি ছিলেন শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির অনুরাগী। শেক্সপিয়ারের যুগের ইংল্যান্ডে কবিতা, নাটক, সঙ্গীত ও বৌদ্ধিক উদারতা যে পরিবেশ তৈরি করেছিল, মরটন তারই উত্তরসূরি ছিলেন। তাঁর লেখনীতে শেকসপিয়রীয় শব্দভাণ্ডারের ছাপ দেখা যায়। ভাষার রস, ব্যঙ্গ, রূপক, বিদ্রূপ—সব মিলিয়ে তাঁর রচনা পাঠককে একটি সাহিত্যিক মঞ্চে আমন্ত্রণ জানায়।

কিন্তু ইংল্যান্ডের সমাজে এমন স্বাধীনচেতা মানুষ খুব বেশিদিন স্থির হতে পারেননি। অর্থনৈতিক লাভ ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার স্বপ্ন তাঁকে ঠেলে দেয় নতুন দিগন্তে—নতুন ইংল্যান্ডের দিকে।

২. আমেরিকায় আগমন: নতুন ভূখণ্ডে সম্ভাবনা ও স্বাধীনতার খোঁজ

১৬২০-এর দশকে মরটন প্রথম আমেরিকায় পা রাখেন। নিউ ইংল্যান্ডে সেই সময় ইংরেজ উপনিবেশগুলোর শুরু মাত্র। পিউরিটানরা তখন নতুন জীবন গঠন করছে—ঈশ্বরের কৃপায়, শৃঙ্খলা, নিয়ম, কঠোর নৈতিকতা ও পরিশ্রমের ওপর ভিত্তি করে।

মরটন এই কাঠামোর একেবারে বিপরীত। তিনি নৈতিকতার সেই কঠোর কাঠামোকে মানবিকতার নামে প্রশ্ন করেন; সংস্কৃতিকে ধর্মের চেয়ে বড় মনে করেন; মানুষের প্রাকৃতিক আনন্দকে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কিছু বলে বিবেচনা করেন না।

তিনি প্রথমে এক বাণিজ্যিক অংশীদারির সঙ্গে এসেছিলেন—ফার ট্রেড বা পশমবাণিজ্যে যুক্ত হতে। কিন্তু ব্যবসার বাইরে তাঁর দৃষ্টি ছিল মানুষের সংস্কৃতি, সম্পর্ক, নান্দনিকতা এবং মুক্ত জীবনচর্চায়। আমেরিকায় এসে তাঁর ব্যক্তিত্ব যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠে।

৩. মেরি মাউন্ট (Merry Mount): স্বাধীনতা, উৎসব ও মানবিকতার এক অভয়ারণ্য

নিউ ইংল্যান্ডে এসে থমাস মরটন ও তাঁর সঙ্গীরা যে কলোনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তা ইতিহাসে পরিচিত হয় মেরি মাউন্ট নামে, যদিও তার আনুষ্ঠানিক নাম ছিল Ma-re Mount।

মেরি মাউন্টের ভাবনা

মেরি মাউন্ট ছিল পিউরিটান সমাজের সম্পূর্ণ বিপরীত—

এখানে ধর্মীয় কঠোরতা ছিল না

আনন্দ, সঙ্গতি, নাচ, গান, কবিতা, পানাহার—সব ছিল উৎসবের মতো

স্থানীয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে সমান সম্মান দেওয়া হতো

সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন ছিল স্বাভাবিক

বাণিজ্য ছিল উন্মুক্ত ও শান্তিপূর্ণ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে উদযাপন করা হতো

মরটনের মতে, ঈশ্বর মানুষকে আনন্দ দিয়েছেন—সুতরাং আনন্দ করা কোনো অপরাধ নয়। তিনি তাঁর কমিউনিটিকে এমনভাবে গড়ে তোলেন, যা ইউরোপীয় কঠোর ধর্মীয় সংস্কৃতির বিরুদ্ধে এক উজ্জ্বল আলোকশিখার মতো ছিল।

মে-পোল বিতর্ক

১৬২৭ সালে মরটন তাঁর উপনিবেশে একটি বিশাল Maypole দাঁড় করান। মে-পোল ছিল ইউরোপীয় লোকসংস্কৃতির প্রাচীন প্রতীক—বসন্ত, উর্বরতা, প্রকৃতির নবজাগরণ ও উৎসবের প্রতীক।

মে-পোলকে কেন্দ্র করে মরটন তাঁর লোকদের সঙ্গে নাচ, গান, কবিতা ও উৎসবে মেতে ওঠেন। স্থানীয় আদিবাসীরাও এতে অংশ নেন।

পিউরিটান নেতারা এটিকে “পৌত্তলিকতা”, “উন্মাদনা”, “নৈতিক বিপর্যয়” এবং “ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ” হিসেবে দেখেন। বিশেষ করে উইলিয়াম ব্র্যাডফোর্ড এবং মাইলস স্ট্যান্ডিশ মরটনকে খোলাখুলি নিন্দা করেন।

মে-পোল যেন সেই যুগের আমেরিকায় সাংস্কৃতিক সংঘর্ষের প্রতীক হয়ে ওঠে—
একদিকে মুক্ত আনন্দ, অন্যদিকে কঠোর ধর্মশাসন।

৪. পিউরিটানদের সঙ্গে সংঘর্ষ: স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আইন, ধর্ম ও শক্তি

মরটনের স্বাধীনচেতা আচরণ পিউরিটানদের চোখে ছিল বিপজ্জনক। তাঁদের দৃষ্টিতে—

মরটন আদিবাসীদের সঙ্গে “অতিরিক্ত বন্ধুত্ব” করছে

বাণিজ্যে তাঁদের প্রতিযোগী হয়ে উঠছে

নৈতিক শৃঙ্খলাকে হুমকি দিচ্ছে

সমাজের তরুণদের বিভ্রান্ত করছে

ব্র্যাডফোর্ড লিখেছিলেন, মরটনের কলোনি ছিল “স্বেচ্ছাচারের আস্তানা”। বাস্তবে, পিউরিটানদের নৈতিক কাঠামো এতই কঠোর ছিল যে তার বাইরে থাকা যে-কোনো কিছু তাদের চোখে বিপথগামিতা বলে মনে হতো।

মরটনের গ্রেফতার ও নির্বাসন

১৬২৮ সালে মাইলস স্ট্যান্ডিশের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনী মরটনের উপনিবেশে হামলা চালায়।

তাঁকে গ্রেফতার করা হয়

কলোনি ধ্বংস করা হয়

মে-পোল কেটে ফেলা হয়

মরটনকে ইংল্যান্ডে নির্বাসিত করা হয়

কিন্তু মরটন সহজে হাল ছাড়ার মানুষ ছিলেন না। কয়েক বছর পর তিনি আবার নিউ ইংল্যান্ডে ফেরেন। আবার পিউরিটানদের বিরোধিতা করেন। আবার সমস্যায় পড়েন। তাঁর বিরুদ্ধে “আইন ভঙ্গ”, “ঈশ্বরনিন্দা”, “অনীতিকর আচরণ” ইত্যাদি অভিযোগ আনা হয়।

একাধিকবার তাঁকে কঠোর ঠান্ডায় বন্দি করা হয়। দীর্ঘ সময় তাঁকে খাঁচায় বন্দি রাখা হয়েছিল। তাঁর মতে, পিউরিটানরা তাঁকে যে আচরণ করেছে তা ছিল মধ্যযুগীয় বর্বরতার মতো।

তবে এসব ঘটনার মাঝেও মরটন তাঁর বুদ্ধি, সাহিত্যিক তীক্ষ্ণতা ও ব্যঙ্গ ছাড়েননি।

৫. নিউ ইংল্যান্ড কেনান (New England Canaan): ব্যঙ্গ, ইতিহাস, নৃবিজ্ঞান ও কবিতার মিশেল

১৬৩৭ সালে প্রকাশিত মরটনের বিখ্যাত গ্রন্থ New England Canaan-কে বলা হয় আমেরিকান উপনিবেশের ইতিহাসে প্রথম দিককার ব্যঙ্গাত্মক এবং একই সঙ্গে নৃবৈজ্ঞানিক রচনা।

বইটির বৈশিষ্ট্য

এটি তিন ভাগে বিভক্ত—

নিউ ইংল্যান্ডের প্রকৃতি ও পরিবেশ

নেটিভ আমেরিকানদের চরিত্র, সংস্কৃতি, নৈতিকতা ও সমাজব্যবস্থা

পিউরিটানদের সমালোচনা, তাঁদের ভণ্ডামি, ধর্মীয় কুসংস্কার ও অত্যাচারের বিবরণ

মরটন আদিবাসীদের সম্পর্কে যে পর্যবেক্ষণ দেন, তা তাঁর সময়ের তুলনায় অসাধারণ মানবিক—

তিনি তাঁদের সরলতা, বন্ধুত্ব, প্রকৃতির সঙ্গে মেলবন্ধনের প্রশংসা করেন

তাঁদের জীবনযাপনকে সম্মান করেন

ইউরোপীয়দের অহংকারকে খোলাখুলি নিন্দা করেন

পিউরিটানদের বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি ব্যঙ্গের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন। তাঁর তীক্ষ্ণ ভাষা প্রায় নাটকীয়, মাঝে মাঝে হাস্যকর, কিছু অংশ আবার সাহসী সাহিত্যিক বিদ্রূপে ভরা।

অনেক গবেষকের মতে New England Canaan উপনিবেশিক আমেরিকার প্রথম “তীব্র রাজনৈতিক ব্যঙ্গগ্রন্থ”।

৬. স্থানীয় আদিবাসীদের সঙ্গে মরটনের সম্পর্ক: এক মানবিক সেতুবন্ধন

মরটনের আসল বৈশিষ্ট্য এখানেই—তিনি আদিবাসীদের মানুষ হিসেবে দেখেছিলেন, “অন্যান্য” হিসেবে নয়।

তিনি—

তাঁদের সঙ্গে সমানভাবে বসতেন

বাণিজ্য করতেন ন্যায্যতার সঙ্গে

তাঁদের ভাষা ও সংস্কৃতি শিখতেন

তাঁদের উৎসবে অংশ নিতেন

তাঁদের জীবনধারায় যে প্রাকৃতিক সাম্য, তা তিনি প্রশংসা করতেন

পিউরিটানরা এই সম্পর্ককে ভয় পেত। তাঁদের ভয় ছিল, মরটনের কলোনিতে তরুণ ইউরোপীয়রা “ধর্মহীনতার” পথে চলে যাবে।

বাস্তবে, মরটনের দৃষ্টিভঙ্গি মানবতাবাদী—
তিনি বিশ্বাস করতেন, সব মানুষ প্রকৃতির সন্তান; ধর্ম, জাতি, ভাষা মানুষের মধ্যে কৃত্রিম বিভাজন তৈরি করে।

৭. সমকালীনদের দৃষ্টিতে মরটন: নায়ক না ভিলেন?

থমাস মরটন তাঁর সমসাময়িক ইংরেজ উপনিবেশিক লেখকদের চোখে ছিলেন–

বিপজ্জনক

নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ

অস্থিরচেতা

স্বাধীনতাপ্রিয়

বিদ্রোহী

ধর্মের শত্রু

কিন্তু আজ, ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়—তিনি ছিলেন এক সংস্কৃতিসংলগ্ন চিন্তাবিদ, যিনি মানবিকতা ও বহুত্ববাদের বীজ বপন করেছিলেন।

৮. মরটনের পুনরাবির্ভাব ও পরবর্তী জীবন

নিউ ইংল্যান্ডের পিউরিটান শাসকরা বারবার তাঁকে নির্বাসিত করলেও তিনি একরকম জেদ নিয়েই ফিরে আসতেন। তাঁর চূড়ান্ত প্রত্যাবর্তনের পর তাঁকে আবার বন্দি করা হয় এবং শেষ জীবনে তিনি নিঃসঙ্গতার মধ্যে ইংল্যান্ডে ফিরে যান। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয় ১৬৪৭ সালে।

বেশিরভাগ সময় তিনি অবজ্ঞা, নির্যাতন ও ভুল ব্যাখ্যার শিকার হলেও তাঁর লেখনী এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত মেরি মাউন্ট কলোনি পরবর্তীকালে মার্কিনী স্বাধীনতার মনোভাব, সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন, বহুত্ববাদ ও মানবতাবাদের প্রাথমিক প্রতীক হয়ে ওঠে।

৯. থমাস মরটনের দর্শন: স্বাধীনতা, আনন্দ ও মানবিকতার সুর

মরটন বিশ্বাস করতেন—

১. আনন্দ মানুষের স্বাভাবিক অধিকার

জীবনকে কঠোর শাসনে বেঁধে রাখার প্রয়োজন নেই। মানুষ ঈশ্বরের সৃষ্টির সঙ্গে মিল রেখে সুখ ও সৌন্দর্য ভোগ করতেই পারে।

২. ধর্ম মানুষের মনকে মুক্ত করতে পারে, বদ্ধও করতে পারে

পিউরিটানদের ক্ষেত্রে তিনি দেখেছিলেন ধর্ম কীভাবে মানুষকে এক-মাত্রিক করে তোলে। কিন্তু তিনি স্বীকার করতেন আধ্যাত্মিকতার সৌন্দর্য।

৩. সাংস্কৃতিক বিনিময় মানবসমাজের স্বাভাবিক বিকাশ

আদিবাসীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক প্রমাণ করে—ভিন্ন সংস্কৃতি মিলিত হলে মানুষ আরও সমৃদ্ধ হয়।

৪. প্রকৃতি মানুষের শিক্ষক

নিউ ইংল্যান্ডের বন-পাহাড়, নদী-সাগরের মধ্যে তিনি এক নতুন জীবনদর্শন খুঁজে পান—প্রকৃতি মানুষকে স্বাধীনতা শেখায়।

১০. মেরি মাউন্টের উত্তরাধিকার

থমাস মরটনের মেরি মাউন্ট কলোনি ইতিহাসে খুব অল্পসময়ের জন্য ছিল, কিন্তু সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অর্থে এটি ছিল একটি প্রতিবাদমূলক কেন্দ্র।

এখানে জন্মেছিল—

মানুষের স্বভাবগত আনন্দকে স্বীকৃতি

আদিবাসী–ইউরোপীয় সম্পর্কের সমতা

কঠোর ধর্মীয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মানবিক প্রতিবাদ

স্বাধীন চেতনার বীজ

অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, আমেরিকার পরবর্তী “স্বাধীনতার ভাবনা”—যা ১৭৭৬ সালে প্রতিষ্ঠা পায়—তার দূরতম শেকড় এক অর্থে মেরি মাউন্টেই লুকিয়ে আছে।

১১. সাহিত্যিক হিসেবে মরটন

যদিও তিনি পেশাদার লেখক ছিলেন না, তবু তাঁর রচনার—

রসবোধ

ভাষার সৌন্দর্য

গল্প বলার দক্ষতা

ব্যঙ্গের তীক্ষ্ণতা

নৃতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

তাঁকে ইংরেজি সাহিত্যের প্রারম্ভিক আমেরিকান পর্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম করে তুলেছে। New England Canaan আজও গবেষকদের কাছে এক মূল্যবান নথি।

১২. বিতর্ক ও বিরোধের মাঝেও মানবিকতার এক আলো

থমাস মরটন ছিলেন বহুমাত্রিক চরিত্র। তাঁকে বোঝা কঠিন, আবার অবহেলা করাও সম্ভব নয়। তিনি ছিলেন—

স্বাধীনতার কবি

মানবিকতার রক্ষক

সামাজিক নিয়মের ভাঙনকর্তা

ধর্মীয় কট্টরতার সমালোচক

প্রকৃতির অনুরাগী

সংস্কৃতির মধ্যস্থকারক

বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু

আবার অদ্ভুত এক রসিক লেখক

তিনি অনেকভাবে তাঁর সময়কে অতিক্রম করেছিলেন—ভাবনা, জীবনযাপন এবং মানুষের প্রতি সম্মানের জায়গায়।

থমাস মরটনের জীবনকে এক কথায় সংজ্ঞায়িত করা অসম্ভব। তিনি ছিলেন একটি বৈপরীত্যপূর্ণ আত্মা—যার মধ্যে আনন্দ ও বিদ্রোহ, স্বপ্ন ও সংঘর্ষ, মানবতা ও ব্যঙ্গ, কবি ও বিদ্রোহী—সব একসূত্রে গাঁথা ছিল।

পিউরিটানদের কঠোর ধর্মীয় শাসনের বিপরীতে মরটনের মেরি মাউন্ট ছিল এক মুক্তমেলার চিত্র—যেখানে মানুষ তার স্বাভাবিক সত্তাকে উদযাপন করত।

আজ, যখন বিশ্ব আবারও জাতি, ধর্ম, জাতীয়তা ও নৈতিকতার সংকীর্ণতার মুখে দাঁড়িয়ে, তখন মরটনের স্বাধীনচেতা মানবিকতা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—
মানুষের আনন্দ, সহাবস্থান ও সাংস্কৃতিক সম্মানই মানবসমাজের প্রকৃত ভিত্তি।

থমাস মরটন তাই শুধু একটি ঐতিহাসিক চরিত্র নন, তিনি মানবতার এক উজ্জ্বল প্রতীক—যিনি দেখিয়েছিলেন, প্রকৃতি ও মানুষের আনন্দময় সহাবস্থানে আছে জীবনের আসল সৌন্দর্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top