উইলিয়াম ব্লেক
উইলিয়াম ব্লেক ছিলেন একজন ইংরেজ কবি, চিত্রশিল্পী ও প্রিন্টমেকার
তাঁর জন্ম ১৭৫৭ সালে লন্ডনে
তিনি ছোটবেলায় থেকেই ধর্ম, কল্পনা ও শিল্পের প্রতি গভীর আকর্ষণ অনুভব করতেন
তাঁর বাবা ছিলেন এক মোজা ব্যবসায়ী এবং তিনি পরিবারের পাঁচ সন্তানের একজন ছিলেন
শৈশব থেকেই তিনি দৃশ্যমান কল্পনা বা ভিশন দেখতে পেতেন বলে দাবি করতেন
তিনি বলতেন যে ফেরেশতা ও আধ্যাত্মিক সত্তাদের তিনি নিজের চোখে দেখতে পান
তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা খুব সীমিত ছিল, কিন্তু তিনি শিল্পকলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন
চৌদ্দ বছর বয়সে তিনি একজন খোদাই শিল্পীর শিক্ষানবিশ হন
পরে রয়্যাল একাডেমিতে কিছু সময়ের জন্য পড়াশোনা করেন
তাঁর শিল্পের প্রভাব আসে বাইবেল, রাফায়েল, মাইকেলেঞ্জেলো ও দান্তে থেকে
ব্লেক ছিলেন একজন রহস্যবাদী ও দূরদর্শী শিল্পী
তিনি শিল্প ও ধর্মকে এক অবিচ্ছেদ্য আধ্যাত্মিক ভাষা হিসেবে দেখতেন
তিনি বিবাহ করেছিলেন ক্যাথেরিন বুশের সঙ্গে
ক্যাথেরিন তাঁর শিল্পজীবনের সহযোগী ছিলেন এবং তাঁকে প্রিন্টমেকিংয়ে সহায়তা করতেন
ব্লেকের কবিতা ও চিত্রে প্রায়ই দেখা যায় আধ্যাত্মিক জগতের প্রতিফলন
তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ “Songs of Innocence and of Experience” প্রকাশিত হয় ১৭৯৪ সালে
এই গ্রন্থে মানবজীবনের নিষ্কলুষতা ও অভিজ্ঞতার দ্বৈততা তুলে ধরা হয়েছে
তাঁর কবিতা “The Tyger” ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম বিখ্যাত কবিতা
“The Lamb” কবিতায় তিনি ঈশ্বরের সৃষ্টির কোমল রূপ দেখিয়েছেন
“The Tyger” কবিতায় ঈশ্বরের সৃষ্টির ভয়ংকর দিকটি প্রকাশ করেছেন
ব্লেক নিজের বইগুলো হাতের মুদ্রণ প্রক্রিয়ায় তৈরি করতেন
তাঁর ব্যবহৃত পদ্ধতির নাম ছিল “Illuminated Printing”
এই পদ্ধতিতে তিনি লেখাকে ও চিত্রকে একসঙ্গে খোদাই করতেন
তাঁর কাজগুলো প্রায়ই ধাতব পাতের উপর অঙ্কিত ও রঙিন হতো
ব্লেকের শিল্পধারা ছিল তার সময়ের থেকে অনেক এগিয়ে
তিনি রোমান্টিক যুগের পূর্বসূরি হিসেবে বিবেচিত
তাঁর শিল্পে প্রতীক ও পুরাণের গভীর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়
ব্লেকের রচনায় বারবার দেখা যায় বিদ্রোহ ও স্বাধীনতার থিম
তিনি রাষ্ট্র, গির্জা ও ভণ্ড ধর্মীয় কর্তৃত্বের বিরোধিতা করতেন
তাঁর কাজ সামাজিক ন্যায় ও ব্যক্তিস্বাধীনতার পক্ষে কথা বলত
ব্লেকের বিশ্বাস ছিল মানব কল্পনাই ঈশ্বরের প্রতিফলন
তিনি বলেছিলেন “Imagination is the body of God”
তাঁর মতে কল্পনা ছিল জাগতিক সত্যের চেয়েও গভীর
ব্লেক ছিলেন একাধারে কবি, ভবিষ্যদ্রষ্টা ও শিল্পতাত্ত্বিক
তিনি ঈশ্বরকে কেবল বাইরের শক্তি নয়, মানবচেতনার ভিতরেও দেখতেন
তাঁর শিল্পে স্বপ্ন, আকাশ, দেবদূত, আত্মা, ও মানবসংগ্রামের প্রতীক ফুটে ওঠে
তিনি বিশ্বাস করতেন মানুষের অন্তর্জগৎই ঈশ্বরের রাজ্য
তাঁর কাজের মধ্যে ধর্মীয় রহস্যবাদ ও ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি মিলেমিশে আছে
ব্লেকের অন্যতম প্রভাবশালী সৃষ্টি হলো “The Marriage of Heaven and Hell”
এই রচনায় তিনি নৈতিক দ্বন্দ্বকে ভেঙে এক ঐক্যবোধ প্রতিষ্ঠা করেন
তাঁর এই রচনায় প্রথাগত স্বর্গ-নরকের ধারণা উল্টে দেওয়া হয়েছে
তিনি বলেছিলেন, “Without Contraries is no progression”
অর্থাৎ, বিপরীত শক্তির সংঘর্ষ ছাড়া কোনো উন্নতি সম্ভব নয়
ব্লেকের আরেকটি বিখ্যাত কাজ “Jerusalem: The Emanation of the Giant Albion”
এই কাজটি তাঁর বৃহত্তম ও জটিলতম আধ্যাত্মিক কাব্য
তাঁর সৃষ্ট চরিত্র “Urizen”, “Los”, “Orc” ইত্যাদি মানুষের মানসিক ও নৈতিক অবস্থা প্রকাশ করে
ব্লেক নিজের পুরাণজগৎ সৃষ্টি করেছিলেন, যাকে বলা হয় “Blakean Mythology”
তাঁর চিন্তাধারা অনেকটা প্রাচ্য দার্শনিক ও গnostic ধর্মের মতো গভীর
ব্লেকের চিত্রে শরীরের ভঙ্গি, অভিব্যক্তি ও আলোর ব্যবহার অত্যন্ত নাটকীয়
তাঁর রেখা ছিল স্পষ্ট ও প্রতীকবহ
তিনি প্রাকৃতিক বাস্তবতার চেয়ে আত্মার সত্যকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন
তাঁর শিল্পে প্রায়ই দেখা যায় মানবের মুক্তির লড়াই
ব্লেকের জীবন ছিল আর্থিক কষ্টে পরিপূর্ণ
তাঁর জীবদ্দশায় তিনি তেমন স্বীকৃতি পাননি
তাঁর সমসাময়িকেরা তাঁকে প্রায়ই “পাগল” বলে অভিহিত করত
তবে মৃত্যুর পর তাঁকে এক আধ্যাত্মিক প্রতিভা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়
তিনি মারা যান ১৮২৭ সালে লন্ডনে
তাঁর মৃত্যুর আগে তিনি শান্তভাবে ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলছিলেন বলে শোনা যায়
তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আঁকতেন ও কবিতা লিখতেন
ক্যাথেরিন তাঁর মৃত্যুর পর বলেছিলেন যে তিনি তাঁর সঙ্গে ফেরেশতাদের দেখেছিলেন
উইলিয়াম ব্লেক আজ পশ্চিমা সাহিত্যের অন্যতম মহৎ কবি হিসেবে বিবেচিত
তিনি আধুনিক প্রতীকবাদ, রোমান্টিসিজম ও ভিশনারি শিল্পের অগ্রদূত
তাঁর চিন্তাধারা প্রভাব ফেলেছে ইয়েটস, এলিয়ট, বোদলেয়ার, অ্যালেন গিন্সবার্গ প্রমুখের উপর
ব্লেকের কাজ ইংরেজ কবিতায় আধ্যাত্মিক বিপ্লবের সূচনা করে
তাঁর কবিতা ও চিত্র মানবচেতনার অসীম সম্ভাবনা প্রকাশ করে
তিনি বিশ্বাস করতেন শিল্প ও ধর্ম একে অপরের সম্প্রসারণ
তাঁর ভাষা কখনও রহস্যময়, কখনও স্বচ্ছ ও কাব্যময়
ব্লেকের প্রিন্টে রঙের ব্যবহার সাহসী ও প্রতীকী
তাঁর শিল্পে মানবদেহকে আধ্যাত্মিক শক্তির বাহক হিসেবে দেখা যায়
তাঁর চোখে শিশু ছিল নিষ্পাপ আত্মার প্রতীক
তিনি দারিদ্র্য ও শোষণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেছেন
তাঁর “London” কবিতায় তিনি শহরের নৈতিক পতন ও বেদনা চিত্রিত করেছেন
ব্লেক ছিলেন মানবিক প্রেম, স্বাধীনতা ও কল্পনার কবি
তিনি বিশ্বাস করতেন যে “Every thing that lives is Holy”
তাঁর জীবনের মূল শিক্ষা ছিল আধ্যাত্মিক জাগরণ
তাঁর শিল্প আমাদের শিখায় যে বাস্তবতার সীমার বাইরে সত্য লুকিয়ে আছে
ব্লেক বলেছিলেন, “If the doors of perception were cleansed, everything would appear to man as it is, infinite”
তাঁর এই উক্তি পরবর্তীকালে এলডাস হাক্সলির বই The Doors of Perception-এর প্রেরণা দেয়
ব্লেক ছিলেন এমন এক শিল্পী যিনি একাই সৃষ্টি করেছিলেন এক মহাবিশ্ব
তিনি ছিলেন কল্পনার বিপ্লবী
তাঁর শিল্প ও কবিতা আজও মানব আত্মার মুক্তির আহ্বান জানায়
তিনি শিল্পকে দেখেছিলেন আত্মার প্রকাশ হিসেবে
উইলিয়াম ব্লেক আজও বিশ্বের অন্যতম প্রেরণাদায়ক শিল্প ও চিন্তার প্রতীক













