স্টিফেন কিং

আত্মজীবনীমূলক দিক

  • ব্যক্তিগত যাত্রা: কিং তার ছোটবেলা থেকে গল্প বলার প্রতি আকর্ষণ, দারিদ্র্য এবং প্রত্যাখ্যানের সংগ্রামের কথা উল্লেখ করেন, এবং কীভাবে লেখাকে জীবনের অপরিহার্য অংশ হিসেবে গ্রহণ করেন তা তুলে ধরেন।
  • গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত: তিনি তার শৈশব, প্রারম্ভিক ক্যারিয়ারের ভুলত্রুটি এবং সাফল্যের মুহূর্তগুলি শেয়ার করেন, যা তার লেখনী ও গল্প বলার ধরণ গঠনে ভূমিকা রাখে।
  • কষ্টের মাঝে স্থিতিশীলতা: বইয়ের একটি অংশে কিং ১৯৯৯ সালে ঘটে যাওয়া তার গুরুতর দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে লেখাকে তিনি নিজের সুস্থতার একটি উপায় হিসেবে দেখেন।

লেখনী কৌশল ও পরামর্শ

  • দাঁড়ির বাক্স (টুলবক্স): কিং লেখকের “টুলবক্স” ধারণা উপস্থাপন করেন – যেখানে শব্দভান্ডার, ব্যাকরণ ও স্টাইলের মত মৌলিক দক্ষতাগুলি অন্তর্ভুক্ত। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই দক্ষতাগুলি নিয়মিত পড়াশোনা ও অনুশীলনের মাধ্যমে উন্নত করা প্রয়োজন।
  • লেখার প্রক্রিয়া: তিনি লিখনের প্রাথমিক খসড়া থেকে শুরু করে সম্পাদনা ও পুনঃলিখনের প্রক্রিয়া তুলে ধরেন, যা একটি স্পষ্ট এবং কার্যকর গল্প তৈরির জন্য অপরিহার্য।
  • স্বচ্ছতা ও প্রামাণিকতা: কিং লেখকদের সততা এবং সরলতার আহ্বান জানান, অতিরিক্ত বিশেষণ ও অপ্রয়োজনীয় ভাস্কর্যতা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন এবং লেখাকে প্রামাণিকভাবে উপস্থাপন করার কথা বলেন।
  • অনুশীলন ও রুটিন: বইটি নিয়মিত লেখার গুরুত্ব এবং লেখাকে একটি শিল্প হিসেবে মেনে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে, যা একটি পেশাদারিত্বের মতো যত্ন ও প্রতিশ্রুতি দাবি করে।

মূল শিক্ষা

  • অভ্যাস দ্বারা শেখা: লেখার উৎকর্ষতা অর্জনের জন্য ধারাবাহিক অনুশীলন, অধ্যবসায় ও ভুল থেকে শেখার মানসিকতা অপরিহার্য।
  • পড়ার গুরুত্ব: ভালো লেখার জন্য বিভিন্ন লেখকের রচনা পড়া ও বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত জরুরি, যা নতুন কৌশল ও স্টাইল শেখার সহায়ক।
  • সৃজনশীলতা ও কাঠামোর সমন্বয়: সৃজনশীলতা অপরিহার্য হলেও, লেখাকে পাঠযোগ্য ও আকর্ষণীয় করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম এবং মৌলিক কাঠামোর প্রতি বাধ্যতা থাকা উচিত।

সারাংশে, অন রাইটিং গ্রন্থটি উদীয়মান লেখকদের জন্য অনুপ্রেরণামূলক গাইড হিসেবে কাজ করে, যেখানে স্টিফেন কিং তার ব্যক্তিগত গল্পের মাধ্যমে ও লেখনী কৌশলের প্রাসঙ্গিক পরামর্শ দিয়ে লেখার গুরুত্ব ও প্রক্রিয়া তুলে ধরেছেন। এটি গল্প বলার প্রেম, অধ্যবসায়ের শক্তি ও লেখার প্রকৃত শিল্পকে উদযাপন করে।

“Bird by Bird: Some Instructions on Writing and Life” হল Anne Lamott-এর রচিত এমন একটি বই যা লেখালেখির ব্যবহারিক পরামর্শ এবং জীবনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে গভীর দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।

মূল বিষয়বস্তু এবং অন্তর্দৃষ্টি:

  • অপূর্ণতাকে গ্রহণ করা:
    Lamott “শিটটির প্রথম খসড়া” ধারণার মাধ্যমে লেখকদের মনে করিয়ে দেন যে, প্রথম খসড়া নিখুঁত হতে হবে না। এই ধারণাটি সৃষ্টিশীলতাকে মুক্তি দেয় এবং লেখকদের নিখুঁততাবাদের চাপ থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।
  • ধাপে ধাপে পদ্ধতি:
    “Bird by Bird” শিরোনামটি এসেছে Lamott-এর শৈশবের একটি স্মৃতি থেকে, যেখানে তার ভাই একটি স্কুল প্রজেক্টে পাখি নিয়ে অসহায় অবস্থায় পড়েছিল। তার পিতার উপদেশ ছিল—একেকটি পাখি একে একে সম্পাদন করো। এই সহজ পরামর্শটি বড় ও জটিল কাজকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে মোকাবেলা করার অনুপ্রেরণা জোগায়।
  • সততা এবং ভঙ্গুরতা:
    বইজুড়ে Lamott তার ব্যক্তিগত গল্প শেয়ার করেন যেখানে তিনি আত্ম-সন্দেহ, ব্যর্থতা এবং সৃষ্টিশীল প্রক্রিয়ার সংগ্রামের কথা বলেন। এই খোলামেলা অভিজ্ঞতা লেখকদের জন্য অনুপ্রেরণা স্বরূপ, যারা জীবনের বা পেশাগত বাধার মোকাবেলা করছেন।
  • প্রায়োগিক লেখালেখির পরামর্শ:
    বইটি লেখালেখির বিভিন্ন দিক—যেমন চরিত্র নির্মাণ, কাহিনী গঠন এবং পুনঃলিখনের গুরুত্ব—সম্পর্কে স্পষ্ট পরামর্শ দেয়। ছোট ছোট লিখন অনুশীলনের মাধ্যমে বড় প্রকল্পে অগ্রসর হওয়ার প্রক্রিয়াটিই এখানে তুলে ধরা হয়েছে।
  • লেখালেখির মাধ্যমে জীবনের পাঠ:
    “Bird by Bird” শুধুমাত্র লেখালেখির টিপস নয়; এটি জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপে ধৈর্য, অধ্যবসায় এবং অপ্রতুলতাকে গ্রহণ করার দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। Lamott-এর উপদেশগুলো কেবল একটি গল্প তৈরির প্রক্রিয়াকেই নয়, বরং জীবনের বিভিন্ন দিককে পরিচালনা করার একটি পথনির্দেশক হিসেবেও কাজ করে।

“Story: Substance, Structure, Style and the Principles of Screenwriting” – রবার্ট ম্যাককি

রবার্ট ম্যাককিরের Story বইটি স্ক্রিনরাইটিংয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। এটি কেবল সিনেমার জন্য নয়, উপন্যাস, নাটক এবং টেলিভিশনের গল্প বলার মূল নীতিগুলোর গভীর বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে। এই বইটি লেখকদের জন্য একটি গাইড, যা তাদের গল্প নির্মাণের কাঠামো বুঝতে সাহায্য করে।

পর্ব ১: লেখক এবং গল্প বলার শিল্প
অধ্যায় ১: গল্পের সমস্যা

ম্যাককি ব্যাখ্যা করেন কিভাবে আধুনিক সিনেমার অনেক গল্প দুর্বল হয়ে উঠেছে, কারণ এগুলো গভীরতা এবং মৌলিকতা হারাচ্ছে। তিনি বলেন, গল্প বলা একটি প্রাচীন শিল্প যা কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যয়নের মাধ্যমে শেখা যায়। লেখকের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত অর্থবহ অভিজ্ঞতা তৈরি করা, শুধুমাত্র ফর্মুলা অনুসরণ করা নয়।

অধ্যায় ২: গল্পের মূল ভাবনা

গল্পের মূল ভিত্তি বা কন্ট্রোলিং আইডিয়া (Controlling Idea) কীভাবে একটি শক্তিশালী আবেগ সৃষ্টি করে, তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রতিটি গল্পকে একটি গভীর পরিবর্তন বা দ্বন্দ্বের উপর ভিত্তি করে তৈরি হতে হবে, যা মূল চরিত্রের বিকাশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়।

অধ্যায় ৩: গল্পের কাঠামো

এখানে স্ক্রিনরাইটিংয়ের প্রাথমিক কাঠামো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • তিন-অঙ্কের কাঠামো (Three-Act Structure)
  • কারণ এবং ফলাফলের সম্পর্ক (Causality)
  • নাটকীয় উত্তেজনার বিকাশ (Dramatic Progression)

একটি ভালো গল্পে ঘটনাগুলো কেবল এলোমেলোভাবে সাজানো থাকে না, বরং একটির সাথে অন্যটির গভীর সংযোগ থাকে।


পর্ব ২: গল্পের উপাদানসমূহ
অধ্যায় ৪: গল্পের মূল ভিত্তি

গল্প গঠনের তিনটি স্তর আলোচনা করা হয়েছে:

  1. বিট (Beat) – ছোট ছোট নাটকীয় ঘটনাগুলি যা চরিত্রের আবেগ প্রকাশ করে।
  2. দৃশ্য (Scene) – এমন একটি অংশ, যেখানে চরিত্রের জীবনে পরিবর্তন আসে।
  3. সিকোয়েন্স (Sequence) – একাধিক দৃশ্য একসাথে মিলে একটি ছোট গল্পের মতো কাজ করে, যা বড় কাহিনির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
অধ্যায় ৫: কাঠামোর বিভিন্ন ধরন

ম্যাককি গল্পের কাঠামোগুলো তিনটি প্রধান ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছেন:

  1. আর্চপ্লট (Archplot) – প্রচলিত হলিউড ধাঁচের গল্প যেখানে নায়ক একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হয়।
  2. মিনিপ্লট (Miniplot) – কম সংলাপ এবং অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বভিত্তিক গল্প, যা সাধারণত আর্ট ফিল্মে দেখা যায়।
  3. অ্যান্টিপ্লট (Antiplot) – ভাঙা কাঠামোর, অপ্রথাগত এবং পরীক্ষামূলক গল্প বলা হয় এখানে।
অধ্যায় ৬: বিরোধী শক্তির নীতি

একটি আকর্ষণীয় গল্প তৈরির জন্য সংঘাত বা বিরোধী শক্তি (Conflict/Antagonism) গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি শক্তিশালী গল্পে একটি প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী বা সমস্যা থাকা দরকার, যা মূল চরিত্রকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করে।

অধ্যায় ৭: ইনসাইটিং ইনসিডেন্ট (Inciting Incident)

গল্পের সেই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত যেখানে মূল চরিত্রের স্বাভাবিক জীবন বিঘ্নিত হয় এবং গল্প শুরু হয়। এটি দর্শকের আগ্রহ ধরে রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পর্ব ৩: গল্প নকশার মূলনীতি
অধ্যায় ৮: অধ্যায়ের নকশা (Act Design)

তিন-অঙ্কের কাঠামোর বিশদ ব্যাখ্যা:

  • প্রথম অঙ্ক: চরিত্র ও সমস্যা উপস্থাপন।
  • দ্বিতীয় অঙ্ক: প্রধান দ্বন্দ্ব ও চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়।
  • তৃতীয় অঙ্ক: দ্বন্দ্বের সমাধান ও পরিণতি।
অধ্যায় ৯: দৃশ্য নির্মাণ (Scene Design)

প্রত্যেকটি দৃশ্যের একটি স্পষ্ট উদ্দেশ্য থাকা উচিত এবং এটি গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। লেখকদের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কীভাবে দৃশ্যের মধ্যে নাটকীয় মোড় বা Turning Point তৈরি করতে হয়।

অধ্যায় ১০: দৃশ্য সংযোগ (Scene Weaving)

একটি দৃশ্য কখনোই আলাদা করে কাজ করে না, এটি পূর্ববর্তী দৃশ্যের উপর নির্ভর করে এবং পরবর্তী দৃশ্যের জন্য ভিত্তি তৈরি করে। এখানে সাবটেক্সট, গতি এবং দৃশ্যের সম্পর্কের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

অধ্যায় ১১: সংকট, ক্লাইম্যাক্স ও পরিণতি (Crisis, Climax, Resolution)
  • সংকট (Crisis): মূল চরিত্রের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণের মুহূর্ত।
  • ক্লাইম্যাক্স (Climax): গল্পের সবচেয়ে আবেগপূর্ণ এবং উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত।
  • পরিণতি (Resolution): গল্পের শেষ অধ্যায়, যেখানে দর্শক বা পাঠকের জন্য একটি অর্থবহ উপসংহার তৈরি করা হয়।
পর্ব ৪: লেখক হিসেবে কাজের ধরণ
অধ্যায় ১২: লেখকের পদ্ধতি

লেখক কিভাবে তার গল্পের ধারণা তৈরি করবেন এবং কাজের পরিকল্পনা করবেন, সে সম্পর্কে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। গল্পের পুনর্লিখন (Rewriting) এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ চিন্তাভাবনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

অধ্যায় ১৩: লেখকের মানসিকতা

লেখক হিসেবে সফল হতে হলে ধৈর্য, অধ্যবসায়, এবং নিয়মিত অনুশীলনের প্রয়োজন। ম্যাককি পরামর্শ দেন, কেবল সহজাত প্রতিভার উপর নির্ভর করা উচিত নয়, বরং গল্প বলার মূলনীতি ও পদ্ধতিগুলো শেখার জন্য কঠোর পরিশ্রম করা উচিত।

রবার্ট ম্যাককির Story কেবল একটি স্ক্রিনরাইটিং বই নয়, এটি গল্প বলার বিজ্ঞান এবং শিল্পের এক গভীর বিশ্লেষণ। তিনি দেখিয়েছেন যে, সফল গল্প বলার জন্য কাঠামো, সংঘাত এবং চরিত্রের বিকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।এই বইটি নতুন এবং অভিজ্ঞ লেখকদের জন্য সমানভাবে উপযোগী, কারণ এটি কেবল নিয়ম শেখায় না, বরং গল্পের অন্তর্নিহিত গুণাবলী বোঝার জন্য পাঠককে উৎসাহিত করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top