Raphael Raffaello Sanzio

রাফায়েল (Raffaello Sanzio)

রাফায়েলের পূর্ণ নাম ছিল Raffaello Sanzio da Urbino।

তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৪৮৩ সালের ৬ এপ্রিল, ইতালির উরবিনো (Urbino) শহরে।

তার পিতার নাম Giovanni Santi, যিনি ছিলেন একজন চিত্রশিল্পী ও কবি।

তার মায়ের নাম ছিল Magia di Battista Ciarla।

ছোটবেলা থেকেই রাফায়েল শিল্পের পরিবেশে বেড়ে ওঠেন।

তার পিতা তাকে অল্প বয়স থেকেই আঁকা শেখানো শুরু করেন।

মাত্র ১১ বছর বয়সে রাফায়েল তার পিতাকে হারান।

এরপর তিনি Perugino নামক বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর তত্ত্বাবধানে শিক্ষানবিশ হন।

পেরুজিনো ছিলেন রাফায়েলের প্রথম গুরু।

তিনি পেরুজিনোর থেকে শৈল্পিক রচনা, রঙের ব্যবহার ও কম্পোজিশনের কৌশল শিখেছিলেন।

রাফায়েলের প্রাথমিক কাজগুলিতে পেরুজিনোর প্রভাব স্পষ্টভাবে দেখা যায়।

তার প্রথম উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল The Marriage of the Virgin (1504)।

এই চিত্রকর্মে নিখুঁত পার্সপেকটিভ ও মানবমূর্তি বিন্যাস লক্ষ্য করা যায়।

রাফায়েলের শৈলী ছিল শান্ত, সুষম ও মার্জিত।

তিনি লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ও মাইকেলেঞ্জেলো থেকে অনুপ্রাণিত হন।

১৫০৪ সালে তিনি ফ্লোরেন্সে চলে যান।

ফ্লোরেন্সে এসে তিনি রেনেসাঁর শিল্পচর্চার কেন্দ্রে প্রবেশ করেন।

সেখানে তিনি দা ভিঞ্চির sfumato ও মাইকেলেঞ্জেলোর dynamic form অনুকরণ করেন।

তার শিল্পে মানবতাবাদ ও সৌন্দর্যের ভারসাম্য অনন্য ছিল।

ফ্লোরেন্সে তার তৈরি অন্যতম বিখ্যাত চিত্র Madonna del Granduca।

তিনি “Madonna” সিরিজে একাধিক চিত্র অঙ্কন করেন।

রাফায়েলের মাদোনা চিত্রগুলো ধর্মীয় হলেও মাতৃত্ব ও মানবতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

Madonna of the Goldfinch, La Belle Jardinière, এবং Madonna della Seggiola তার উল্লেখযোগ্য মাদোনা চিত্র।

তার চিত্রগুলির মুখমণ্ডলে সবসময় প্রশান্তি ও কোমলতা থাকে।

১৫০৮ সালে তিনি পোপ জুলিয়াস II-এর আহ্বানে রোমে যান।

রোমে গিয়ে তিনি ভ্যাটিকানের জন্য অসাধারণ চিত্রকর্ম তৈরি করেন।

তার সবচেয়ে বিখ্যাত কাজগুলির মধ্যে অন্যতম The School of Athens।

এই চিত্রকর্মটি Stanza della Segnatura নামের কক্ষে অঙ্কিত।

“The School of Athens”-এ প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকদের এক বিশাল সমাবেশ দেখা যায়।

এতে প্লেটো, অ্যারিস্টটল, সক্রেটিস প্রমুখকে প্রতীকীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

প্লেটোর মুখমণ্ডল রাফায়েল লিওনার্দো দা ভিঞ্চির অনুরূপ এঁকেছিলেন।

অ্যারিস্টটলের মুখটি মাইকেলেঞ্জেলোর অনুরূপ বলা হয়।

এই চিত্রে রাফায়েল নিজের প্রতিকৃতিও অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।

তার চিত্রগুলিতে স্থাপত্যের নিখুঁত অনুপাত ও গভীরতা লক্ষ্য করা যায়।

ভ্যাটিকান প্রাসাদের জন্য তিনি চারটি “Stanze” বা কক্ষ অলঙ্কৃত করেন।

সেগুলি হলো — Stanza della Segnatura, Stanza d’Eliodoro, Stanza dell’Incendio, এবং Sala di Costantino।

এসব কক্ষে রাফায়েলের fresco শৈলীতে অসাধারণ কাজ দেখা যায়।

তার “Disputa” চিত্রটি ধর্মীয় ও দার্শনিক বিতর্কের প্রতীক।

“Parnassus” চিত্রে কবিদের স্বর্গীয় জগৎ চিত্রিত।

তিনি প্রাচীন ও আধুনিক দর্শনের মধ্যে সংলাপ সৃষ্টিতে পারদর্শী ছিলেন।

রাফায়েল ছিলেন “High Renaissance”-এর অন্যতম স্তম্ভ।

তিনি রেনেসাঁর তিন মহান শিল্পীর একজন — দা ভিঞ্চি, মাইকেলেঞ্জেলো, রাফায়েল।

তার শিল্পে ভারসাম্য, সুষমা ও মানবতা একত্রে প্রকাশ পায়।

তিনি কেবল চিত্রশিল্পীই নন, স্থপতিও ছিলেন।

রাফায়েল St. Peter’s Basilica-এর স্থাপত্য পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন।

১৫১৪ সালে পোপ লিও X তাকে ভ্যাটিকানের প্রধান স্থপতি নিযুক্ত করেন।

তিনি Villa Madama প্রাসাদের নকশাও করেন।

তার স্থাপত্যকর্মে ক্লাসিক্যাল রোমান অনুপ্রেরণা দেখা যায়।

তিনি প্রত্নতত্ত্বে আগ্রহী ছিলেন এবং প্রাচীন রোম সংরক্ষণে কাজ করেন।

তিনি “Surveyor of Antiquities” পদে কাজ করেন।

রাফায়েলের সহযোগীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন Giulio Romano ও Gianfrancesco Penni।

তার নেতৃত্বে একটি বড় শিল্প কর্মশালা পরিচালিত হতো।

অনেক শিক্ষার্থী তার কৌশল অনুসরণ করে বিখ্যাত হন।

তিনি এক প্রজন্মের শিল্পীদের জন্য আদর্শ হয়ে ওঠেন।

তার প্রভাব ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি অসংখ্য পোর্ট্রেটও অঙ্কন করেছেন।

তার বিখ্যাত প্রতিকৃতি চিত্রগুলির মধ্যে রয়েছে Portrait of Baldassare Castiglione।

এই চিত্রে মানবমনের গভীরতা ও সৌন্দর্য উন্মোচিত হয়েছে।

তিনি La Fornarina নামক চিত্রে এক তরুণীর রূপ ও আবেগ প্রকাশ করেছেন।

“La Fornarina” সম্ভবত তার প্রেমিকা Margherita Luti-এর প্রতিকৃতি।

রাফায়েল তার জীবনে কখনও বিবাহ করেননি।

তার প্রেমিকা মার্গারিটার সঙ্গে তার সম্পর্ক কিংবদন্তিতুল্য।

তিনি ছিলেন অত্যন্ত সামাজিক ও জনপ্রিয় শিল্পী।

পোপ ও রাজন্যবর্গ তার শিল্পের ভক্ত ছিলেন।

তিনি শিল্প ও ধর্মকে একত্রে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন।

তার চিত্রে ধর্মীয় দৃশ্যগুলো মানবিক আবেগে ভরা।

তার রঙ ব্যবহারে কোমলতা ও উজ্জ্বলতা সমন্বিত।

তিনি আলো ও ছায়ার নিখুঁত ভারসাম্য ব্যবহার করতেন।

তার কম্পোজিশন সবসময় সুষম ও জ্যামিতিক নিখুঁততায় গঠিত।

রাফায়েলকে বলা হয় “The Prince of Painters”।

তার শিল্পচর্চা মানবতার সৌন্দর্য প্রকাশে নিবেদিত ছিল।

রাফায়েল ছিলেন শান্ত প্রকৃতির মানুষ।

তিনি কখনও বিতর্কে জড়াননি, বরং সকলের প্রিয় ছিলেন।

মাইকেলেঞ্জেলো ও তার মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকলেও পারস্পরিক শ্রদ্ধা ছিল।

রাফায়েল ছিলেন রোমান ঐতিহ্যের এক পুনর্জাগরণকারী।

তিনি প্রাচীন শিল্পের সৌন্দর্য আধুনিকভাবে উপস্থাপন করেন।

তার শিল্পে দার্শনিক গভীরতা ও নান্দনিক পরিমিতি একত্রে মিশে গেছে।

তার প্রভাব “Mannerism” যুগের শিল্পীদের উপরও পড়েছিল।

তিনি এক অর্থে রেনেসাঁ মানবতার প্রতীক।

রাফায়েলের মৃত্যুকে শিল্পজগত এক অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে দেখেছিল।

তিনি মারা যান ১৫২০ সালের ৬ এপ্রিল, ঠিক তার জন্মদিনেই।

মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল মাত্র ৩৭ বছর।

তার মৃত্যু আকস্মিক ছিল, সম্ভবত জ্বরে আক্রান্ত হয়ে।

রোম শহর তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় শোকাহত হয়েছিল।

তাকে সমাহিত করা হয় Pantheon, Rome-এ।

তার সমাধি পাথরে লেখা আছে:
“Here lies Raphael, by whom Nature feared to be outdone while he lived, and when he died, feared she would die with him.”

তার জীবদ্দশায় তিনি প্রায় ২০০টিরও বেশি চিত্র অঙ্কন করেন।

তার কাজগুলো ইউরোপের প্রধান মিউজিয়ামে সংরক্ষিত।

বিশেষত Vatican Museums, Louvre, Uffizi Gallery, ও National Gallery, London-এ তার চিত্রকর্ম আছে।

তার শিল্প মানব আবেগ, বুদ্ধি ও সৌন্দর্যের এক অমর সংলাপ।

রাফায়েলের শিল্প ইউরোপীয় একাডেমিক শিল্পের ভিত্তি স্থাপন করে।

তার শৈলী ১৭-১৮ শতকের শিল্পীদের দিকনির্দেশনা দেয়।

ফরাসি “Neoclassical” আন্দোলনেও তার প্রভাব গভীর।

তার “The School of Athens” আজও বুদ্ধিবৃত্তিক শিল্পের শ্রেষ্ঠ প্রতীক।

তিনি শিল্পে “দেবীয় অনুপাত” ও মানবিক সুষমার ধারণা প্রতিষ্ঠা করেন।

রাফায়েল ছিলেন শিল্পের “সমন্বয়কারী”—যিনি বিভিন্ন শৈলীকে একত্রে মিশিয়েছিলেন।

তার জীবনের সংক্ষিপ্ত সময়েই তিনি অমর খ্যাতি অর্জন করেন।

তার মৃত্যু রেনেসাঁ যুগের এক অধ্যায়ের সমাপ্তি নির্দেশ করে।

রাফায়েলের শিল্প মানবতার সৌন্দর্য ও জ্ঞানের মহিমার প্রতীক।

আজও রাফায়েলকে স্মরণ করা হয় — “The Divine Painter of the Renaissance” নামে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top