Bartolomé Esteban Murillo

Bartolomé Esteban Murillo

বার্তোলোমে এস্তেবান মুরিয়ো ছিলেন ১৭শ শতকের অন্যতম বিখ্যাত স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী।

তিনি মূলত ধর্মীয় ও মানবিক চিত্রকর্মের জন্য পরিচিত ছিলেন।

মুরিয়ো জন্মগ্রহণ করেন ১৬১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে, স্পেনের সেভিল শহরে।

তাঁর পুরো নাম ছিল Bartolomé Esteban Murillo।

তিনি বারোক যুগের শেষ দিকের প্রধান শিল্পীদের একজন ছিলেন।

মুরিয়ো বিশেষ করে “ইম্যাকুলেট কনসেপশন” বা “নিষ্কলঙ্ক গর্ভধারণ”-এর দৃশ্যচিত্রের জন্য প্রসিদ্ধ।

তাঁর শৈলী ছিল কোমল, উজ্জ্বল, আলোকিত ও মানবিক আবেগপূর্ণ।

মুরিয়ো ছিলেন আন্দালুসিয়ান অঞ্চলের সবচেয়ে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী।

তাঁর পিতার নাম ছিল Gaspar Esteban, যিনি একজন নাপিত ছিলেন।

তাঁর মায়ের নাম ছিল María Pérez Murillo।

মুরিয়োর জন্মের কিছুদিন পরই তাঁর বাবা-মা মারা যান।

তিনি তাঁর চাচার তত্ত্বাবধানে বড় হন।

সেভিলের স্থানীয় এক শিল্পী Juan del Castillo-এর কাছে তিনি চিত্রকলার প্রাথমিক শিক্ষা নেন।

তাঁর প্রথম দিকের কাজগুলোতে কাস্তিলোর প্রভাব স্পষ্ট ছিল।

তিনি জীবনের প্রায় পুরোটা সময় সেভিল শহরেই কাটিয়েছেন।

মুরিয়ো ধর্মীয় বিষয়বস্তুকে সহজবোধ্য ও মানবিক রূপে উপস্থাপন করতেন।

তাঁর চিত্রগুলোতে প্রায়ই আলো ও রঙের কোমল ব্যবহারে এক ধরনের স্বপ্নময় পরিবেশ তৈরি হত।

মুরিয়ো “মাদোনা অ্যান্ড চাইল্ড” ধরনের ছবিতে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন।

তিনি স্প্যানিশ বারোক যুগে Velázquez ও Zurbarán-এর সমসাময়িক ছিলেন।

তবে তাঁর শৈলী তুলনামূলকভাবে কোমল ও মানবিক ছিল।

১৬৪৫ সালে তিনি তাঁর প্রথম প্রধান কমিশন পান — সেভিলের Convento de San Francisco-এর জন্য।

এই প্রকল্পের জন্য তিনি বহু বিখ্যাত ধর্মীয় দৃশ্য আঁকেন।

“The Young Beggar” (El Joven Mendigo) তাঁর অন্যতম বিখ্যাত অ-ধর্মীয় চিত্রকর্ম।

এই ছবিতে এক কিশোর ভিখারির বাস্তবিক ও সহানুভূতিশীল চিত্র ফুটে উঠেছে।

মুরিয়োর কাজগুলিতে প্রায়ই দরিদ্র, শিশু ও সাধারণ মানুষের জীবনচিত্র দেখা যায়।

এটি তাঁর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।

তিনি স্প্যানিশ সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর প্রতি গভীর সহানুভূতি পোষণ করতেন।

তাঁর শিল্পে করুণা, মাতৃত্ব, নিষ্পাপতা এবং আধ্যাত্মিকতা স্পষ্ট।

১৬৪৮ সালে তিনি বিয়ে করেন Beatriz Cabrera y Villalobos-কে।

তাঁদের কয়েকটি সন্তান ছিল, তবে কিছু শিশু অল্প বয়সেই মারা যায়।

তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু ১৬৬৩ সালে হয়, যা মুরিয়োর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে।

এই সময়ের পর তাঁর কাজ আরও বিষণ্ণ ও শান্ত প্রকৃতির হয়ে ওঠে।

তিনি Seville Painters’ Guild-এর অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন।

১৬৬০ সালে তিনি Academia de Bellas Artes de Sevilla-এর প্রতিষ্ঠাতাদের একজন।

এই অ্যাকাডেমি সেভিলের তরুণ শিল্পীদের প্রশিক্ষণের সুযোগ দেয়।

মুরিয়োর শৈলীকে অনেক শিল্প ইতিহাসবিদ “সেন্টিমেন্টাল রিয়ালিজম” বলে অভিহিত করেন।

তাঁর চিত্রে প্রায়ই স্বর্গীয় আলো দেখা যায়, যা ধর্মীয় অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলে।

তিনি রঙের সূক্ষ্ম বৈচিত্র্য ও আলো-ছায়ার মেলবন্ধন দক্ষভাবে ব্যবহার করতেন।

তাঁর বিখ্যাত চিত্র “The Immaculate Conception of the Escorial” এখন মাদ্রিদের প্রাদো মিউজিয়ামে সংরক্ষিত।

এই ছবিটি তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনাগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হয়।

তাঁর “The Holy Family with a Little Bird” চিত্রটিও ব্যাপক প্রশংসিত।

এতে শিশুযীশু ও মেরির স্নেহময় সম্পর্ক ফুটে ওঠে।

মুরিয়ো “মাদোনা” বিষয়টি নিয়ে প্রায় ২০টিরও বেশি ভিন্ন সংস্করণে কাজ করেছেন।

তাঁর “Saint Anthony of Padua” চিত্রটি বিশেষভাবে জনপ্রিয়।

তাঁর শিল্পে রাফায়েল ও করাভাজ্জোর প্রভাবও লক্ষ্য করা যায়।

তিনি কখনও ইতালি ভ্রমণ করেননি, তবুও ইতালীয় বারোকের প্রভাব গ্রহণ করেছিলেন।

১৬৫০ সালের দিকে তাঁর খ্যাতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়।

তিনি অভিজাত ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উভয়ের কাছেই সমানভাবে প্রিয় ছিলেন।

তাঁর চিত্র সেভিলের বহু চার্চে স্থাপন করা হয়।

“The Vision of Saint Francis” তাঁর গভীর আধ্যাত্মিক চিত্রগুলির একটি।

তিনি বহুবার “Madonna and Child” আঁকেন বিভিন্ন রূপে।

তাঁর চিত্রে শিশুযীশুর মুখে নিষ্পাপতা ও মানবিকতা একসাথে ফুটে ওঠে।

মুরিয়ো সেভিলের পল্লীজীবন ও শিশুচিত্রের জন্যও বিখ্যাত ছিলেন।

“The Flower Girl” তাঁর সবচেয়ে প্রিয় সেক্যুলার চিত্রগুলির একটি।

তাঁর শিল্পে মিষ্টি আবেগ ও কোমল রঙ ব্যবহারের জন্য তাঁকে কেউ কেউ “Sentimental Painter” বলতেন।

মুরিয়োর কাজ ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর জীবদ্দশাতেই।

তিনি ফ্লেমিশ শিল্পী Anthony van Dyck-এর কাজও গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছিলেন।

মুরিয়ো ধর্মীয় শিক্ষার প্রসারে চিত্রকলাকে ব্যবহার করতেন।

তাঁর কাজ প্রায়ই চার্চের দেয়ালে মানুষের ভক্তি উদ্দীপিত করত।

১৬৭০-এর দশকে তাঁর শৈলীতে আরও মসৃণতা ও আবেগ বৃদ্ধি পায়।

তিনি ক্রমে আদর্শিক আধ্যাত্মিক দৃশ্যের দিকে ঝুঁকে পড়েন।

মুরিয়ো তাঁর সময়ের সবচেয়ে ধনী স্প্যানিশ চিত্রশিল্পীদের একজন হয়ে ওঠেন।

তাঁর ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন Francisco Meneses Osorio ও Sebastián Gómez।

মুরিয়োর প্রভাব পরবর্তী প্রজন্মের আন্দালুসিয়ান শিল্পীদের ওপর গভীর ছিল।

১৬৮২ সালে তিনি কাদিজ শহরে একটি চার্চের কাজ করতে যান।

সেখানে কাজ করার সময় তিনি সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন।

এই আঘাতের কারণে তিনি ১৬৮২ সালের এপ্রিল মাসে মারা যান।

মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল প্রায় ৬৪ বছর।

তাঁকে সেভিলের Santa Cruz Church-এ সমাহিত করা হয়।

তবে পরবর্তীতে সেই চার্চ ধ্বংস হয়ে যায়।

তাঁর কবরের সঠিক অবস্থান এখন অজানা।

মৃত্যুর পরেও তাঁর খ্যাতি কমেনি, বরং বেড়েছে।

১৮শ শতকে ইউরোপে তাঁর ধর্মীয় চিত্রগুলো ব্যাপকভাবে পুনর্মুদ্রিত হয়।

১৯শ শতকে ফ্রান্সে তাঁর চিত্র আবার জনপ্রিয়তা পায়।

প্যারিস, মাদ্রিদ, লন্ডন ও সেন্ট পিটার্সবার্গের বড় মিউজিয়ামগুলোতে তাঁর কাজ সংরক্ষিত আছে।

মুরিয়োর কাজ The Louvre, The Prado, Hermitage Museum-এ প্রদর্শিত।

তাঁর “The Beggar Boys” সিরিজ সামাজিক সহানুভূতির উদাহরণ।

তিনি দরিদ্র শিশুদের হাসিখুশি মুখে মানবতার বার্তা দিয়েছেন।

মুরিয়ো মানবিকতার এক শিল্পদূত হিসেবে স্মরণীয়।

তাঁর শিল্পে ধর্ম আর দৈনন্দিন জীবন একে অপরের সঙ্গে মিশে গেছে।

তাঁর রঙচয়ন নরম ও উজ্জ্বল, সাধারণত হালকা নীল, সোনালি ও ক্রিম টোনে।

তিনি আলোর মাধ্যমে আধ্যাত্মিকতা প্রকাশে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন।

তাঁর “The Adoration of the Shepherds” চিত্রটি স্নেহ ও ভক্তিতে পরিপূর্ণ।

তিনি ধর্মীয় প্রতীক ও বাস্তব মানবিক দৃশ্য একত্রে ফুটিয়ে তুলতে জানতেন।

তাঁর প্রতিটি চিত্রে একধরনের শান্ত আবহ বিরাজ করে।

মুরিয়োর শিল্পে করুণা, আশা ও ঈশ্বরপ্রেমের বার্তা পাওয়া যায়।

তাঁর শিল্প শৈলীকে “সেভিল স্কুল অব পেইন্টিং”-এর চূড়ান্ত রূপ বলা হয়।

মুরিয়োর চিত্র রেনেসাঁ ও বারোকের মধ্যে এক মেলবন্ধন।

তিনি নিজের শহর সেভিলকে ইউরোপীয় শিল্প মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করেন।

তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে ধর্মীয় ভক্তি স্পষ্ট।

তিনি বহু চার্চ ও মঠের পৃষ্ঠপোষকতায় কাজ করেছেন।

মুরিয়ো কখনও আত্মম্ভরী ছিলেন না; তিনি বিনয়ী ও সদয় মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

তিনি শিল্পকে সমাজসেবা হিসেবে দেখতেন।

তাঁর স্ত্রী বিয়াত্রিজের মৃত্যুর পর তিনি প্রায় নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করেন।

তাঁর শেষ দিকের কাজগুলোতে বিষণ্ণতা ও গভীর ভাবলেশ দেখা যায়।

মৃত্যুর পর তাঁর ছাত্ররা তাঁর নামকে অমর করে রাখে।

১৮৮২ সালে তাঁর মৃত্যুর ২০০ বছর পর সেভিল শহরে তাঁর স্মরণে বিশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।

আজও মুরিয়ো সেভিল শহরের প্রতীকী শিল্পী হিসেবে বিবেচিত।

তাঁর জীবন মানবিকতার শিল্পরূপের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

বার্তোলোমে এস্তেবান মুরিয়োকে বলা হয় — “The Painter of Grace and Humanity” — অনুগ্রহ ও মানবতার চিত্রকর।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top