থমাস কোল
থমাস কোল ছিলেন আমেরিকান রোমান্টিক ল্যান্ডস্কেপ শিল্পের অন্যতম পথিকৃৎ
তিনি ১৮০১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডের বোল্টন লে মুরে জন্মগ্রহণ করেন
তার পরিবার ইংল্যান্ড থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন করেন ১৮১৮ সালে
কোল মূলত ওহাইও রাজ্যের স্টিউবেনভিলে বসবাস শুরু করেন
তিনি প্রথমে একজন খোদাইকার ও অলঙ্করণ ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতেন
পরে শিল্পকলার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়ে তিনি চিত্রাঙ্কনে মনোনিবেশ করেন
থমাস কোলকে হাডসন রিভার স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়
হাডসন রিভার স্কুল ছিল আমেরিকার প্রথম প্রাকৃতিক দৃশ্যভিত্তিক শিল্প আন্দোলন
তার চিত্রে প্রকৃতি, ইতিহাস ও ধর্মীয় ভাবধারা মিলেমিশে থাকে
তিনি আমেরিকার প্রকৃতির বিশালতা ও মহিমাকে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছিলেন
তার বিখ্যাত চিত্রমালার মধ্যে “The Course of Empire” অন্যতম
“The Course of Empire” সিরিজে মানব সভ্যতার উত্থান ও পতন চিত্রিত হয়েছে
এই সিরিজে পাঁচটি ধাপ দেখানো হয়েছে—Savage State, Arcadian State, Consummation, Destruction, Desolation
তার আরেকটি বিখ্যাত কাজ “The Voyage of Life”
“The Voyage of Life” সিরিজে মানুষের জীবনের চারটি পর্যায়—Childhood, Youth, Manhood, Old Age—প্রতীকীভাবে দেখানো হয়েছে
কোলের কাজে প্রকৃতি কেবল দৃশ্য নয়, বরং এক নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি হিসেবে উপস্থিত
তিনি বিশ্বাস করতেন, শিল্পের মাধ্যমে মানুষ ঈশ্বরের সৃষ্টির মহত্ত্ব অনুভব করতে পারে
তার আঁকার শৈলীতে ইউরোপীয় রোমান্টিসিজম ও আমেরিকান ন্যাচারালিজমের মিশ্রণ দেখা যায়
থমাস কোলের শিল্পে আলো ও ছায়ার নাটকীয় ব্যবহার বিশেষ বৈশিষ্ট্য
তিনি প্রায়ই প্রকৃতির ভেতর মানবজীবনের প্রতীক খুঁজে পেতেন
তার ল্যান্ডস্কেপে গভীর দার্শনিক ভাবনা প্রতিফলিত হত
তিনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি সভ্যতার ক্ষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন
কোল ইউরোপীয় ভ্রমণে গিয়েছিলেন ১৮২৯ সালে
ইতালির রোম, ফ্লোরেন্স, নেপলস প্রভৃতি শহরে তিনি চিত্রকলা অধ্যয়ন করেন
ইতালির প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ ও পাহাড়ি দৃশ্য তার শিল্পে গভীর প্রভাব ফেলেছিল
তিনি ক্লাসিকাল স্থাপত্য ও প্রকৃতির মেলবন্ধনকে ভালোবাসতেন
১৮৩০-এর দশকে তিনি হাডসন নদী উপত্যকার সৌন্দর্যকে চিত্রায়িত করতে থাকেন
তার “View from Mount Holyoke, Northampton, Massachusetts, after a Thunderstorm (The Oxbow)” একটি আইকনিক চিত্র
এই চিত্রটি আমেরিকান ল্যান্ডস্কেপের প্রতীক হিসেবে বিখ্যাত
কোল প্রকৃতিকে ঈশ্বরের উপস্থিতির এক পবিত্র স্থান হিসেবে দেখতেন
তার মতে, প্রকৃতি মানব আত্মার নৈতিক নির্দেশক
তিনি প্রায়ই প্রকৃতির ভেতর সভ্যতার অতিরিক্ত প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতেন
তার চিত্রে মানব সমাজ ও প্রকৃতির সম্পর্ক নিয়ে গভীর চিন্তা ফুটে ওঠে
থমাস কোল ছিলেন সাহিত্যপ্রেমী ও কাব্যমনা ব্যক্তি
তিনি নিজের ডায়েরি ও প্রবন্ধে শিল্প ও নীতিবোধ নিয়ে লিখেছেন
তিনি “Essay on American Scenery” নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ লিখেছিলেন
এই প্রবন্ধে তিনি আমেরিকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মূল্য ব্যাখ্যা করেছেন
তিনি বিশ্বাস করতেন, শিল্পের লক্ষ্য কেবল বাস্তব অনুকরণ নয়, বরং আধ্যাত্মিক অনুধাবন
তার চিত্রে প্রকৃতি কখনও শান্ত, কখনও ভয়াবহ, কিন্তু সর্বদা মহান
তিনি প্রায়ই আলোকে ঈশ্বরীয় জ্ঞানের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করতেন
তার আঁকার রঙে উষ্ণতা ও গভীরতা ছিল একসঙ্গে
থমাস কোল তার চিত্রে মানুষের আত্মিক যাত্রা ও নৈতিক দ্বন্দ্বকে দৃশ্যরূপ দিয়েছিলেন
তিনি নায়াগ্রা জলপ্রপাত, হাডসন নদী, অ্যাডিরনড্যাক পাহাড় প্রভৃতি স্থান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন
তার কাজগুলো প্রায়ই রাজনৈতিক ও নৈতিক বার্তা বহন করত
তিনি শিল্পকে আমেরিকার সাংস্কৃতিক পরিচয় গঠনের মাধ্যম হিসেবে দেখেছিলেন
তার অনেক কাজই প্রকৃতির পবিত্রতা রক্ষার আহ্বান হিসেবে বিবেচিত হয়
কোলের শিষ্যদের মধ্যে সর্বাধিক বিখ্যাত ছিলেন ফ্রেডেরিক এডউইন চার্চ
চার্চ তার উত্তরসূরি হিসেবে হাডসন রিভার স্কুলের ঐতিহ্য বজায় রাখেন
থমাস কোলের ব্যক্তিত্ব ছিল বিনয়ী ও চিন্তাশীল
তিনি প্রকৃতির সঙ্গে গভীর মানসিক সংযোগ অনুভব করতেন
তার শিল্প দর্শন ছিল মানবিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে ভিত্তিক
তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রকৃতি মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে
তার কাজে পাহাড়, মেঘ, আলো, নদী—সবকিছুতেই আধ্যাত্মিক প্রতীকবোধ মিশে থাকে
তিনি প্রায়ই তার ছবিতে ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দির বা সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ আঁকতেন
এগুলোর মাধ্যমে তিনি সভ্যতার অহংকারের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা দিয়েছেন
তার “Expulsion from the Garden of Eden” চিত্রে বাইবেলের কাহিনীকে প্রকৃতির রূপে উপস্থাপন করা হয়েছে
এই চিত্রে মানব পাপ ও ঈশ্বরীয় বিচার গভীরভাবে ফুটে উঠেছে
থমাস কোলের কাজের মধ্যে নৈতিকতা ও মহত্ত্বের অনুভূতি প্রবল
তিনি মানুষ ও প্রকৃতির পারস্পরিক সম্পর্ককে শিল্পের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন
তার ল্যান্ডস্কেপে সময়, পরিবর্তন ও নশ্বরতার প্রতিফলন দেখা যায়
কোলের চিত্রে প্রায়ই ভবিষ্যতের প্রতি সতর্কতা ও অতীতের প্রতি শ্রদ্ধা মিশে থাকে
তিনি শিল্পে নৈতিক উদ্দেশ্যের প্রয়োজনীয়তা জোর দিয়ে বলেছেন
থমাস কোলের শিল্পে ইতিহাস, ধর্ম ও প্রকৃতি একাকার হয়ে যায়
তিনি প্রায়ই প্রকৃতির মহিমা দেখিয়ে ঈশ্বরের গৌরব প্রকাশ করতেন
তার শিল্পকর্ম আমেরিকান জাতীয় চেতনার প্রতীক হয়ে উঠেছিল
তিনি শিল্পের মাধ্যমে নৈতিক শিক্ষার প্রচার করতে চেয়েছিলেন
থমাস কোলের চিত্রে এক ধরনের দার্শনিক নিঃসঙ্গতা অনুভূত হয়
তিনি মানুষের আত্মার মুক্তি ও পতনের গল্প প্রকৃতির ভাষায় বলেছেন
তার কাজ দর্শকদের মনে চিন্তা ও ধ্যানের উদ্রেক ঘটায়
তিনি আমেরিকার শিল্প ইতিহাসে এক গভীর আধ্যাত্মিক কণ্ঠস্বর রেখে গেছেন
কোলের কাজ ইউরোপ ও আমেরিকা উভয় মহাদেশেই প্রশংসিত হয়েছে
তিনি প্রকৃতির মধ্য দিয়ে মানুষের আত্মার যাত্রা বুঝতে চেয়েছিলেন
তার জীবদ্দশায় তিনি প্রায় চল্লিশটিরও বেশি বৃহৎ চিত্র এঁকেছিলেন
তিনি ১৮৪৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন
তার মৃত্যুতে আমেরিকান শিল্পজগৎ এক মহান পথপ্রদর্শককে হারায়
ক্যাটস্কিল, নিউ ইয়র্কে অবস্থিত তার বাড়িটি এখন “Thomas Cole National Historic Site” নামে সংরক্ষিত
তার শিল্প আজও আমেরিকান রোমান্টিসিজমের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত
থমাস কোল শিল্পে প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা, মানবতার প্রতি ভালোবাসা এবং নৈতিকতার প্রতি বিশ্বাসের এক উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন












