Jean-François Millet

Jean-François Millet

জ্যঁ-ফ্রাঁসোয়া মিলে ছিলেন উনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফরাসি চিত্রশিল্পী যিনি গ্রামীণ জীবনের বাস্তব চিত্রণ দ্বারা শিল্পজগতে নতুন মাত্রা যোগ করেছিলেন

তিনি ১৮১৪ সালের ৪ অক্টোবর ফ্রান্সের নরম্যান্ডির গ্রুচি নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন

তার পরিবার ছিল কৃষিজীবী এবং সেই কারণে গ্রামীণ পরিশ্রমজীবনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে

শৈশব থেকেই তিনি প্রকৃতি, কৃষিকাজ এবং গ্রামীণ শ্রমিকদের জীবনের প্রতি গভীর সংবেদনশীল ছিলেন

তার বাবা ছিলেন এক পরিশ্রমী কৃষক এবং মিলেকে চিত্রাঙ্কনের প্রতি উৎসাহ দিতেন

প্রথমদিকে তিনি ধর্মীয় ও পুরাণভিত্তিক ছবি আঁকতেন

পরে ধীরে ধীরে বাস্তবজীবনের সাধারণ মানুষের দিকেই তার মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হয়

তিনি প্যারিসে এসে আর্ট অধ্যয়ন করেন এবং সেখানে শিল্পের নানা ধারা সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন

প্যারিসের রোমান্টিক ও একাডেমিক ধারার বিপরীতে তিনি বাস্তবতার পথে হাঁটেন

তিনি ছিলেন বাস্তববাদের অন্যতম পথিকৃৎ

তার শিল্পে কৃষকদের পরিশ্রম, দারিদ্র্য, এবং মানবতার গভীর অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে

তার বিখ্যাত চিত্র ‘দ্য গ্লিনারস’ গ্রামীণ শ্রমজীবনের এক অমর প্রতীক

এই ছবিতে তিনজন নারীকে দেখা যায়, যারা মাঠে ফসল কাটার পর অবশিষ্ট শস্য কুড়িয়ে নিচ্ছে

এই দৃশ্যটি সামাজিক শ্রেণিবৈষম্য ও মানবিক পরিশ্রমের প্রতীক হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়

‘দ্য অ্যাঞ্জেলাস’ মিলের আরেকটি শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি

এই চিত্রে সন্ধ্যার প্রার্থনার সময় দুই কৃষক দম্পতির শান্ত, গভীর ভাবাবিষ্ট মুহূর্তকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে

চিত্রটি ফরাসি সমাজে ধর্মীয় শ্রদ্ধা ও শ্রমের মর্যাদাকে একত্র করেছে

মিলে তার শিল্পে আলোর ব্যবহার অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে করেছেন

তার তুলির টানে রুক্ষতা এবং কোমলতা একসঙ্গে মিশে থাকে

তিনি রঙ ব্যবহার করতেন মাটির মতো শান্ত টোনে, যাতে প্রকৃতির সরল সৌন্দর্য ধরা পড়ে

তার চিত্রে আভিজাত্যের কোনো ছাপ নেই, বরং পরিশ্রম ও নিস্তব্ধতার অনুভব জেগে ওঠে

তিনি ‘বার্বিজঁ স্কুল’-এর অন্যতম প্রধান সদস্য ছিলেন

বার্বিজঁ স্কুল ছিল একদল শিল্পীর সমাবেশ, যারা শহুরে শিল্পচর্চা ত্যাগ করে প্রকৃতির মধ্যে শিল্পসৃষ্টি করতেন

এই গোষ্ঠী ফ্রান্সের বার্বিজঁ গ্রামে বসবাস ও কাজ করত

মিলে সেখানে থিওডোর রুশো, চার্লস-ফ্রাঁসোয়া দোবিনির মতো শিল্পীদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন

তাদের চিত্রে কৃষিজীবন, বন, মাঠ ও আলো-ছায়ার বাস্তব চিত্র ফুটে ওঠে

মিলে-র শিল্পে ‘কবিতা ও বাস্তবতার সংমিশ্রণ’ দেখা যায়

তিনি কখনও জীবনের কষ্টকে লুকাননি, বরং তা নান্দনিকভাবে প্রকাশ করেছেন

তার চিত্রে শ্রমজীবী মানুষদের মর্যাদা ও আত্মসম্মান প্রতিফলিত হয়

তিনি ফরাসি বিপ্লব-পরবর্তী সমাজের মানসিক পরিবর্তনকেও শিল্পে প্রকাশ করেছেন

গ্রামীণ পরিশ্রমজীবনকে তিনি শিল্পের উপযুক্ত বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন

তার শিল্পকে অনেক সমালোচক একসময় সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার বলে আখ্যা দিয়েছিলেন

কিন্তু মিলে নিজে কখনও রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না

তিনি বিশ্বাস করতেন, শিল্পের কাজ হলো সত্যকে সুন্দরভাবে প্রকাশ করা

তার তুলিতে শ্রমজীবনের গাম্ভীর্য ও সৌন্দর্য একাকার হয়ে যায়

মিলে ছিলেন অত্যন্ত সংবেদনশীল ও চিন্তাশীল মানুষ

তার কাজ থেকে বোঝা যায় তিনি মানুষের কষ্ট, নিঃসঙ্গতা ও আত্মনিবেদনকে গভীরভাবে বুঝতেন

তিনি প্রায়ই বলতেন, “আমি সেই জিনিস আঁকি যা আমি অনুভব করি”

তার অনেক কাজেই দেখা যায় সূর্যাস্তের আলো, ধুলোবালি, আর নিস্তব্ধ গ্রামীণ আবহ

‘দ্য ম্যান উইথ দ্য হো’ চিত্রে একজন ক্লান্ত কৃষকের মুখে জীবনের কঠিন বাস্তবতা ফুটে ওঠে

তার ছবিতে কৃষিকাজের সরঞ্জামও একধরনের প্রতীক হয়ে ওঠে

তিনি প্যারিস সালোঁ-তে অনেকবার তার চিত্র প্রদর্শন করেন

প্রথমদিকে তার কাজ খুব বেশি প্রশংসা পায়নি, বরং সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন

তাকে অনেকে ‘কৃষকের চিত্রশিল্পী’ বলে উপহাস করেছিল

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার গুরুত্ব বাড়তে থাকে

তার কাজ ইউরোপজুড়ে প্রভাব ফেলেছিল

ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ, কামিল পিসারো, ক্লদ মোনে প্রমুখ শিল্পী তার দ্বারা অনুপ্রাণিত হন

মিলে প্রকৃতিকে কেবল দৃশ্য হিসেবে নয়, এক জীবন্ত সত্তা হিসেবে দেখেছেন

তার চিত্রে শ্রমের মধ্য দিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক প্রকাশিত হয়

তিনি কখনও কৃত্রিম রোমান্টিকতা ব্যবহার করেননি

বরং প্রতিটি দৃশ্যের অন্তর্নিহিত মানবিক সত্যকে ফুটিয়ে তুলেছেন

তার তুলিতে আছে সহমর্মিতা, মর্যাদা ও বিনম্রতা

তিনি কৃষিজীবনের নীরব মহত্ত্বকে উন্মোচন করেন

তার চিত্রকর্মে আলোর নরম ছায়া এবং মেঘলা আকাশ বারবার ফিরে আসে

তিনি সূক্ষ্মভাবে আলো-ছায়ার মধ্য দিয়ে মানসিক গভীরতা প্রকাশ করতেন

তার স্ত্রী ও পরিবারের প্রতিও তিনি ছিলেন নিবেদিত

তার জীবনে অর্থনৈতিক সংকট ছিল, কিন্তু তিনি কখনও শিল্পচর্চা থামাননি

তিনি বার্বিজঁতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং সেখানেই তার বহু শ্রেষ্ঠ কাজ সৃষ্টি হয়

তার জীবনযাপন ছিল একেবারে সরল

তিনি খ্যাতি বা বিলাসিতার জন্য আঁকেননি

তার চিত্র ‘দ্য গ্লিনারস’ এক সময় সমাজে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল কারণ এটি গরিব কৃষাণীদের দুর্দশা দেখাত

কিন্তু পরে সেটি ফরাসি বাস্তববাদের প্রতীক হয়ে ওঠে

মিলে প্রকৃতির সৌন্দর্য ও মানবিক যন্ত্রণাকে একত্রে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন

তার কাজ প্রমাণ করে যে, সরলতা থেকেই গভীর শিল্প জন্ম নিতে পারে

তিনি ছিলেন রেমব্রান্ট ও রাফায়েলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল

তবে তিনি তাদের ধারা অনুসরণ না করে নিজের পথ তৈরি করেন

তার প্রতিটি ক্যানভাসে গ্রামীণ জীবনের হৃদস্পন্দন শোনা যায়

তিনি রঙের চেয়ে ভাব ও অনুভূতিকে বেশি গুরুত্ব দিতেন

মিলে-র কাজ শিল্পে মানবিক মর্যাদার নতুন ভাষা এনে দেয়

তিনি দেখিয়েছিলেন যে কৃষকও এক মহান নায়ক

তার শিল্প শ্রমকে পবিত্রতার মর্যাদা দিয়েছে

মিলে বিশ্বাস করতেন, প্রকৃতি ও মানুষ একে অপরের পরিপূরক

তার চিত্রে প্রায়ই কৃষিকাজের নীরব রূপক দেখা যায়

তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অঙ্কন ও পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যান

১৮৭৫ সালের ২০ জানুয়ারি তিনি ফ্রান্সের বার্বিজঁতে মৃত্যুবরণ করেন

তার মৃত্যুর পর ইউরোপ ও আমেরিকায় তার শিল্পের প্রতি গভীর আগ্রহ দেখা দেয়

আজ তাকে বাস্তববাদী শিল্পের অন্যতম জনক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়

তার শিল্প কেবল ফ্রান্সেই নয়, সারা বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে

জ্যঁ-ফ্রাঁসোয়া মিলে মানবিক শিল্পের এক অনন্য প্রতীক হয়ে রয়ে গেছেন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top