The Writer’s Journey: Mythic Structure for Writers
Textbook by Christopher Vogler
সূত্র ও উদ্দেশ্য
ক্রিস্টোফার ভোগলার তাঁর বইয়ের সূচনায় জোসেফ ক্যাম্পবেলের The Hero with a Thousand Faces বইটির ওপর ভিত্তি করে নিজের কাজের ভিত্তি ব্যাখ্যা করেন। ক্যাম্পবেল সেখানে “মনোমিথ” বা “হিরো’স জার্নি”-র ধারণা তুলে ধরেছিলেন—একটি সার্বজনীন ন্যারেটিভ প্যাটার্ন যা বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতির পুরাণ, উপকথা এবং আধুনিক কাহিনিতে বারবার ফিরে আসে। তবে ক্যাম্পবেলের কাজ একধরনের একাডেমিক বিশ্লেষণ হলেও, ভোগলার লক্ষ্য ছিল এই ন্যারেটিভ কাঠামোকে আরও ব্যবহারিক ও সহজে প্রয়োগযোগ্য উপায়ে আধুনিক লেখক, বিশেষত চিত্রনাট্যকার ও কথাসাহিত্যিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
ভোগলার নিজে হলিউডে স্টোরি কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করার সময় লক্ষ্য করেন—মিথিক কাঠামো মেনে তৈরি হওয়া গল্পগুলো সাধারণত দর্শক-শ্রোতাদের সঙ্গে গভীরভাবে সংযোগ স্থাপন করতে পারে। এই কারণেই তিনি ঐতিহাসিক মিথ ও আর্কিটাইপগুলোকে এমনভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন যেন লেখকরা সরাসরি সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। তবে তিনি বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন যে এগুলো কোনো “ফর্মুলা” বা কারিগরি কৌশল নয়, বরং গল্পের গভীর আবেগ ও সার্বজনীনতাকে মাথায় রেখে তৈরি একটি পথনির্দেশ।
অধ্যায় ১: ব্যবহারিক নির্দেশিকা
প্রথম অধ্যায়ে ভোগলার তাঁর বইয়ের উদ্দেশ্য ও দৈশিক ব্যবহার নিয়ে কথা বলেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে চরিত্র-আর্কিটাইপ ও হিরো’স জার্নি কোনো কঠোর নিয়মের কাঠামো নয়। বরং এগুলো গল্প নির্মাণের সময় গল্পকারদের সহায়তা করার জন্য একগুচ্ছ নমনীয় প্রস্তাবনা।
- কেন মিথ গুরুত্বপূর্ণ: মিথ ও পুরাণ সর্বজনীন অভিজ্ঞতা ও আবেগ বহন করে। এগুলো মানুষের চিরায়ত লড়াই, আত্মত্যাগ, ও পরিবর্তনের কথা তুলে ধরে, যা বিশ্বের সব সংস্কৃতিতেই দেখা যায়।
- লেখকের নিজস্ব যাত্রা: গল্পের কেন্দ্রীয় নায়কের মতোই, লেখকরাও মানসিক ও সৃজনশীল এক অভিযাত্রা পাড়ি দেন। অনুপ্রেরণা, সন্দেহ, বাধা, ও আত্মআবিষ্কারের মধ্য দিয়ে লেখককে এগোতে হয়।
- অনুকরণ নয়, অভিযোজন: হুবহু অনুসরণ থেকে সৃষ্টি হয় গতানুগতিকতা। বরং মিথিক কাঠামো ও আর্কিটাইপগুলোকে গল্পের প্রয়োজন মতো ঢেলে সাজানোর মাধ্যমেই সৃজনশীলতা বিকশিত হয়।
- অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক দিক: গল্পে বাহ্যিক ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে নায়কের মনোজগতের পরিবর্তন ও আবেগীয় মূল্য দিতে হবে। এই দুই দিকের মেলবন্ধনেই গল্প প্রাণ পায়।
এই অধ্যায়ের শেষে ভোগলার উল্লেখ করেন যে লেখকদের উচিত নিজের সৃষ্টিশীল বোধকে অগ্রাধিকার দেওয়া। কাঠামো শুধু একটি মানচিত্রের মতো—যাত্রাপথ নির্দেশ করতে পারে, কিন্তু আবিষ্কার ও নতুনত্বের রাস্তা খোলা রাখতে হবে।
অধ্যায় ২: আর্কিটাইপ – ভূমিকা
হিরো’স জার্নির ১২টি ধাপ ব্যাখ্যা করার আগে ভোগলার প্রাথমিকভাবে আর্কিটাইপ ধারণাটি স্পষ্ট করেন। এগুলো হলো চরিত্রের সার্বজনীন ধরন, যা মানবীয় বিভিন্ন মানসিক ও আবেগীয় বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন। তিনি বলেন, আর্কিটাইপগুলোকে যেন “মাস্ক” বা মুখোশের মতো দেখা হয়—একই চরিত্র গল্পের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন আর্কিটাইপের ভূমিকা নিতে পারে। প্রধান আটটি আর্কিটাইপ তিনি চিহ্নিত করেছেন:
- হিরো (Hero)
- মেন্টর (Mentor)
- থ্রেশহোল্ড গার্ডিয়ান (Threshold Guardian)
- হেরাল্ড (Herald)
- শেপশিফটার (Shapeshifter)
- শ্যাডো (Shadow)
- অ্যালাই/সহচর (Ally)
- ট্রিকস্টার (Trickster)
একটি চরিত্রের প্রধান আর্কিটাইপ কোনো পর্যায়ে স্পষ্ট হতে পারে, আবার অন্য পর্যায়ে ভিন্ন আর্কিটাইপের ভূমিকা নিতে পারে। আর্কিটাইপের মূল কাজ হলো নায়কের রূপান্তর ও স্বয়ংঅভিজ্ঞানকে উজ্জ্বল করা।
হিরো
হিরো হলো কেন্দ্রীয় চরিত্র, যার দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা গল্পকে দেখি। পাঠক বা দর্শক হিরোর কষ্ট, সংকট এবং বিজয়ের সাথে একাত্ম হতে পারে। হিরো সাধারণত আত্মত্যাগী মানসিকতা প্রদর্শন করে এবং বড় ঝুঁকি নিতে এগিয়ে যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তারা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়—গল্পের সবচেয়ে বড় শক্তি এই ট্রান্সফরমেশন বা রূপান্তর। হিরোর মানবিক ও সংবেদী দিকগুলো পাঠককে সাথে রাখে।
মেন্টর
মেন্টর হলো সেই চরিত্র, যিনি হিরোকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা, উপদেশ বা সরঞ্জাম দেন। তিনি জ্ঞান, পথনির্দেশনা এবং কখনো কখনো ঐন্দ্রজালিক বা বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করতে পারেন। যদিও অনেক সময় মেন্টরকে দয়া ও মেধার পূর্ণ প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়, কিন্তু সব মেন্টর একদিক দিয়ে পবিত্র বা শক্তিমান না-ও হতে পারেন। তাদের কাজ হলো নায়কের উদ্বোধন করা কিংবা তার ভেতরের সম্ভাবনাকে উন্মোচনে সহায়তা করা।
থ্রেশহোল্ড গার্ডিয়ান
থ্রেশহোল্ড গার্ডিয়ানরা সাধারণত গল্পের প্রাথমিক পর্যায়ে ছোটোখাটো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এরা গেটকিপার হিসেবে কাজ করে; তারা হিরোর দৃঢ়তা ও প্রস্তুতিকে পরখ করে। এটা হতে পারে কোনো ব্যক্তি, কোনো দৈত্য, বা এমনকি হিরোর নিজের সংশয়। মূল উদ্দেশ্য হলো হিরোকে প্রমাণ করতে হবে যে সে আসলেই পরবর্তী ধাপের জন্য প্রস্তুত।
হেরাল্ড
হেরাল্ড গল্পে “কল টু অ্যাডভেঞ্চার” নিয়ে আসে—অর্থাৎ হিরোকে জানিয়ে দেয় যে সামনে এগোতে হবে, পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে। হেরাল্ড কোনো বার্তাবাহক, আকস্মিক ঘটনা বা এমনকি কোনো প্রকৃতির দূর্যোগ-দূর্বিপাকও হতে পারে। তারা গল্পে গতিময়তা আনে এবং হিরোকে স্থিত অবস্থা থেকে বের করে নতুন জগতে প্রবেশে বাধ্য করে।
শেপশিফটার
শেপশিফটার আর্কিটাইপ অনিশ্চয়তা, দ্বিধা ও ধোঁয়াশা তৈরি করে। এরা চরিত্রগতভাবে পরিবর্তনশীল—কখনো বন্ধু, কখনো প্রতিপক্ষ, কখনো বিশ্বাসযোগ্য, কখনো বিশ্বাসঘাতক। শেপশিফটার হিরোকে ও পাঠককে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়, ফলে কাহিনিতে উত্তেজনা বাড়ে। রোমান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এই আর্কিটাইপ বেশ কার্যকর, কারণ আকর্ষণ ও অনিশ্চয়তা গল্পকে গতিশীল রাখে।
শ্যাডো
শ্যাডো হলো সবচেয়ে প্রবল শত্রু বা হিরোর নিজের অন্ধকার দিকের প্রতীক। এটি হতে পারে গল্পের ভিলেন, বা হিরোর ভিতরে লুকিয়ে থাকা নেতিবাচক আবেগ, অপরাধবোধ কিংবা ভয়। শ্যাডো কাহিনির কেন্দ্রীয় সংঘাত তৈরি করে। প্রায়ই দেখা যায় হিরো এবং শ্যাডো একে অন্যের প্রতিবিম্ব, যা দেখায় হিরোরও অন্ধকারের দিকে ঢলে পড়ার সম্ভাবনা আছে। চূড়ান্ত লড়াইয়ে শ্যাডোকে পরাজিত করাই হিরো’র পূর্ণ পরিবর্তনের চূড়ান্ত পরীক্ষা।
অ্যালাই/সহচর
অ্যালাইরা হিরোকে সঙ্গ দেয়, সহযোগিতা করে এবং মনস্তাত্ত্বিক বা ব্যবহারিক সমর্থন জোগায়। তারা গল্পের বিভিন্ন ধাপে হিরোকে আবেগীয় শক্তি বা বাস্তব সাহায্য দেয়। কোনো কোনো সময় তারা নিজস্ব উপপ্লট নিয়ে এগোয়, যা হিরোর যাত্রাকে গভীরতা ও বৈচিত্র্য দেয়। অ্যালাইদের মাধ্যমে হিরোর চরিত্রায়নের নানা দিকও উন্মোচিত হয়—যেমন বন্ধুত্ব, আস্থা, দলগত চেতনা।
ট্রিকস্টার
ট্রিকস্টার আর্কিটাইপ গল্পের স্থিতাবস্থায় অস্থিরতা নিয়ে আসে, হালকা মজা বা বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। এরা বিদ্রুপ, কৌতুক বা ছোটোখাটো প্রতারণার মাধ্যমে চরিত্রদের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে। কখনো তারা স্রেফ মজার চরিত্র, আবার কখনো তারা হিরোকেও বড় শিক্ষার দিকে ঠেলে দেয়। ট্রিকস্টারের কাজ হলো অলসতা বা আত্মতুষ্টিকে ভাঙা, প্রশ্ন তোলা এবং গল্পের শক্তি ধরে রাখা।
অধ্যায় ৩: দ্য অর্ডিনারি ওয়ার্ল্ড
হিরো’স জার্নির ১২ ধাপের মধ্যে প্রথম হলো The Ordinary World—হিরোর পরিচিত পরিবেশ, দৈনন্দিন জীবন যাপনের ক্ষেত্র। এখানে গল্প শুরু হয়, যাতে পাঠক বা দর্শক হিরোর বাস্তবতা ও মূল চরিত্রটি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পায়।
এই ধাপে হিরোর বর্তমান সমস্যার ইঙ্গিত থাকতে পারে—সে হয়তো কিছুতে অখুশি বা ভেতরে ভেতরে অন্য কিছুর আকাঙ্ক্ষা রাখে। আবার তার উপর কোনো দায়দায়িত্ব থাকতে পারে, অথবা স্বল্প-পরিসরে কোনো সমস্যাও থাকতে পারে যা পরে বড় সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। মূল উদ্দেশ্য হলো হিরো কী হারাতে পারে, এবং তার মূল্যবোধ, শক্তি ও দুর্বলতা কী—এই বিষয়গুলোর ভিত্তি স্থাপন করা।
অধ্যায় ৪: দ্য কল টু অ্যাডভেঞ্চার
দ্বিতীয় ধাপে, The Call to Adventure হিরোকে অর্ডিনারি ওয়ার্ল্ড ত্যাগ করার প্রাথমিক ইঙ্গিত দেয়। এটি হতে পারে কোনো দূত, কোনো বার্তা বা আকস্মিক বিপদ। হিরো স্বইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় এই আহ্বান পায়।
ভোগলার উল্লেখ করেন, কখনো এই আহ্বান একাধিকবার আসে—প্রথম ডাক উপেক্ষা করলে পরবর্তীতে আরো জোরালোভাবে ফিরে আসতে পারে। এই কল টু অ্যাডভেঞ্চারই গল্পের মূল গতিকে সচল করে এবং হিরোকে বাধ্য করে চেনা গণ্ডি পেরিয়ে অজানার মুখোমুখি হতে।
অধ্যায় ৫: রিফিউজাল অফ দ্য কল
সব হিরো কল টু অ্যাডভেঞ্চার পেয়েই সেটি গ্রহণ করে না। Refusal of the Call ধাপে হিরো আতঙ্ক, দায়বদ্ধতা, বা সংশয়ের কারণে পিছু হটে। এটা মূলত গল্পে দ্বিধা ও আবেগীয় গভীরতার যোগ করে।
কখনো পরিবার বা সমাজের কাছে দায়বদ্ধতার কারণেও হিরো যাত্রা আরম্ভে বিলম্ব করে। কখনো নিজের ব্যক্তিগত ভয় বা আত্মবিশ্বাসের অভাবও কাল হয়ে দাঁড়ায়। এই ধাপ হিরোকে মানবিক করে তোলে—তারো সংশয় আছে, ভুল করার আশঙ্কা আছে। তবে সবশেষে, গল্প এগিয়ে নিয়ে যেতে, তাকে এই ভয় বা দ্বিধা কাটিয়ে উঠতে হবে।
অধ্যায় ৬: মিটিং উইথ দ্য মেন্টর
রিফিউজাল অফ দ্য কল-এর পরে, হিরোকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে Meeting with the Mentor ধাপ। মেন্টর, তার জ্ঞান বা ক্ষমতা দিয়ে হিরোর মনোবল বাড়িয়ে তোলে। এটি হতে পারে কোনো বয়োজ্যেষ্ঠ জাদুকর, দক্ষ প্রশিক্ষক, একজন সৎ পরামর্শদাতা, অথবা এমনকি কোনো বই কিংবা দৃষ্টান্ত যা হিরোকে আলোকিত করে।
ভোগলার বলেন, মেন্টর সবসময় দৃশ্যমান কোনো ব্যক্তি নাও হতে পারে। অন্তর্দৃষ্টি, স্বপ্ন বা ঐশী কণ্ঠস্বর—এগুলোও মেন্টরের ভূমিকা পালন করতে পারে। মূল কথা হলো, হিরো এই ধাপে এমন কিছু পায় যা তার আত্মবিশ্বাসকে দৃঢ় করে, যাতে সে অবশেষে যাত্রার পথে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে পা বাড়ায়।
অধ্যায় ৭: ক্রসিং দ্য ফার্স্ট থ্রেশহোল্ড
Crossing the First Threshold হলো হিরোর সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যা তাকে অর্ডিনারি ওয়ার্ল্ড থেকে স্পেশাল ওয়ার্ল্ডে নিয়ে যায়। এটি গল্পের একটা সুস্পষ্ট বাঁক—হিরো এখন আর পুরোপুরি আগের জগতে নেই।
একজন থ্রেশহোল্ড গার্ডিয়ান এখানে বাধা দিতে পারে, যা হিরোকে প্রাথমিক পরীক্ষার সম্মুখীন করে। এই বাধা হিরোকে যাচাই করে: সে কি সত্যিই রেডি অজানা ঝুঁকি নিতে? এর মধ্য দিয়ে গল্প আরও উন্মুক্ত হয়—পাঠক বুঝে নেয় যে এখন বড় ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে, আর হিরোর পিছু হটার সুযোগ কম।
অধ্যায় ৮: টেস্টস, অ্যালাইস, এনিমিজ
স্পেশাল ওয়ার্ল্ডে প্রবেশের পর হিরো Tests, Allies, and Enemies ধাপে বিচিত্র পরীক্ষা ও মানুষের সম্মুখীন হয়। এখানে কিছু ছোট চ্যালেঞ্জ তাকে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সহায়তা করে। একইসাথে সে কিছু সঙ্গী (অ্যালাই) পায়, যারা সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে, এবং কিছু শত্রুর (এনিমি) মুখোমুখি হয়, যারা গল্পের এগিয়ে চলার পথে বাধা সৃষ্টি করে।
এই ধাপে গল্পের জগত বিস্তৃত হয়। হিরো ধীরে ধীরে নিজের দক্ষতা, সাহস বা বুদ্ধি ঝালিয়ে নেয়। সঙ্গীদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। শত্রুদের পরিচয় ঘটে, যা ভবিষ্যৎ সংঘাতের ভিত্তি তৈরি করে। প্রায়ই এই পর্যায়ে হাস্যরস, সাসপেন্স, ও দলগত সম্পর্কের উপাখ্যান গল্পকে সমৃদ্ধ করে।
অধ্যায় ৯: অ্যাপ্রোচ টু দ্য ইনমোস্ট কেভ
Approach to the Inmost Cave ধাপ অগ্রগতির আরেক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যেখানে হিরো তার সবচেয়ে বড় পরীক্ষার দিকে ধীরে ধীরে এগোয়। এটিকে কোনো দুর্গ বা নিষিদ্ধ অঞ্চল হিসেবে দেখা যেতে পারে, অথবা হিরোর নিজের মনের গহীনের প্রতীক হতে পারে।
এই ধাপে চ্যালেঞ্জ বাড়তে থাকে, হিরোকে মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত হতে হয়। কখনো নতুন তথ্য বেরিয়ে আসে, কোনো বিশ্বাসঘাতকতা ঘটে, বা জটিল পরিকল্পনা তৈরি হয়। গল্পে উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে কারণ পাঠক/দর্শক জানে, সামনে এক ভয়ংকর সংঘর্ষ বা সংকট অপেক্ষা করছে।
অধ্যায় ১০: দ্য অর্দিয়াল
হিরো’স জার্নির কেন্দ্রীয় বা মধ্যবর্তী ধাপ হলো The Ordeal—সবচেয়ে বড় বা গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এখানে হিরোকে প্রায়শই “মৃত্যু”-র সম্মুখীন হতে হয়—সেটি বাস্তব হোক বা প্রতীকী। এটি গল্পের আবেগীয় শিখর, কারণ মনে হয়, হিরো বুঝি হেরে যাবে বা জীবন দিয়ে দিতে হবে।
ভোগলার উল্লেখ করেন, এখানে একটি “পুরোনো সত্তার মৃত্যু” ঘটে এবং “নতুন সত্তার জন্ম” হয়। এই ধাপের পয়েন্ট হলো হিরো নিজের ভয়, শ্যাডোর মুখোমুখি হয়, অথবা কোথাও আটকে পড়ে সত্যিকারের বিপদের সম্মুখীন হয়। এই সংঘর্ষ থেকে উঠে আসার পর হিরো আর আগের মতো থাকে না—তার মধ্যে এক নতুন উপলব্ধি, আত্মবিশ্বাস কিংবা ক্ষমতা জন্ম নেয়।
অধ্যায় ১১: রিওয়ার্ড (সিজিং দ্য সোর্ড)
অর্দিয়াল পেরিয়ে যাওয়ার পর, হিরো Reward বা “সিজিং দ্য সোর্ড” ধাপে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপহার অর্জন করে। এটি হতে পারে কোনো দুষ্প্রাপ্য বস্তু, জাদুকরী শক্তি, মূল্যবান তথ্য বা ব্যক্তিগত আত্মচেতনা। কখনো কখনো এটি বাহ্যিকভাবে সম্পদ বা স্থানীয় লোকদের জন্য কোনো উপকারী বস্তু।
এই রিওয়ার্ড গল্পের সাময়িক ট্রায়াম্ফ; হিরো সাময়িকভাবে সফলতা ও স্বস্তি অনুভব করে। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, এই লাভজনক বস্তু বা জ্ঞান নতুন শত্রুর জন্ম দেয় অথবা ভবিষ্যতে আরো বড় দায়িত্ব নিয়ে আসে। তবু এই ধাপে পাঠক ছোট্ট এক টুকরো মুক্তির স্বাদ পায়—শেষ লড়াইয়ের আগে ছোট বিজয়ের আনন্দ।
অধ্যায় ১২: দ্য রোড ব্যাক
হিরো এখন The Road Back ধাপে অর্ডিনারি ওয়ার্ল্ডে বা অন্য কোনো চূড়ান্ত গন্তব্যে ফিরে যেতে শুরু করে। অর্দিয়ালের পর প্রকৃত চ্যালেঞ্জ শেষ হয়ে যায় এমন ভাবার সুযোগ নেই—এখন শত্রুরা প্রতিশোধ নিতে পারে, বা হিরো নিজেও দোলাচলে পড়তে পারে।
ভোগলার বলেন, এটি অনেকটা চিত্রনাট্যের তৃতীয় অঙ্কের সূচনা। হিরো যদি স্পেশাল ওয়ার্ল্ড ছেড়ে যেতে না চায় বা যেতে বাধ্য হয়, উভয় অবস্থাতেই গল্পের গতি পুনরায় ত্বরান্বিত হয়। শত্রুদের তাড়া, মিত্রদের পরামর্শ, নতুন দায়িত্ব—সব মিলিয়ে হিরোকে শেষ খেলায় নামতে প্রস্তুত করতে হবে।
অধ্যায় ১৩: রেজারেকশন
Resurrection হলো হিরো’র চূড়ান্ত পরীক্ষা, প্রায়শই গল্পের ক্লাইম্যাক্স। এখানে হিরোকে আবারও মৃত্যু-সমতুল্য ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হয়, কিন্তু এবার পরিধি আরও বড়—সম্ভবত একটি গোটা সাম্রাজ্য, নগরী, বা সম্প্রদায়ের ভাগ্য জড়িয়ে আছে।
এই ধাপটিকে দ্বিতীয় অর্দিয়াল বলা যেতে পারে। শ্যাডোর সঙ্গে চূড়ান্ত লড়াই বা চূড়ান্ত বিপর্যয় ঘটলে হিরো আগের অভিজ্ঞতা ও অর্জিত শিক্ষা কাজে লাগিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনতে চেষ্টা করে। ব্যর্থ হলে ট্র্যাজিক পরিণতি, আর সফল হলে নতুনভাবে নিজেকে গড়ে তোলে। এই রেজারেকশন গল্পের আবেগীয় সর্বোচ্চ বিন্দু, যেখানে মৌলিক থিম ও হিরোর স্বরূপ উন্মোচিত হয়।
অধ্যায় ১৪: রিটার্ন উইথ দ্য এলিক্সির
শেষ ধাপ Return with the Elixir-এ হিরো অর্ডিনারি ওয়ার্ল্ডে ফেরত আসে সেই উপহার বা “এলিক্সির” সাথে, যা সে অর্দিয়াল থেকে পেয়েছে। এটি হতে পারে শারীরিক বস্তু, কোনো ওষুধ, নৈতিক শিক্ষা, মনের জয়, বা ব্যক্তিগত পরিপূর্ণতা।
গল্পের পরিসমাপ্তিতে দেখা যায়, হিরোর এই অর্জিত সম্পদ শুধু তার নিজের জন্য নয়, বরং আশপাশের মানুষ বা সামগ্রিক পরিবেশেরও কল্যাণ করে। এটি দেখায় হিরোর অভিযাত্রা শুধু ব্যক্তিগত নয়—সমাজ ও সম্পর্কেও এর প্রভাব আছে। এভাবেই গল্পের পূর্ণাঙ্গতা আসে; হিরো আগের অবস্থান থেকে উন্নীত হয়ে সর্বজনীন উপকারে ফিরে এসেছে।
অধ্যায় ১৫: লেখকের যাত্রার চ্যালেঞ্জ
১২টি ধাপ ব্যাখ্যার পরে ভোগলার আলোচনা করেন কীভাবে লেখকরা এগুলো ব্যবহার করতে পারেন এবং কোথায় কোথায় সমস্যায় পড়তে পারেন:
- অতিরিক্ত ফর্মুলামুখী হওয়া: কাঠামো অন্ধভাবে অনুসরণ করলে গল্প গতানুগতিক ও অনুমানযোগ্য হয়ে যেতে পারে।
- চরিত্রের গভীরতার অভাব: বাহ্যিক ঘটনার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ সংবেদনশীল যাত্রা থাকতে হবে। নইলে গল্প প্রাণ পায় না।
- আর্কিটাইপের অপপ্রয়োগ: আর্কিটাইপগুলো নমনীয়ভাবে প্রয়োগ করতে হবে। একটি চরিত্র একাধিক ভূমিকা নিতে পারে; স্থির “লেবেল” দিলে চরিত্রগুলো কৃত্রিম হয়ে যাবে।
ভোগলার তুলে ধরেন, লেখকদের কেউ কেউ আগে থেকেই পুরো প্লট ও কাঠামো সাজিয়ে নেন, আবার কেউ লিখতে লিখতে কাঠামো খুঁজে পান। যে পথেই যান, সচেতনভাবে হিরো’স জার্নির ধারণা মাথায় রাখা কাঠামো ও প্রেরণার কাজ করতে পারে।
অধ্যায় ১৬: বিভিন্ন ঘরানায় মিথিক স্ট্রাকচারের প্রয়োগ
ভোগলার দেখান কীভাবে হিরো’স জার্নি সাহিত্য ও চিত্রনাট্যে বিভিন্ন ঘরানায় (জনরা) সুন্দরভাবে খাপ খায়:
- অ্যাকশন/অ্যাডভেঞ্চার: খুব স্পষ্ট আকারে বাহ্যিক দ্বন্দ্ব ও পদে পদে বাধা, Allies–Shadow–Mentor সব মিলিয়ে ক্লাসিক্যাল মডেল।
- রোমান্স: এখানে বাহ্যিক কাহিনির সঙ্গে অভ্যন্তরীণ আবেগ ও অনিশ্চয়তা সমান্তরালে চলে। শেপশিফটার আর্কিটাইপ ভালোবাসার গল্পে বিশেষ গুরুত্ব পায়।
- হরর/থ্রিলার: অর্দিয়াল ও রেজারেকশনের সময় হিরো জীবনের ঝুঁকি বা মানসিক ভীতি মোকাবিলা করে। শ্যাডো প্রায়শই কোনো দানব বা সিরিয়াল কিলার।
- কমেডি: ট্রিকস্টার খুব গুরুত্বপূর্ণ; গল্পে হাস্যরসের মাধ্যমে মূল কাঠামো থাকলেও সেটি হালকা ও ব্যঙ্গাত্মকভাবে প্রকাশ পায়।
- মিস্ট্রি/ডিটেকটিভ ফিকশন: হিরো হলেন গোয়েন্দা—অর্দিয়াল মানে প্রমাণ হাতেনাতে ধরা বা নিহত হওয়ার ঝুঁকি। রিটার্ন উইথ দ্য এলিক্সির অর্থ হলো কেস সমাধান ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা।
এভাবে তিনি দেখান, কাঠামো অপরিবর্তিত থাকলেও বিষয়বস্তুর তারতম্যে গল্পের স্বাদ সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়।
অধ্যায় ১৭: বাস্তব জীবনে লেখকের নিজের যাত্রা
ভোগলার আবার লেখকের নিজের অভিজ্ঞতাকে হিরো’স জার্নির ১২ ধাপের সঙ্গেই তুলনা করেন:
- অর্ডিনারি ওয়ার্ল্ড: লেখকের স্বাভাবিক জীবনে, যেখানে গল্পের ভাবনা এখনও কাগজে নামেনি।
- কল টু অ্যাডভেঞ্চার: একটা নতুন আইডিয়া, যা লেখাকে উৎসাহিত করে।
- রিফিউজাল: আলস্য, সময়ের অভাব, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি বা বাহ্যিক চাপে গল্প শুরু করতে দেরি করা।
- মেন্টরের সঙ্গে সাক্ষাৎ: কারিগরি জ্ঞান, ওয়ার্কশপ, অন্য লেখকদের লেখা, কিংবা প্রিয় কোনো বই, যা লেখককে প্রেরণা দেয়।
- ফার্স্ট থ্রেশহোল্ড পার হওয়া: গল্পের প্রথম খসড়া লেখা শুরু করা।
- টেস্টস, অ্যালাইস, এনিমিজ: লেখনীর সীমাবদ্ধতা, সমালোচক, সমর্থক বন্ধুরা, ইত্যাদি।
- অ্যাপ্রোচ ও অর্দিয়াল: মাঝপথে এসে বড় সংশয়, ‘রাইটার্স ব্লক’, বা সম্পূর্ণ পুনর্লিখন।
- রিওয়ার্ড: একটা বড় ব্রেকথ্রু—গল্পের প্লট বা চরিত্র স্পষ্ট হয়ে যাওয়া, খসড়া শেষ করা।
- রোড ব্যাক ও রেজারেকশন: সম্পাদনা, সংশোধন, প্রকাশকের মুখোমুখি হওয়া।
- রিটার্ন উইথ দ্য এলিক্সির: বই প্রকাশ বা পাঠকের কাছে পৌঁছানো, লেখক নিজেও সমৃদ্ধ হলেন এবং অন্যকেও উপকৃত করলেন।
এভাবে ভোগলার লেখকদের মনে করিয়ে দেন যে storytelling নিজের মধ্যেও এক অভিযাত্রা।
অধ্যায় ১৮: মিথিক স্ট্রাকচার ও স্টোরিটেলিং নিয়ে ভাবনা
এই অধ্যায়ে ভোগলার বলেন, মানুষ চিরকাল গল্প চায় এবং গল্পে নিজেকে খুঁজে পায়। আধুনিক যুগে প্রযুক্তি ও সামাজিক পরিবেশ বদলালেও পুরোনো পুরাণ বা মিথের আবেদন ম্লান হয়নি। বরং সেই চিরায়ত কাঠামোকে বুঝে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে গল্প বলা সম্ভব—এতে গল্পগুলো সার্বজনীনতা অর্জন করে।
ভোগলার সমালোচনা প্রসঙ্গে বলেন, অনেকে মনে করেন হিরো’স জার্নির মত কাঠামো লেখাকে প্রেডিক্টেবল করে ফেলে। কিন্তু তিনি জোর দিয়ে বলেন, সুর এবং তাল যেমন সঙ্গীতের ভিত্তি কিন্তু শিল্পী যা চান তাই করতে পারেন—এখানেও একই কথা প্রযোজ্য। লেখক নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, স্বর ও স্টাইলকে মিশিয়ে একান্ত নিজস্ব গল্প তৈরি করতে পারবেন। এই কাঠামোটা হলো কেবল একটি সহায়ক মানচিত্র।
অধ্যায় ১৯: কেস স্টাডি ও উদাহরণ
বইয়ের বিভিন্ন জায়গায় জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ও গল্পের উদাহরণ দেওয়া হলেও, এই অধ্যায়ে ভোগলার সরাসরি কিছু কাহিনি বিশ্লেষণ করেন হিরো’স জার্নির লেন্সে:
- স্টার ওয়ার্স (১৯৭৭): লূক স্কাইওয়াকার হিরো, মেন্টর হিসেবে ওবি-ওয়ান কেনোবি, অ্যালাই হিসেবে হান সলো ও প্রিন্সেস লেইয়া, শ্যাডো হলো ডার্থ ভেইডার। হিরোর জার্নির প্রতিটি ধাপ খুবই স্পষ্ট।
- দ্য লায়ন কিং (১৯৯৪): সিমবা ছোট রাজপুত্র থেকে নির্বাসিত হয়ে আবার ফিরে আসে—মেন্টর (মুফাসা), শ্যাডো (স্কার), ট্রিকস্টার-অ্যালাই (টিমন ও পুম্বা) প্রভৃতি স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
- দ্য সাইলেন্স অফ দ্য ল্যাম্বস (১৯৯১): ক্লারিস স্টার্লিং-এর মনস্তাত্ত্বিক লড়াই; এখানে হ্যানিবাল লেক্টর একাধারে মেন্টর ও শেপশিফটার, আর শ্যাডো হলো বাফেলো বিল। হিরো’স জার্নির গঠন থ্রিলার ঘরানায় কীভাবে কাজ করে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
এসব উদাহরণে দেখা যায় যে একই কাঠামো বিভিন্ন ঘরানায় ভিন্ন মাত্রা পায়, কিন্তু আবেগীয় ও মনস্তাত্ত্বিক স্তরে একই ছন্দ বজায় রাখে।
অধ্যায় ২০: উপসংহার – যাত্রা অব্যাহত
সবশেষ অধ্যায়ে ভোগলার স্মরণ করিয়ে দেন—হিরো’স জার্নি কাঠামো কেবলমাত্র একটি দিকনির্দেশনা। সৃষ্টিশীলতা হলো লেখকের নিজস্ব শক্তি, যা কোনো কিছুর দ্বারা আটকে রাখা যায় না। এই কাঠামো সেই সুরক্ষিত পরিসর বা কঙ্কাল, যার ওপর লেখক মাংস ও রক্তের আবরণ দিয়ে একেকটি অভিনব গল্প তৈরি করবেন।
তিনি লেখকদের ধন্যবাদ জানান এই “লেখক-যাত্রা”য় সঙ্গী হওয়ার জন্য, এবং পুনরুল্লেখ করেন যে মানুষে মানুষে সংযোগ স্থাপন, ভাবের বিনিময় এবং মনস্তাত্ত্বিক-আধ্যাত্মিক আলোচনার সবচেয়ে প্রাচীন ও শক্তিশালী মাধ্যম হলো গল্প। মানুষের ভেতরে থাকা অন্তহীন কাহিনি আর রূপকথাকে জাগিয়ে তুলতেই এই বইয়ের প্রচেষ্টা।
চূড়ান্ত মন্তব্য
ক্রিস্টোফার ভোগলার-এর The Writer’s Journey: Mythic Structure for Writers গ্রন্থটি বর্তমান সময়ের গল্পকারদের জন্য একটি মাইলফলক। এটি জোসেফ ক্যাম্পবেলের মনোমিথ ধারণাকে আরও বাস্তব ও ব্যবহারিক পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। মোট ১২টি ধাপের কাঠামো এবং ৮টি প্রধান আর্কিটাইপের বিশ্লেষণ গল্প সৃষ্টিকে সহজ, অনুপ্রাণিত ও দর্শকের সঙ্গে সংযুক্ত করে।
১. আর্কিটাইপ গল্পের চরিত্রগুলোকে সার্বজনীন মনস্তত্ত্বের সঙ্গে মিল রেখে গড়তে সাহায্য করে, যেখানে মানবীয় অনুভূতির বহুবিধ রূপ প্রতিফলিত হয়।
২. হিরো’স জার্নির ১২ ধাপ প্লটের ধারাবাহিকতায় হিরোর বিকাশ, সংরক্তি ও পরিপূর্ণতাকে সূচিত করে।
3. বাস্তব প্রয়োগ লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সঙ্গেও এই কাঠামো মিলিয়ে যায়—প্রতিটি গল্পকারের মধ্যেই চলে এক নিজস্ব নায়কোচিত যুদ্ধ।
এই বই স্রেফ একটি কারিগরি পদ্ধতি নয়; বরং এটি এক ধরণের মানসিক ও সৃজনশীল যাত্রার রূপরেখা। যারা গল্প বলতে ও লিখতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য The Writer’s Journey অমূল্য সহচর, কারণ এটি শুধু গল্পের কাঠামোই নয়, গল্প তৈরির অন্তর্নিহিত রসায়ন ও দর্শনকেও উন্মোচন করে। এর ফলে লেখকরা মানুষ, সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও গভীরে গিয়ে লিখতে অনুপ্রাণিত হন—একইসঙ্গে এই প্রক্রিয়া লেখকের নিজস্ব সত্তা ও অন্বেষণকেও সমৃদ্ধ করে।