Eugène Delacroix

Eugène Delacroix

ইউজেন দ্য লাক্রোয়ার পূর্ণ নাম ছিল Ferdinand Victor Eugène Delacroix।

তিনি জন্মগ্রহণ করেন ২৬ এপ্রিল, ১৭৯৮ সালে, ফ্রান্সের Charenton-Saint-Maurice শহরে।

মৃত্যুবরণ করেন ১৩ আগস্ট, ১৮৬৩ সালে, প্যারিসে।

তিনি ছিলেন রোমান্টিসিজম (Romanticism) ধারার অন্যতম প্রধান চিত্রশিল্পী।

লাক্রোয়া ফরাসি চিত্রকলায় রোমান্টিক বিপ্লবের নেতা হিসেবে পরিচিত।

তাঁর কাজগুলোতে আবেগ, রঙ, ও নাটকীয়তার গভীর প্রকাশ দেখা যায়।

তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত চিত্রকর্ম হলো “Liberty Leading the People” (১৮৩০)।

এই চিত্রকর্মটি ফরাসি বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে পরিচিত।

“Liberty Leading the People” বর্তমানে Louvre মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।

লাক্রোয়া ছিলেন Jacques-Louis David-এর ক্লাসিকাল ধারার বিপরীতে রোমান্টিক ধারার প্রচারক।

তাঁর শিল্পে রঙের ব্যবহার ও আলো-অন্ধকারের বৈচিত্র্য ছিল অনন্য।

তিনি রঙকে রেখার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন।

লাক্রোয়া বলেছিলেন, “রঙ আমার জীবনের সঙ্গীত।”

তাঁর আঁকায় আবেগময় মুখভঙ্গি ও গতিশীল কম্পোজিশন চোখে পড়ে।

তাঁর প্রভাব পরবর্তীতে ইমপ্রেশনিস্টদের ওপর গভীরভাবে পড়ে।

লাক্রোয়া ছিলেন শিল্প ও সাহিত্যপ্রেমী।

তিনি শেক্সপিয়র, গোয়েথে, ও দান্তে আলিগিয়েরির সাহিত্য থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন।

তাঁর প্রথম বড় সাফল্য ছিল “The Barque of Dante” (১৮২২)।

এটি প্যারিস সেলনে প্রদর্শিত হয়েছিল এবং সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।

তিনি Antoine-Jean Gros ও Théodore Géricault দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন।

তাঁর চিত্রকর্মে সহিংসতা, সংগ্রাম, ও স্বাধীনতার চেতনা বিদ্যমান।

লাক্রোয়া ছিলেন রঙ ও আলোর সাহসী পরীক্ষক।

তিনি উত্তর আফ্রিকায় (Morocco, Algeria) ভ্রমণ করেছিলেন ১৮৩২ সালে।

মরক্কো সফরের অভিজ্ঞতা তাঁর শিল্পে এক নতুন দিক উন্মোচন করে।

আফ্রিকার রঙিন পোশাক, আলো, ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য তাঁর কাজের মূল প্রেরণা হয়।

তিনি “Women of Algiers in their Apartment” নামক বিখ্যাত ছবি আঁকেন।

এই চিত্রটি রোমান্টিক ও প্রাচ্য সংস্কৃতির সংমিশ্রণ।

তাঁর শিল্পে প্রায়ই ওরিয়েন্টালিজম (Orientalism) দেখা যায়।

তিনি বলেছিলেন, “রঙই আমার মুক্তি।”

তাঁর কাজের আরেকটি বিখ্যাত উদাহরণ “Death of Sardanapalus” (১৮২৭)।

এই চিত্রটি বিশাল আকারের ও অত্যন্ত নাটকীয়।

এতে লাক্রোয়া দেখিয়েছেন রাজা সার্দানাপালুসের আত্মবিনাশের মুহূর্ত।

এটি সমালোচকদের মধ্যে বিভক্ত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল।

লাক্রোয়া ছিলেন ফরাসি একাডেমির কঠোর নিয়মের বিরোধী।

তিনি “Romantic school”-এর প্রতিষ্ঠাতা চিত্রশিল্পীদের মধ্যে অন্যতম।

তাঁর জীবদ্দশায় তিনি প্রায় ৯,০০০ আঁকা ও স্কেচ তৈরি করেন।

তিনি ছিলেন দক্ষ ড্রাফটসম্যান (draftsman)।

লাক্রোয়া ছিলেন চেম্বার অফ ডেপুটিজ (Chambre des Députés)-এর সদস্য।

তিনি বহু গির্জা ও সরকারি ভবনের জন্য মুরাল পেইন্টিং করেছেন।

তাঁর মুরাল কাজ দেখা যায় Saint-Sulpice Church-এ।

Saint-Sulpice-এর মুরালে তিনি “Jacob Wrestling with the Angel” এঁকেছেন।

তিনি তাঁর জীবনে অত্যন্ত নিঃসঙ্গভাবে বসবাস করতেন।

তিনি কখনো বিয়ে করেননি।

লাক্রোয়া ছিলেন অত্যন্ত সংবেদনশীল ও অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

তিনি একাধিক ডায়েরি (Journal) লিখেছিলেন, যেখানে তাঁর ভাবনা ও শিল্পচিন্তা প্রকাশ পেয়েছে।

তাঁর ডায়েরি এখন শিল্পবিশ্বে এক মূল্যবান দলিল।

তিনি নিজের জীবন ও চিন্তা নিয়ে অনেক আত্মসমালোচনামূলক লেখালেখি করেছেন।

লাক্রোয়া ছিলেন Claude Lorrain ও Rubens-এর প্রশংসক।

তিনি Peter Paul Rubens-এর রঙ ও গতি থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

তিনি নিজেকে রুবেন্সের উত্তরসূরি মনে করতেন।

তাঁর কাজের একটি দিক হলো প্রকৃতির শক্তি ও মানবিক অনুভূতির সংঘর্ষ।

তিনি বলেছিলেন, “একজন শিল্পীকে তার রঙের মাধ্যমে চিনে নিতে হয়।”

তিনি প্রায়ই ঐতিহাসিক, পৌরাণিক, ও সাহিত্যিক বিষয় চিত্রায়ণ করেছেন।

তিনি Byron-এর রচনার ওপর ভিত্তি করে একাধিক ছবি এঁকেছিলেন।

যেমন, “The Combat of the Giaour and the Pasha”।

তাঁর শিল্পে রোমান্টিক নায়কের সংগ্রাম ও স্বাধীনতার তৃষ্ণা প্রতিফলিত।

লাক্রোয়া ফরাসি সমাজে ছিলেন একজন বুদ্ধিজীবী ও শিল্পদার্শনিক।

তিনি Louvre মিউজিয়ামে পুরাতন মাস্টারদের কাজ অধ্যয়ন করতেন।

তিনি ছিলেন এক নিষ্ঠাবান ছাত্র ও কঠোর পরিশ্রমী শিল্পী।

তাঁর প্রথম শিক্ষক ছিলেন Pierre-Narcisse Guérin।

তিনি École des Beaux-Arts-এ পড়াশোনা করেছিলেন।

তাঁর বন্ধুত্ব ছিল বিখ্যাত লেখক Charles Baudelaire-এর সঙ্গে।

বোদলেয়ার তাঁকে “রঙের কবি” বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।

Théophile Gautier-ও তাঁর কাজের প্রশংসা করেছিলেন।

লাক্রোয়া তাঁর সময়ের বাস্তববাদী আন্দোলনের আগমুহূর্তে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

তিনি শিল্পে আবেগ ও কল্পনার গুরুত্ব প্রচার করেছিলেন।

তাঁর কাজ Claude Monet ও Vincent van Gogh-এর মতো ইমপ্রেশনিস্টদের অনুপ্রাণিত করে।

ভ্যান গঘ বলেছিলেন, “লাক্রোয়া আমার হৃদয়ের একজন শিল্পী।”

তাঁর কাজের মধ্যে সঙ্গীত ও রঙের মিলন লক্ষ্য করা যায়।

তিনি Beethoven ও Chopin-এর সঙ্গীত ভালোবাসতেন।

লাক্রোয়া বলেছিলেন, “শিল্প হলো আবেগের প্রকাশ, যুক্তির নয়।”

তিনি নিজের জীবনে প্রায়ই অসুস্থ ছিলেন।

তবুও তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ চালিয়ে গেছেন।

মৃত্যুর আগে তিনি কাজ করছিলেন “Education of the Virgin” নামে একটি ধর্মীয় চিত্রে।

তাঁর মৃত্যুর পর তাঁকে Père Lachaise Cemetery-তে সমাধিস্থ করা হয়।

মৃত্যুর পর তাঁর কাজের প্রকৃত মূল্যায়ন শুরু হয়।

তাঁর স্টুডিও এখন Delacroix Museum নামে পরিচিত।

এই জাদুঘরটি প্যারিসে অবস্থিত।

সেখানে তাঁর আঁকা, স্কেচ, ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র সংরক্ষিত আছে।

লাক্রোয়া ছিলেন একাধারে চিত্রশিল্পী, লেখক ও চিন্তাবিদ।

তাঁর চিত্রকর্মে মানবজীবনের উত্তেজনা ও বেদনা প্রকাশিত।

তিনি রোমান্টিক স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হন।

তাঁর রঙের তীব্রতা ও আবেগময় স্পর্শ ছিল বিপ্লবাত্মক।

তিনি বলতেন, “শিল্পে সত্য মানে অনুভবের সত্য।”

তাঁর কাজগুলোতে অগোছালো শক্তি ও নান্দনিক ভারসাম্য একসাথে থাকে।

তিনি প্রায়ই আলোক-ছায়ার নাটকীয় ব্যবহার করেছেন।

তিনি ঘোড়া, যুদ্ধ, নারী, ও পৌরাণিক চরিত্র অঙ্কনে পারদর্শী ছিলেন।

তাঁর চিত্রে মানব দেহের গতি ও নাটকীয় ভঙ্গি স্পষ্ট।

তিনি ফরাসি শিল্পে নতুন রঙ তত্ত্বের প্রয়োগ করেন।

তাঁর রঙ ব্যবহারের নীতিতে পরে ইমপ্রেশনিজমের ভিত্তি গড়ে ওঠে।

লাক্রোয়া ছিলেন প্রকৃতি ও আলোর কবি।

তিনি রঙকে “মানুষের ভাষার চেয়ে বেশি শক্তিশালী” মনে করতেন।

তিনি অনেক আত্মপ্রতিকৃতি (self-portrait) এঁকেছিলেন।

তাঁর এক আত্মপ্রতিকৃতি বর্তমানে Louvre-এ প্রদর্শিত।

তিনি একবার বলেছিলেন, “রোমান্টিক মানে হচ্ছে স্বাধীন হওয়া।”

তাঁর কাজ ফরাসি জাতীয় চেতনার প্রতীক হয়ে ওঠে।

তাঁর “Liberty Leading the People” ছবিটি ফরাসি পতাকার রঙের প্রতিফলন।

এই ছবির নারী চরিত্র Marianne, স্বাধীনতার প্রতীক।

লাক্রোয়া শিল্পে আবেগ, রঙ ও মানবতার মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন।

আজ তিনি পরিচিত ফরাসি রোমান্টিক যুগের শ্রেষ্ঠতম শিল্পী হিসেবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top