গুস্তাভ কুরবে
গুস্তাভ কুরবে ছিলেন উনবিংশ শতকের ফরাসি বাস্তবতাবাদী আন্দোলনের প্রধান পথিকৃৎ
তিনি ১৮১৯ সালের ১০ জুন ফ্রান্সের ওর্নোঁ শহরে জন্মগ্রহণ করেন
তিনি শিল্পে প্রচলিত রোমান্টিকতা ও আদর্শবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন
কুরবে বিশ্বাস করতেন শিল্পকে সমাজের বাস্তব রূপ প্রদর্শন করতে হবে
তিনি ছিলেন প্রথম দিকের শিল্পীদের একজন যিনি “বাস্তববাদ” শব্দটি শিল্পে প্রয়োগ করেন
তার বিখ্যাত উক্তি ছিল “আমি ফেরেশতা আঁকব না, কারণ আমি কখনও একটিকে দেখিনি”
তার প্রাথমিক শিক্ষা ছিল সেমিনারি অব দ্য অটুনে
পরবর্তীতে তিনি প্যারিসে আইন পড়তে গিয়েছিলেন কিন্তু পরে পুরোপুরি চিত্রকলায় মনোযোগ দেন
তিনি ল্যুভর মিউজিয়ামে পুরনো মাস্টারদের কাজ অধ্যয়ন করে নিজের শৈলী গড়ে তোলেন
রেমব্রান্ট, কারাভাজ্জো এবং স্প্যানিশ শিল্পীরা তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেন
কুরবের চিত্রে আলো, ছায়া ও বাস্তবতার শক্তিশালী ব্যবহারের ছাপ দেখা যায়
তার চিত্রগুলোতে শ্রমজীবী মানুষের জীবন ও প্রাকৃতিক দৃশ্য প্রধান বিষয়বস্তু হিসেবে উপস্থিত
“দ্য স্টোন ব্রেকারস” তার অন্যতম বিখ্যাত চিত্রকর্ম
এই চিত্রে দুই শ্রমিকের কঠোর শ্রম ও সামাজিক বাস্তবতা নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে
“এ বুরিয়াল অ্যাট অর্নোঁ” ছিল তার আরেকটি বিতর্কিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কাজ
এই চিত্রে সাধারণ গ্রামের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দৃশ্যকে বিশাল আকারে উপস্থাপন করা হয়েছিল
সমালোচকরা বলেন এটি ধর্মীয় ও রোমান্টিক রীতির প্রতি কুরবের সরাসরি চ্যালেঞ্জ
তিনি মনে করতেন প্রতিটি মানুষ ও ঘটনা শিল্পের যোগ্য
কুরবে ছিলেন রাজনৈতিকভাবে প্রগতিশীল ও সমাজচেতনা সম্পন্ন শিল্পী
তিনি ১৮৪৮ সালের ফরাসি বিপ্লবের সমর্থক ছিলেন
তার শিল্পে জনগণের শক্তি ও শ্রমজীবী শ্রেণির মর্যাদা প্রতিফলিত হয়
তিনি “রিয়ালিজম” প্রদর্শনীর মাধ্যমে এক নতুন শিল্পধারা প্রতিষ্ঠা করেন
১৮৫৫ সালের প্যারিস এক্সপোজিশনে তার “দ্য পেইন্টার’স স্টুডিও” প্রদর্শিত হয়েছিল
এই চিত্রে তিনি নিজেকে, সমাজের মানুষ ও শিল্পের দর্শনকে একত্রে উপস্থাপন করেন
তিনি সরকারি সালোঁর প্রত্যাখ্যানের বিরুদ্ধে নিজস্ব প্রদর্শনী আয়োজন করেছিলেন
এই প্রদর্শনী শিল্প ইতিহাসে এক বিপ্লবী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়
কুরবে বিশ্বাস করতেন শিল্পীকে স্বাধীন হতে হবে ও কোনো কর্তৃপক্ষের অধীন থাকা উচিত নয়
তার শিল্পে প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে প্রকাশিত
তিনি সমুদ্রদৃশ্য ও প্রাকৃতিক দৃশ্যেও বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়েছেন
তার “দ্য ওয়েভস” বা “দ্য সি” সিরিজে প্রকৃতির শক্তি ফুটে ওঠে
কুরবে প্রায়ই নিজের শহর ও জন্মভূমির দৃশ্য আঁকতেন
তিনি নারী প্রতিকৃতিতেও সাহসী বাস্তবতা উপস্থাপন করেন
তার “দ্য অরিজিন অব দ্য ওয়ার্ল্ড” চিত্রটি ছিল অত্যন্ত বিতর্কিত
এই কাজ যৌনতা ও নারীর দেহকে এক অনাবৃত বাস্তব রূপে দেখিয়েছিল
এটি দীর্ঘদিন ধরে সেন্সরশিপের শিকার ছিল
কুরবে কোনো কল্পনা বা রূপকথার আশ্রয় নেননি
তিনি প্রাত্যহিক জীবনের সরলতা ও কঠোরতাকে চিত্রিত করতে ভালোবাসতেন
তার শিল্পে প্রতিটি ব্রাশস্ট্রোক দৃঢ় ও জীবন্ত
তিনি প্রকৃতির রুক্ষ সৌন্দর্য ও মানুষের বাস্তব মুখচিত্র তুলে ধরেছেন
তার কাজ অনেক সময় রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবেও দেখা হয়
ফরাসি কমিউনের সময় তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন
প্যারিস কমিউনের সময় তিনি কলাম দ্য ভঁদোম ভাঙার সিদ্ধান্তে যুক্ত ছিলেন
এর জন্য তাকে পরে কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়
জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি সুইজারল্যান্ডে নির্বাসিত জীবন কাটান
সুইজারল্যান্ডেই তিনি জীবনের শেষ দিনগুলো কাটান
১৮৭৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়
তার মৃত্যু হয় লিভারের রোগে, যা অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে হয়েছিল
তিনি মৃত্যুর আগে পর্যন্ত আঁকা চালিয়ে গিয়েছিলেন
কুরবের বাস্তববাদ পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পীদের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে
ইমপ্রেশনিস্টরা তার স্বাধীনতা ও বাস্তবধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অনুপ্রাণিত হন
মনে, মানে ও পিসারোর মতো শিল্পীরা তার পথ অনুসরণ করেন
তিনি আধুনিক শিল্পের জনক হিসেবেও বিবেচিত
তার শিল্প প্রচলিত সৌন্দর্যবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে
তিনি শিল্পকে অভিজাত শ্রেণির দখল থেকে সাধারণ মানুষের হাতে ফিরিয়ে দেন
তার শিল্প দর্শনে স্বাধীনতা ও সততা ছিল মূল মূল্যবোধ
কুরবে সমাজ, রাজনীতি ও প্রকৃতিকে একত্রে দেখতে চেয়েছিলেন
তিনি শিল্পকে জীবনের প্রতিচ্ছবি হিসেবে গণ্য করতেন
তার কাজ ইতিহাসে বাস্তবতাবাদের সূচনা চিহ্নিত করে
তিনি রোমান্টিকতার আবেগ থেকে বাস্তবতার কঠোর সত্যে রূপান্তর ঘটান
তার চিত্রের রঙ ছিল গাঢ়, মাটির টোন ও ছায়াময় আলোয় পরিপূর্ণ
তিনি আলোর ব্যবহারকে প্রাকৃতিকভাবে উপস্থাপন করতেন
তার ছবিতে দৃশ্যমান বস্তুর ওজন, ঘনত্ব ও গঠন বাস্তবতার অনুভূতি দেয়
তিনি মানুষের হাত, মুখ ও শ্রমের রেখাগুলিকে শক্তিশালীভাবে আঁকতেন
তার শিল্পে ভণ্ডামি বা অলঙ্কারিক শোভা ছিল অনুপস্থিত
তিনি নিজের শিল্পে কোনো রকম সৌন্দর্যের অতিরঞ্জন করেননি
তিনি চেয়েছিলেন শিল্প যেন সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসে
কুরবে বাস্তবতাকে মহিমান্বিত করেছেন, ছোট করে দেখেননি
তিনি বিশ্বাস করতেন সত্যই শিল্পের একমাত্র নীতি
তার শিল্প আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের ভাবধারার সঙ্গে মিল পায়
তিনি প্রকৃতি ও মানবতার গভীর দার্শনিক অনুসন্ধান করেছেন
তার জীবনযাপন ছিল স্বতন্ত্র, বিদ্রোহী ও নির্ভীক
তিনি প্রায়ই সমাজ ও সরকারের সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন
তবুও তিনি নিজের বিশ্বাস থেকে এক ইঞ্চিও সরেননি
তার মৃত্যুর পর তার শিল্পের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায়
বাস্তববাদী আন্দোলন তার হাত ধরেই ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে
তার প্রভাব সিনেমা, সাহিত্য ও সমাজচিন্তাতেও দেখা যায়
কুরবে ছিলেন এক সত্যিকারের মুক্তচিন্তার শিল্পী
তার শিল্পের মূল ছিল সাহস, বাস্তবতা ও মানবতা
আজও তার চিত্রকর্ম বিশ্বজুড়ে শিল্প সংগ্রহে স্থান পেয়েছে
ল্যুভর, অর্সে ও অন্যান্য মিউজিয়ামে তার কাজ প্রদর্শিত
তিনি প্রমাণ করেছিলেন শিল্প শুধুমাত্র সৌন্দর্যের নয়, সত্যেরও প্রকাশ
গুস্তাভ কুরবে চিরকাল স্মরণীয় থাকবেন বাস্তবতার অবিচল শিল্পযোদ্ধা হিসেবে











