John Constable

John Constable

জন কনস্টেবল জন্মগ্রহণ করেন ১১ জুন ১৭৭৬ সালে ইংল্যান্ডের সাফোক কাউন্টির ইস্ট বার্ঘল্ট গ্রামে
তাঁর পিতার নাম গোল্ডিং কনস্টেবল, যিনি একটি ধনী কর্ন-বাণিজ্যিক পরিবারের প্রধান ছিলেন
তাঁর মায়ের নাম ছিল অ্যান কনস্টেবল
তিনি পারিবারিকভাবে মধ্যবিত্ত শ্রেণির হলেও সচ্ছল ছিলেন
ছোটবেলায় কনস্টেবল প্রকৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা অনুভব করেন
গ্রামের চারপাশের নদী, গাছপালা ও খামার তাঁর ভবিষ্যৎ চিত্রগুলোর প্রধান অনুপ্রেরণা হয়
তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় ডেডহ্যাম গ্রামার স্কুলে
তিনি ১৭৯৯ সালে লন্ডনের রয়্যাল একাডেমি অব আর্টসে ভর্তি হন
শুরুতে তাঁর পরিবার চেয়েছিল তিনি পিতার ব্যবসা গ্রহণ করুন
কিন্তু শিল্পের প্রতি গভীর আকর্ষণ তাঁকে সেই পথে নিয়ে যায়নি
কনস্টেবল ছিলেন প্রকৃতির প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষক
তিনি বিশ্বাস করতেন প্রকৃতিকে তার আসল আলো ও আবহে আঁকতে হবে
তাঁর চিত্রশৈলীর মূল বৈশিষ্ট্য ছিল বাস্তবধর্মী ল্যান্ডস্কেপ চিত্র
তিনি কৃত্রিম নাটকীয়তা বা ঐতিহাসিক দৃশ্য এড়িয়ে চলতেন
তাঁর বিখ্যাত উক্তি “Painting is but another word for feeling”
তিনি প্রায়ই বলতেন “I should paint my own places best”
তাঁর প্রিয় বিষয় ছিল সাফোকের গ্রামীণ এলাকা ও স্টোর নদী (River Stour)
তাই তাঁর ছবিগুলিকে প্রায়ই বলা হয় The Stour Valley Paintings
তাঁর আঁকা দৃশ্যগুলোতে ইংল্যান্ডের শান্ত প্রকৃতি জীবন্ত হয়ে ওঠে
তাঁর প্রথম গুরুত্বপূর্ণ চিত্র ছিল Dedham Vale (১৮০২)
১৮০৯ সালে তিনি মারিয়া বিকনেল (Maria Bicknell)-এর প্রেমে পড়েন
মারিয়া ছিলেন একজন বিচারপতির কন্যা, তাই তাঁদের সম্পর্ক বাধার সম্মুখীন হয়
দীর্ঘ বিরোধের পর তাঁরা ১৮১৬ সালে বিবাহ করেন
বিবাহের পর তাঁরা হামস্টেডে বসবাস শুরু করেন
মারিয়া কনস্টেবলকে বহু চিত্রের অনুপ্রেরণা দেন
তাঁদের সাতটি সন্তান জন্মেছিল
কিন্তু মারিয়া ১৮২৮ সালে যক্ষ্মায় মারা যান
স্ত্রীর মৃত্যু কনস্টেবলকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে দেয়
এরপর তাঁর কাজের মধ্যে বিষণ্ণতার ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে
তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ হলো The Hay Wain (১৮২১)
এই চিত্রে স্টোর নদীর তীরে গাড়ি টানছে ঘোড়া—একটি শান্ত, বাস্তবধর্মী দৃশ্য
The Hay Wain এখন লন্ডনের ন্যাশনাল গ্যালারিতে সংরক্ষিত
এই চিত্রটি ফরাসি শিল্পী ও সমালোচকদের মধ্যে প্রবল প্রশংসা অর্জন করে
এমনকি ফরাসি রোমান্টিক চিত্রশিল্পী ইউজেন দ্য লাক্রোয়া তাঁর কাজ দ্বারা প্রভাবিত হন
কনস্টেবল ফ্রান্সে প্রথম স্বীকৃতি পান, ইংল্যান্ডে নয়
তাঁর ছবি ১৮২৪ সালে প্যারিস স্যালনে প্রদর্শিত হয় এবং পদক লাভ করে
ফরাসি শিল্পী কোরো (Jean-Baptiste-Camille Corot) কনস্টেবলের আলো ও রঙ ব্যবহারে প্রভাবিত হন
তাঁর আরেক বিখ্যাত কাজ The Leaping Horse (১৮২৫)
The White Horse (১৮১৯) ছিল তাঁর প্রথম বড় মাপের ‘ছয়-ফুট’ ল্যান্ডস্কেপ
তাঁর six-footers সিরিজটি বিশেষভাবে বিখ্যাত
এই সিরিজে তিনি বিশাল ক্যানভাসে বাস্তব দৃশ্যের মহিমা ফুটিয়ে তুলেছেন
তিনি প্রায়ই আকাশের পরিবর্তনশীল রূপ নিয়ে গবেষণা করতেন
কনস্টেবল প্রায় ১০০টিরও বেশি আকাশচিত্র (cloud studies) এঁকেছেন
তাঁর আকাশচিত্রগুলো বৈজ্ঞানিক নির্ভুলতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণমূলক ছিল
তিনি বলতেন “The sky is the chief organ of sentiment in a landscape”
তাঁর চিত্রে মেঘ, আলো, ছায়া, বৃষ্টি ও ঝড়ের সূক্ষ্ম বৈচিত্র্য ফুটে ওঠে
তিনি প্রকৃতিকে “দিব্য বাস্তবতা” হিসেবে দেখতেন
কনস্টেবল প্রায়ই বাইরে (en plein air) স্কেচ করতেন, যা তখন নতুন পদ্ধতি ছিল
তাঁর কাজ ইমপ্রেশনিস্ট আন্দোলনের পূর্বসূরী হিসেবে বিবেচিত হয়
তিনি রঙের আলোক-প্রতিফলন বুঝতে পেরেছিলেন আধুনিকদের আগে
তাঁর রঙ ব্যবহারে ছিল স্বচ্ছতা ও কোমলতা
তিনি প্রায়ই ছড়ানো ব্রাশস্ট্রোক ব্যবহার করতেন, যা সেই সময়ে অস্বাভাবিক ছিল
কনস্টেবলের কাজ প্রাথমিকভাবে লন্ডনে খুব একটা প্রশংসা পায়নি
সমসাময়িক অনেক শিল্পী ঐতিহাসিক বা পৌরাণিক দৃশ্য আঁকতে পছন্দ করতেন
কিন্তু কনস্টেবল বলতেন “The sound of water escaping from mill dams will always be as sweet music to me”
তিনি গ্রামীণ জীবনের সাধারণ মুহূর্তগুলোকে শিল্পে পরিণত করেছিলেন
তাঁর আঁকার ধারা রোমান্টিক হলেও, উপস্থাপন ছিল বাস্তববাদী
প্রকৃতি তাঁর কাছে আবেগ, ধর্ম ও সত্যের উৎস ছিল
তিনি মনে করতেন “Nature is the fountain’s head, the source of all originality”
তিনি ছিলেন খুবই নিঃস্বার্থ ও শান্ত প্রকৃতির মানুষ
জীবনের শেষ দিকে তিনি আর্থিক কষ্টে ভুগেছিলেন
১৮৩১ সালে তিনি রয়্যাল একাডেমির পূর্ণ সদস্য হন
তিনি পরে চিত্রশিল্পের অধ্যাপক হিসেবেও কাজ করেন
তাঁর বক্তৃতাগুলোয় তিনি শিল্পে “সত্য ও অনুভূতি”র গুরুত্ব শেখাতেন
তিনি ৩১ মার্চ ১৮৩৭ সালে লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন
মৃত্যুর পর তাঁর দেহ সমাহিত হয় হামস্টেড চার্চইয়ার্ডে
মৃত্যুর পর তাঁর খ্যাতি ক্রমে বাড়তে থাকে
১৯শ শতকের শেষভাগে তিনি ইংল্যান্ডে জাতীয় গর্বে পরিণত হন
তাঁর কাজ বর্তমানে ব্রিটিশ শিল্পের অবিচ্ছেদ্য অংশ
The Hay Wain ব্রিটেনের সবচেয়ে প্রিয় চিত্রগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত
তাঁর ছবিতে ইংরেজ গ্রামের স্নিগ্ধ সৌন্দর্য ধরা পড়ে
তিনি চিত্রকলায় আবেগ ও প্রকৃতিকে একত্র করেছেন
তাঁর স্টাইলকে বলা হয় naturalistic romanticism
তিনি প্রকৃতিকে আর্টিস্টিকভাবে নয়, মানবিকভাবে দেখেছিলেন
তাঁর শিল্পে আলো ও আবহাওয়া একসাথে নৃত্য করে
তাঁর প্রতিটি গাছ, নদী, মেঘ যেন জীবন্ত অনুভূতির প্রতিফলন
তিনি রাফায়েলের মতো প্রযুক্তি নয়, বরং হৃদয়কে প্রাধান্য দেন
কনস্টেবল নিজেকে বলতেন “a man of my own fields”
তিনি প্রকৃতির ‘সত্যতা’কে শিল্পের ভিত্তি বানিয়েছিলেন
তাঁর কাজ পরবর্তীকালে ইমপ্রেশনিস্টদের পথ খুলে দেয়
মোনে ও পিসারো কনস্টেবলকে তাঁদের পূর্বসূরী হিসেবে স্বীকার করেছেন
তিনি ব্রিটিশ ল্যান্ডস্কেপ পেইন্টিংকে নতুন মর্যাদা দেন
তাঁর ছবি স্থানীয় জীবন ও প্রকৃতির সাথে গভীর সংযোগ স্থাপন করে
তিনি গ্রামের সাধারণ মানুষদের প্রতি গভীর সহানুভূতি দেখাতেন
তাঁর স্কেচবুকগুলো এখন ঐতিহাসিক সম্পদ হিসেবে বিবেচিত
তাঁর রচনায় painterly truth শব্দটি বিশেষভাবে আলোচিত
কনস্টেবল ফটোগ্রাফির আগে প্রকৃতির সত্য প্রকাশে বিপ্লব ঘটান
তিনি বলতেন “No two days are alike, nor even two hours”
তিনি প্রকৃতির ক্ষণস্থায়ী রূপগুলোকে ধরতে চাইতেন
তাঁর অনেক ছোট তেলচিত্র ছিল সরাসরি প্রকৃতির পর্যবেক্ষণ
এসব ছোট কাজেই তাঁর অন্তর্দৃষ্টি সবচেয়ে স্পষ্ট
তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রকৃতিকে ভালোবাসা ছাড়া সত্যিকারের শিল্প সম্ভব নয়
মৃত্যুর পর তাঁর সন্তানরা তাঁর চিত্র বিক্রি করে পরিবার চালান
আজ তাঁর কাজ লন্ডন, প্যারিস, নিউইয়র্কসহ বিশ্বের প্রধান জাদুঘরগুলোয় রক্ষিত
তিনি আজও ইংল্যান্ডের গ্রামীণ আত্মার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত
তাঁর শিল্প আমাদের শেখায় — প্রকৃতিই মানবতার চিরন্তন শিক্ষক

এইভাবেই জন কনস্টেবল তাঁর তুলি ও রঙের মাধ্যমে ইংল্যান্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অনন্তের সঙ্গে যুক্ত করে গেছেন — তিনি ছিলেন “প্রকৃতির কবি”, যার চিত্রে আলো, মেঘ, বাতাস ও আবেগ এক অবিচ্ছিন্ন সুরে মিশে আছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top