Filmmaking – 02

১১. চিত্রনাট্য কী?

সংজ্ঞা ভূমিকা

  • চিত্রনাট্য (Screenplay) হল সেই লিখিত দলিল যেখানে গল্প, চরিত্র, সংলাপ, দৃশ্যবিন্যাস (Scene Breakdown) এবং ঘটনার ক্রমধারা সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ থাকে।
  • এটি শুধু সংলাপ বা বিবরণ নয়, বরং পুরো চলচ্চিত্রটির ন্যারেটিভ কাঠামো। চিত্রনাট্য পড়েই একজন পরিচালক, প্রযোজক, কিংবা অভিনয়শিল্পী বুঝতে পারেন কীভাবে গল্প এগোবে, কোথায় ঘটনার মোড় ঘুরবে, চরিত্ররা কী বলবে বা করবে।

কেন চিত্রনাট্য গুরুত্বপূর্ণ

  1. পরিকল্পনা নির্দেশনা: শুটিংয়ের সময় কোন দৃশ্য কীভাবে ধারণ করতে হবে, লোকেশন, পোশাক, অ্যাকশন ইত্যাদির ধারণা beforehand পাওয়া যায়।
  2. সমন্বয়: টিমের সবাই (পরিচালক, অভিনেতা, প্রোডাকশন ডিজাইনার, চিত্রগ্রাহক) একই দৃষ্টিভঙ্গি এবং পরিকল্পনার উপর কাজ করতে পারেন।
  3. গল্পের ধারাবাহিকতা: চিত্রনাট্যের সাহায্যে গল্পের শুরু, মধ্য ও শেষের অন্তর্লীন সংযোগগুলো একত্রে সহজে সামঞ্জস্য রাখা যায়।

১২. তিন অঙ্কের কাঠামো (Three Act Structure)

চিত্রনাট্যের সর্বাধিক প্রচলিত কাঠামো হল তিন অঙ্কের কাঠামো। এটি মূলত পশ্চিমা গল্প বলার পদ্ধতি হলেও বিশ্বের প্রায় সব জায়গাতেই জনপ্রিয়।

  1. অ্যাক্ট (প্রস্তাবনা/সূচনা)
    1. গল্পের চরিত্র, স্থান, সময় ও প্রাথমিক সংঘাত বা সমস্যা এখানে পরিচিত হয়।
    1. প্রোটাগনিস্ট (মূল চরিত্র) কী চায়, তার লক্ষ্য কী—তা স্পষ্ট করা হয়।
    1. সিনেমার টোন বা মুড নির্ধারণ করে দেয় এই অংশ।
  2. অ্যাক্ট (সংঘাত/উত্থান)
    1. প্রধান সমস্যাকে ঘিরে নানা বাধা-সংঘাত তৈরি হয়। চরিত্র তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য লড়াই করে।
    1. চরিত্রের মানসিক ও বাহ্যিক পরিবর্তন (Character Arc) বেশি স্পষ্ট হয় এই অংশে।
    1. এখানে একটি “মিডপয়েন্ট” বা মাঝের বড় মোড় (Plot Point) আসতে পারে, যা গল্পকে নতুন দিকে ঠেলে দেয়।
  3. অ্যাক্ট (পরিণতি/সমাধান)
    1. চূড়ান্ত সংঘাত বা সমস্যার মোকাবিলা হয়, গল্প সমাধানের দিকে এগিয়ে যায়।
    1. চরিত্রের বিকাশ বা ব্যর্থতা—দুটিই এখানে পরিষ্কার হয়ে ওঠে।
    1. সিনেমা শেষ হওয়ার সময় দর্শককে গল্পের একটি সম্পূর্ণ চিত্র (Resolution) প্রদান করা হয়।

উদাহরণ

  • অ্যাক্ট ১: মূল চরিত্রকে চেনা ও তার সমস্যার বীজ বোনা।
  • অ্যাক্ট ২: সেই সমস্যা সমাধানে চরিত্রের সংগ্রাম, বাধা ও চ্যালেঞ্জ।
  • অ্যাক্ট ৩: শেষ লড়াই বা দ্বন্দ্ব শেষে পরিণতি, যেখানে সমস্যার সমাধান বা নতুন বাস্তবতা মেনে নেওয়া হয়।

১৩. চরিত্র নির্মাণ বিকাশ

চরিত্রের গুরুত্ব

  • যে কোনও গল্পের মূল চালিকাশক্তি হল চরিত্র। চরিত্রের ইচ্ছা, অভ্যাস, সংলাপ ও ব্যবহার—এসবের মাধ্যমেই গল্প প্রাণ পায়।
  • একটি বিশ্বাসযোগ্য চরিত্র তৈরি করতে হলে তার পটভূমি (Background), মানসিক গঠন, শক্তি-দুর্বলতা, লক্ষ্য ও দ্বন্দ্ব (Conflict) সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হয়।

চরিত্র নির্মাণের প্রক্রিয়া

  1. ব্যাকস্টোরি (Backstory): চরিত্র কোথা থেকে আসল, তার অতীত জীবন কেমন ছিল, কী অভিজ্ঞতা তাদের এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে—এসব ঠিক করে নিলে চরিত্রের কাজ ও ভাবনা বিশ্বাসযোগ্য হয়।
  2. আর্ক (Arc): সিনেমার সময়কালে চরিত্র কীভাবে পরিবর্তিত হয় (Growth or Transformation), সেটাই তাদের আর্ক। কেউ হতে পারে আরও সাহসী কিংবা আরও দায়িত্ববান, অথবা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়তে পারে—এর মাধ্যমেই গল্পে ইমোশনাল গভীরতা আসে।
  3. ধর্ম, সামাজিক পটভূমি, ভাষা সংস্কৃতি: চরিত্রের সংলাপ ও আচরণে তার সমাজ ও সংস্কৃতির ছাপ স্পষ্ট হলে গল্প becomes richer and more authentic।

চরিত্রের ধরন

  • প্রোটাগনিস্ট (Protagonist): মূল চরিত্র বা নায়ক, যার দৃষ্টিকোণ থেকে গল্প দেখা হয়।
  • অ্যান্টাগনিস্ট (Antagonist): প্রধান বাধা সৃষ্টিকারী চরিত্র বা শক্তি।
  • সাপোর্টিং ক্যারেক্টার (Supporting Character): গল্পে সহায়ক বা পরিপূরক ভূমিকা পালন করে, মূল চরিত্রকে এগিয়ে যেতে সাহায্য বা বাধা দেয়।

১৪. ডায়লগ লেখার কৌশল

ডায়লগের ভূমিকা

  • ডায়লগ দিয়ে চরিত্র নিজের উদ্দেশ্য, আবেগ, ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে। একই সঙ্গে গল্পের প্রয়োজনে তথ্য (Exposition) শেয়ার করতেও ডায়লগ ব্যবহৃত হয়।
  • কেবল তথ্যবহুল কথা বলার চেয়ে চরিত্রের মনোজগত বা সম্পর্ককে ফুটিয়ে তুলতে ডায়লগ অনেক বেশি কার্যকর। “Show, don’t tell” নীতির আওতায় অনর্থক কথার বদলে সংলাপকে অর্থপূর্ণ রাখতে হয়।

ডায়লগ লেখার সময় মাথায় রাখবেন

  1. চরিত্রের স্বকীয়তা (Voice): প্রতিটি চরিত্রের বয়স, পেশা, সামাজিক অবস্থান, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি ভিন্ন হবে। সেই অনুযায়ী তাদের কথা বলার ধরনও আলাদা হতে হবে।
  2. সংক্ষিপ্ততা: দীর্ঘ ও অপ্রয়োজনীয় সংলাপ গল্পের গতি কমিয়ে দেয়। প্রয়োজনীয় তথ্য ও আবেগ যথাসম্ভব সংক্ষিপ্তভাবে প্রকাশ করুন।
  3. উপলক্ষ্য (Subtext): অনেক সময় চরিত্র স্পষ্টভাবে কিছু না বলেও বিশেষ কিছু বোঝানোর চেষ্টা করে। ডায়লগের নিচে লুকিয়ে থাকে আসল অভিপ্রায়। এটা গল্পকে রহস্যময় ও আকর্ষণীয় করে তোলে।

উদাহরণ

  • এক আত্মবিশ্বাসী চরিত্র সবসময় চোখে চোখ রেখে সংক্ষিপ্ত ও দৃঢ় ডায়লগ বলবে, আর লাজুক বা দ্বিধাগ্রস্ত চরিত্র কথাবার্তায় বারবার ইতস্তত করবে, হয়তো আধাআধি বাক্য বলবে।

১৫. চিত্রনাট্য ফরম্যাটিং উদাহরণ

চিত্রনাট্য ফরম্যাটিং

  • সাধারণত চিত্রনাট্য লেখা হয় একটি নির্দিষ্ট মান বা ফরম্যাট অনুসরণ করে। ইংরেজি স্ক্রিনপ্লে লেখার ক্ষেত্রে “Courier” ফন্ট, ১২ পয়েন্ট সাইজ, ও নির্দিষ্ট মার্জিন মানা হয়। বাংলা চিত্রনাট্য লেখার সময়ও প্রয়োজনীয় বিন্যাস ও ডকুমেন্ট স্টাইল বজায় রাখা উচিত।
  • প্রতিটি দৃশ্যের আগে ইন্ট./এক্সট., লোকেশন, দিন/রাত উল্লেখ করা হয়।
    – উদাহরণ: ইন্ট. রুম দিন বা এক্সট. পার্ক সন্ধ্যা
  • সংলাপ লেখার সময় চরিত্রের নাম বড় অক্ষরে (বোল্ড বা ক্যাপিটাল লেটার) লিখে তারপর সংলাপ।
    – উদাহরণ:
    রাহুল (উত্তেজিত স্বরে)
    “তুমি কি সত্যি ভাবছো আমি এটা করতে পারবো?”

দৃশ্য বর্ণনা (Action/Scene Description)

  • দৃশ্যের মধ্যে কী ঘটছে বা চরিত্র কী করছে তা সংক্ষেপে ও স্পষ্টভাবে লেখা হয়। তবে অতিরিক্ত সাহিত্যিকতা পরিহার করে সিনেমাটিকভাবে বর্ণনা করা শ্রেয়।
  • উদাহরণ:
    রাহুল ধীরে ধীরে দরজা খুলে ঘরে ঢোকে, চারিদিকে তাকায় বিছানার ওপর ছড়িয়ে আছে খাম ছবি

মান অবজার্ভেশনে

  • চিত্রনাট্য পরিচালক, অভিনেতা বা কলাকুশলীদের জন্য দিকনির্দেশনা, তাই এটিকে পড়ে যেন তাঁরা স্পষ্ট ধারণা পান।
  • সংলাপ ও অ্যাকশন লিখে রাখার সময় অন্যান্য কলাকুশলীর জন্য সংশ্লিষ্ট নির্দেশনাও (যেমন কীভাবে আলো বা সঙ্গীত ব্যবহার হবে) যুক্ত করা যায়, তবে খুব বিস্তারিত নয়।

১৬. স্টোরিবোর্ডিং ভিজ্যুয়ালাইজেশন

স্টোরিবোর্ড (Storyboard)

  • চিত্রনাট্যের দৃশ্যগুলি কীভাবে চিত্রায়িত হবে তার একটি চিত্রাংকন (Drawn) বা ফ্রেম-বাই-ফ্রেম দৃশ্যপটই স্টোরিবোর্ড।
  • পরিচালক ও চিত্রগ্রাহকের (DP) মধ্যে বোঝাপড়া বাড়ানোর পাশাপাশি প্রোডাকশন ডিজাইনে সহায়তা করে।
  • চিত্রনাট্যের পাশাপাশি স্টোরিবোর্ড থাকলে শুটিংয়ের দিন অনেক সহজে বোঝা যায় কোন অ্যাঙ্গেলে শট নেয়া হবে, কেমন লাইটিং ব্যবহার হবে ইত্যাদি।

ভিজ্যুয়ালাইজেশন প্রক্রিয়া

  • শটের কম্পোজিশন, ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল, চরিত্রের অবস্থান—এসব বিষয় অঙ্কিত বা ডিজিটালভাবে তৈরি করা হয়।
  • বড় প্রযোজনা সংস্থায় পেশাদার স্টোরিবোর্ড আর্টিস্ট থাকেন, তবে ছোট দলের ক্ষেত্রেও সাধারণ স্কেচ বা ছবির কোলাজের মাধ্যমে পরিকল্পনা করা সম্ভব।

উদাহরণ

  • ধরুন, চিত্রনাট্যে লেখা আছে: “রাহুল খোলা মাঠের মাঝখানে একা দাঁড়িয়ে আছে।” স্টোরিবোর্ডে তার চিত্র হতে পারে—ওয়াইড শটে রাহুলকে মাঠের কেন্দ্রে রাখা হয়েছে, ফ্রেমের চারপাশে ফাঁকা জায়গা, আকাশে মেঘ। এভাবেই গল্পের আবহ ও মুড নির্দিষ্ট করা যায়।

উপসংহার

এই পর্বের সারমর্ম

  • চিত্রনাট্য রচনা চলচ্চিত্র নির্মাণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। একটি সুসংগঠিত চিত্রনাট্য না থাকলে গল্পের ধারাবাহিকতা ও চরিত্রের বিকাশ ঠিকমতো বাস্তবায়িত হয় না।
  • তিন অঙ্কের কাঠামো, চরিত্রের শক্তিশালী ভিত্তি, সংলাপ লেখার সময় স্বকীয় ভাষা ও সংক্ষিপ্ততার নিয়ম, এবং সঠিক ফরম্যাট ব্যবহার করে চিত্রনাট্য রচনা করা যায়।
  • স্টোরিবোর্ড ও ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে সেই চিত্রনাট্যকে চোখের সামনে এনে শুটিংয়ের আগেই পরিকল্পনা করা সম্ভব।

চিত্রনাট্য ভালোভাবে গড়ে উঠলে পরবর্তী ধাপে — যেমন প্রি-প্রোডাকশন, কাস্টিং, শুটিং, পোস্ট-প্রোডাকশন — সবকিছুই অনেক সহজ ও সুশৃঙ্খলভাবে করা যায়। পরবর্তী পর্বে আমরা যাব প্রিপ্রোডাকশন (Pre-Production)-এ, যেখানে বাজেট, কাস্টিং, লোকেশন, সেট ডিজাইন এবং শুটিং শিডিউল নির্ধারণের মতো বিষয়গুলিকে বিশদভাবে তুলে ধরা হবে।

১৭. চলচ্চিত্র পরিকল্পনা বাজেট নির্ধারণ

চলচ্চিত্র পরিকল্পনা

  • গল্প ও চিত্রনাট্যের ওপর ভিত্তি করে গোটা নির্মাণ প্রক্রিয়ার একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়।
  • কীভাবে শুটিং হবে, কোথায় হবে, প্রয়োজনীয় দিনের সংখ্যা, কলাকুশলীর তালিকা—এসব পরিকল্পনা প্রি-প্রোডাকশনের সময়ই গঠিত হয়।
  • যে শৈলী বা ভিজ্যুয়াল লুক (Visual Look) চূড়ান্ত করা হয়েছে, সেটি ধরে টিমের প্রত্যেককে সমন্বিত দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।

বাজেট নির্ধারণ

  • চলচ্চিত্রের প্রতিটি ধাপে (প্রি-প্রোডাকশন, প্রোডাকশন, পোস্ট-প্রোডাকশন) আনুমানিক কত খরচ হবে তার একটি তালিকা তৈরি করা হয়।
  • বড় বাজেটের ছবিতে মূলত প্রযোজক, প্রযোজনা সংস্থা, কিংবা বিনিয়োগকারী থাকেন, যারা প্রকল্পে অর্থায়ন করেন। স্বল্প বাজেটের বা স্বাধীন চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে নির্মাতার নিজস্ব সঞ্চয়, বন্ধু বা পরিচিতদের সহায়তা, কিংবা ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করা হতে পারে।
  • বাজেট নির্ধারণে প্রযোজক এবং ইউনিটের বিভিন্ন শাখার (ক্যামেরা, আলো, সাউন্ড, আর্ট ডিপার্টমেন্ট) প্রধানদের মধ্যে আলোচনা ও সমন্বয় অপরিহার্য।

বাজেটের গুরুত্ব

  • বাজেট সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে না পারলে শুটিংয়ের মাঝপথে এসে অর্থসংকট দেখা দিতে পারে। এতে পরিকল্পনা বিঘ্নিত হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে ছবিই শেষ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
  • বাজেট থাকলে কোথায় কাটছাট করা যেতে পারে, কীভাবে খরচ কমিয়ে আনা যায়—এমন সিদ্ধান্ত প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হয়।

১৮. কাস্টিং: অভিনেতা নির্বাচন অডিশন

কাস্টিং প্রক্রিয়া

  • চিত্রনাট্যে উল্লিখিত চরিত্রগুলোর সাথে মানানসই অভিনেতাদের খোঁজ করাই কাস্টিংয়ের প্রধান কাজ।
  • বড় প্রযোজনা সংস্থায় প্রায়ই কাস্টিং ডিরেক্টর থাকেন, যিনি প্রাথমিকভাবে অভিনেতাদের প্রোফাইল বাছাই, অডিশন আয়োজন এবং প্রযোজক-পরিচালকের সাথে পরামর্শ করে নির্বাচন চূড়ান্ত করেন।
  • কখনো কখনো নামী অভিনেতাদের সংশ্লিষ্ট এজেন্টের সাথে আলোচনার মাধ্যমে কাস্ট চূড়ান্ত করা হয়।

অডিশন

  • অডিশনে অভিনেতাদের অভিনয় দক্ষতা, সংলাপ বলার ধরন, অভিব্যক্তি (Expression), দেহের অঙ্গভঙ্গি (Body Language) ইত্যাদি যাচাই করা হয়।
  • পরিচালকের পক্ষে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, কারণ ঠিকঠাক অভিনেতা না হলে চরিত্র জীবন্ত হয়ে ওঠে না।
  • চরিত্র ভেদে বিশেষ কিছু প্রয়োজন (যেমন গানের দক্ষতা, নাচ, অ্যাকশন সিকোয়েন্সে পারদর্শিতা) থাকলে সেসব বিষয়ও অডিশনের সময় যাচাই করা হয়।

রসায়ন পরীক্ষা (Chemistry Test)

  • কেন্দ্রীয় চরিত্র বা জুটি থাকলে (যেমন নায়ক-নায়িকা, বা দুই বন্ধুর চরিত্র) তাদের একসাথে অডিশনের মাধ্যমে বোঝা হয় দুজনের স্ক্রিনের সম্পর্ক (On-screen Chemistry) কেমন।
  • গল্পের প্রয়োজনে তাদের মধ্যে বোঝাপড়া ও স্বতঃস্ফূর্ততা থাকা জরুরি।

১৯. লোকেশন স্কাউটিং সেট ডিজাইন

লোকেশন স্কাউটিং

  • চিত্রনাট্যে যে ধরনের লোকেশনের প্রয়োজন (শহর, গ্রাম, সমুদ্র সৈকত, বন, ঐতিহাসিক ভবন ইত্যাদি), সেগুলো বাস্তবে খুঁজে বের করার প্রক্রিয়াই লোকেশন স্কাউটিং।
  • একই রকমের লোকেশন পেতে হলে অনেক সময় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখতে হয়। পরিবেশ, আলো, শব্দদূষণ, যাতায়াত—সবই বিবেচনায় আনতে হয়।
  • লোকেশনের জন্য অনুমতি (Permission) ও প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি বা বেসরকারি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া শুটিং করা যায় না।

সেট ডিজাইন

  • কখনো বাস্তব লোকেশনে শুটিং সুবিধাজনক হয় না বা গল্পের প্রয়োজন অনুযায়ী সেট তৈরি করতে হয়।
  • আর্ট ডিরেক্টর বা প্রোডাকশন ডিজাইনার পরিচালকের সঙ্গে বসে সেটের রূপরেখা তৈরি করেন। দেয়াল, আসবাবপত্র, সজ্জা—সবকিছু গল্পের সময়কাল ও চরিত্রের পরিবেশ অনুযায়ী গড়ে তোলা হয়।
  • বড় বাজেটের ছবিতে বিশাল সেট তৈরি করা হতে পারে (যেমন: ঐতিহাসিক সময়ের প্রাসাদ), আর স্বল্প বাজেটে ছোট পরিসরেই সেট বানাতে হয় বা বাস্তব লোকেশনকে সামান্য পরিবর্তন করা হয়।

লোকেশন রেকি (Location Recce)

  • একবার লোকেশন নির্ধারণ হয়ে গেলে টিমের কিছু সদস্য (পরিচালক, সিনেমাটোগ্রাফার, প্রোডাকশন ম্যানেজার ইত্যাদি) গিয়ে স্থানটি সরেজমিনে দেখে সব দিক খতিয়ে দেখেন।
  • আলো, বিদ্যুৎ, যাতায়াত সুবিধা, অপ্রত্যাশিত সমস্যা (যেমন অতিরিক্ত আওয়াজ, জনসমাগম) ইত্যাদি নোট করে নেন, যাতে শুটিংয়ের দিন প্রস্তুতি সঠিকভাবে নেওয়া যায়।

২০. পোশাক, মেকআপ প্রপস

পোশাক (Costume)

  • গল্পের সময়কাল, চরিত্রের সামাজিক অবস্থান, পেশা, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে পোশাক নির্ধারণ হয়।
  • স্বল্প বাজেটের ক্ষেত্রে পোশাক সংগ্রহ করা হয় সাধারণ দোকান বা অভিনেতাদের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে; বড় প্রোডাকশনে কস্টিউম ডিজাইনার পুরো দল নিয়ে কাজ করেন।
  • পোশাকের রং ও ডিজাইন ক্যামেরার সামনে কেমন দেখাবে, সেটিও বিবেচনা করতে হয় (উজ্জ্বল রং বা বিশেষ টেক্সচার ক্যামেরায় ভিন্ন ভাবে ধরা পড়তে পারে)।

মেকআপ

  • চরিত্রের বয়স, পরিস্থিতি (যেমন যুদ্ধের দৃশ্য, অসুস্থ চরিত্র), আবহাওয়া—এসবকিছু বিবেচনায় মেকআপ করা হয়।
  • সিনেমাটিক মেকআপ অনেক সময় বাস্তবের চেয়ে একটু শক্তিশালী বা বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে, কারণ ক্যামেরার আলোতে স্বাভাবিক মেকআপ প্রায়ই ম্লান হয়ে যায়।

প্রপস (Props)

  • গল্পে ব্যবহৃত সব বস্তু (যেমন বই, মোবাইল ফোন, গাড়ি, অস্ত্র) প্রপস হিসেবে বিবেচিত হয়।
  • বিশেষ দৃশ্যের জন্য (যেমন অস্ত্র বা ঐতিহাসিক বস্তু) ক্লোজ-আপ শটে প্রপসগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে।
  • প্রপস কো-অর্ডিনেটর নিশ্চিত করেন এগুলো সময়মতো শুটিং স্পটে থাকে এবং দৃশ্য অনুযায়ী পরিবর্তন করতে হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top