২১. প্রোডাকশন শিডিউল তৈরি
শিডিউল তৈরির গুরুত্ব
- শুটিংয়ে প্রতিদিনকার কাজের পরিকল্পনা কেমন হবে, কোন দৃশ্য কবে ধারণ করা হবে, কোন অভিনেতাকে কখন প্রয়োজন—এসব বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রোডাকশন শিডিউলে অন্তর্ভুক্ত থাকে।
- বাজেট বাঁচাতে একই লোকেশনের দৃশ্যগুলো একসাথে শুট করা হয় (যদিও স্ক্রিপ্টে এগুলো বিভিন্ন স্থানে বা বিভিন্ন সময়ে ঘটতে পারে)।
- অভিনেতা, টেকনিশিয়ান ও লোকেশন সবার সময় ও সুবিধা মাথায় রেখে শিডিউল তৈরি করতে হয়।
শুটিং শিডিউল
- শিডিউল তৈরি করার সময় চিত্রনাট্যের দৃশ্যগুলো দৃশ্যানুসারে ক্রমানুসার না করে লোকেশন ও অভিনেতার উপস্থিতির ভিত্তিতে গ্রুপ করা হয়।
- আবহাওয়া, ট্রাফিক, আলো (দিন/রাতের দৃশ্য), ছুটির দিন ইত্যাদিও পরিকল্পনায় প্রভাব ফেলে।
- সাধারণত শিডিউলে প্রতিটি দিনের কাজ, দৃশ্য নম্বর, কী কী টিম মেম্বার দরকার, কল টাইম (কলাকুশলীর উপস্থিতির সময়) ইত্যাদি বিস্তারিত লেখা থাকে।
২২. চিত্রনাট্যের টুকিটাকি সংশোধন
চূড়ান্ত স্ক্রিপ্টে পরিবর্তন
- প্রি-প্রোডাকশনের সময় যখন বাজেট, লোকেশন, কাস্ট চূড়ান্ত হয়, তখন কখনো কখনো চিত্রনাট্যে কিছু বাস্তবসম্মত সংশোধন প্রয়োজন হয়।
- গল্পের গতিকে আরও মসৃণ করতে, শুটিংয়ের সীমাবদ্ধতা মানিয়ে নিতে, বা কোনো দৃশ্যের সময় কমাতে স্ক্রিপ্টে কাটছাঁট করা হয়।
ডায়লগ ও সিকোয়েন্স অ্যাডজাস্টমেন্ট
- অডিশন দেওয়ার সময় অভিনেতাদের মুখে সংলাপ শুনে মনে হতে পারে কিছু সংলাপ পরিবর্তন করা দরকার।
- লোকেশন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার পর কোনো দৃশ্যের লে-আউট (Blocking) পরিবর্তিত হতে পারে, সেক্ষেত্রে স্ক্রিপ্টে দৃশ্যের বিবরণ সামঞ্জস্য করা হয়।
উদাহরণ
- ধরুন, আপনি একটা পাহাড়ি দৃশ্য চিত্রায়নের পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু বাজেট বা অনুমতির কারণে সেটি পরিবর্তন করে কাছের একটা পাহাড়সদৃশ এলাকায় শুটিং করতে হচ্ছে। তখন চিত্রনাট্যেও সেই অনুযায়ী দৃশ্যের বিবরণ বদলাতে হবে।
উপসংহার
এই পর্বের সারমর্ম
- প্রি-প্রোডাকশনে বাজেট, কাস্ট, লোকেশন, পোশাক, মেকআপ ও প্রপস—প্রত্যেকটি খুঁটিনাটির ওপর জোর দিতে হয়। কারণ শুটিংয়ের বাস্তবসম্মত প্রস্তুতি এই পর্যায়েই সম্পন্ন হয়।
- সঠিক প্রি-প্রোডাকশন বাস্তবে শুটিংয়ের সময় খরচ ও সময় সাশ্রয় করে এবং পুরো টিমের মধ্যে সমন্বয় বজায় রাখে।
- প্রয়োজনীয় সংশোধন করে একটি চূড়ান্ত চিত্রনাট্য হাতে থাকলে পুরো দল একটি স্পষ্ট রূপরেখা মেনে কাজ করতে পারে, যা চলচ্চিত্রের গুণগত মান উন্নত করে।
আগামী পর্বে আমরা যাব সিনেমাটোগ্রাফি (Cinematography)-তে, যেখানে ক্যামেরা, লেন্স, আলো ও চিত্র গ্রহণের নান্দনিক ও প্রযুক্তিগত বিষয় নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করা হবে।



২৩. ক্যামেরার ধরন ও লেন্স নির্বাচন
ক্যামেরার ধরন
- DSLR ও Mirrorless:
- স্বাধীন বা স্বল্প বাজেটের নির্মাতাদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।
- সহজে বহনযোগ্য, ছবি ও ভিডিও ধারণে কার্যকর।
- লেন্স পরিবর্তনের সুবিধার কারণে বিভিন্ন রকমের দৃশ্য ধারণ সম্ভব।
- Cinema Camera (ARRI, RED, Blackmagic ইত্যাদি):
- বড় বাজেটের চলচ্চিত্রে বা উচ্চমানের প্রোডাকশনে ব্যবহৃত হয়।
- উচ্চতর ডাইনামিক রেঞ্জ ও রেজোলিউশন সরবরাহ করে, যা পোস্ট-প্রোডাকশনে রং ও বিস্তারিত আরও নিখুঁতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- Camcorder:
- ডকুমেন্টারি বা নিউজ কাভারেজে বহুল ব্যবহৃত।
- ব্যবহার সহজ হলেও লেন্স পরিবর্তনের সুযোগ কম থাকায় সিনেমাটিক লুক পেতে কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
- স্মার্টফোন:
- বর্তমান যুগে মোবাইল ফিল্মমেকিং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
- অনেকেই স্মার্টফোনে শর্ট ফিল্ম, মিউজিক ভিডিও কিংবা ফিচার ফিল্মও তৈরি করছেন।
- প্রযুক্তির উন্নতির ফলে 4K বা 8K ভিডিও ধারণের সুবিধাও এখন অনেক স্মার্টফোনে পাওয়া যায়।
লেন্স নির্বাচন
- ওয়াইড লেন্স (Wide Lens)
- ২৪ মিমি বা এর নিচে ফোকাল লেন্থের লেন্সকে সাধারণত ওয়াইড লেন্স বলা হয়।
- বড় পরিসর, প্রকৃতি, বিল্ডিং বা গ্রুপ শট ধারণে ব্যবহার হয়।
- কখনো কখনো বিষয়কে বিকৃত (Distort) করে, বিশেষত ফ্রেমের প্রান্তে।
- স্ট্যান্ডার্ড লেন্স (Standard Lens)
- ৩৫ মিমি বা ৫০ মিমি ফোকাল লেন্থে চোখের প্রকৃত দৃষ্টিকোণের কাছাকাছি ভিজ্যুয়াল পাওয়া যায়।
- চরিত্রের ক্লোজ-আপ, মধ্যম শট বা স্বাভাবিক দৃশ্যায়নের জন্য উপযোগী।
- টেলিফটো লেন্স (Telephoto Lens)
- ৮৫ মিমি থেকে শুরু করে ২০০ বা তার বেশি ফোকাল লেন্থের লেন্সকে টেলিফটো বলা হয়।
- দূরের বিষয়কে কাছে এনে দেখায়, পেছনের ব্যাকগ্রাউন্ডকে ঝাপসা (Shallow Depth of Field) করে।
- পোর্ট্রেট শট বা আবেগঘন ক্লোজ-আপ নিতে কার্যকর।
- স্পেশাল লেন্স (Fish-eye, Macro, Tilt-shift)
- Fish-eye লেন্স অনেকখানি বিকৃতি (Extremely wide, distorted view) তৈরি করে, সায়েন্স ফিকশন বা সৃজনশীল দৃশ্যে ব্যবহার হয়।
- Macro লেন্স খুব কাছ থেকে ছোট্ট বস্তুর শট নিতে ব্যবহৃত হয়।
- Tilt-shift লেন্স দিয়ে আংশিকভাবে ফোকাসে রাখা যায়, যা অত্যন্ত নান্দনিক ও শিল্পসম্মত দৃশ্য তৈরি করে।



২৪. শটের ধরণ: ক্লোজ–আপ থেকে ওয়াইড শট
শটের প্রকারভেদ
- এক্সট্রিম ক্লোজ–আপ (ECU)
- খুব কাছ থেকে কোনো বিশেষ অংশ (চোখ, ঠোঁট, আঙুল ইত্যাদি) ফ্রেমে ধরে আবেগ বা বিশদ বিবরণ ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহার হয়।
- রহস্য বা তীব্র আবেগ প্রকাশ করতে উপযোগী।
- ক্লোজ–আপ (CU)
- চরিত্রের মুখমণ্ডল বা কোনো নির্দিষ্ট অংশ বেশ বড় করে ফ্রেমে দেখানো হয়।
- সংলাপ বা ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া বোঝাতে উপযোগী।
- মিড শট (MS)
- সাধারণত কোমর বা বক্ষদেশ থেকে ওপরের অংশ ফ্রেমে থাকে।
- সংলাপ, চরিত্রের দেহভঙ্গি এবং মুখের অভিব্যক্তি একসঙ্গে দেখাতে কার্যকর।
- মিড–লং শট (MLS) বা থ্রি–কোয়ার্টার শট
- হাঁটু পর্যন্ত শরীর দেখা যায়।
- চরিত্রের গতিবিধি ও অবস্থান স্পষ্ট হয়, পরিবেশের সঙ্গেও সামঞ্জস্য রাখা যায়।
- লং শট (LS)
- চরিত্রের পুরো দেহ ও পার্শ্ববর্তী কিছু অংশ দেখা যায়।
- স্থান, পরিবেশ বা অবস্থান বোঝাতে কার্যকর।
- এক্সট্রিম লং শট (ELS) বা ওয়াইড শট
- বিশাল পরিসর বা ল্যান্ডস্কেপ দেখা যায়।
- প্রকৃতি, জনবহুল শহর বা বড় কোনো স্থাপনার স্কেল বোঝাতে উপযোগী।
শট নির্বাচন ও প্রভাব
- সঠিক শট নির্বাচন গল্পের আবেগ, ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট ও ভিজ্যুয়াল ফ্লোকে প্রভাবিত করে।
- ক্লোজ-আপ শট বেশি হলে ইমোশনাল ইমপ্যাক্ট বাড়ে; ওয়াইড শটে বিষয় ছোট দেখাতে গিয়ে একাকিত্ব বা বিশালতার অনুভূতি ফুটে উঠতে পারে।
২৫. ক্যামেরা মুভমেন্ট: ডলি, ট্র্যাকিং ও স্টেডিক্যাম
ক্যামেরা মুভমেন্টের ধরন
- প্যান (Pan)
- ক্যামেরাকে অনুভূমিকভাবে (Horizontally) ডানে বা বাঁয়ে ঘোরানো।
- কোনো লোকেশন বা ঘটনার বিস্তৃত ধারণা দিতে কিংবা কাউকে অনুসরণ করতে ব্যবহার হয়।
- টিল্ট (Tilt)
- ক্যামেরাকে উল্লম্বভাবে (Vertically) উপর বা নিচে ঘোরানো।
- কোন ভবন বা চরিত্রের ওপর থেকে নিচে বা নিচ থেকে ওপর পর্যন্ত তুলে ধরতে কার্যকর।
- ডলি (Dolly) বা ট্র্যাকিং শট (Tracking Shot)
- ক্যামেরা একটি ট্র্যাক বা চাকা লাগানো প্ল্যাটফর্মে বসিয়ে সামনে-পিছনে বা পাশে সরিয়ে নেয়া হয়।
- চরিত্রের সাথে সঙ্গতি রেখে মুভমেন্ট তৈরি করতে সাহায্য করে, যা দৃশ্যে গতি ও নান্দনিকতা আনে।
- স্টেডিক্যাম (Steadicam)
- বিশেষ হাড়ির (Harness) মাধ্যমে ক্যামেরা চালকের গায়ে বেঁধে নেওয়া হয় যাতে কম্পন কমে যায়।
- দীর্ঘ ও মসৃণ শট নেওয়ার জন্য উপযোগী, যেখানে ফ্রি-হ্যান্ড মুভমেন্টের সুযোগও থাকে।
- ক্রেন (Crane) ও ড্রোন শট
- উচ্চতা থেকে নিচের দৃশ্য ধারণ করতে ক্রেন ব্যবহার হয়। বড় বাজেটের ছবিতে মনোরম বা নাটকীয় দৃশ্য তৈরিতে কার্যকর।
- ড্রোন শট বেশ জনপ্রিয়, কারণ সহজে আকাশ থেকে বিস্তৃত পরিসর বা ল্যান্ডস্কেপ ধারণ করা যায়।
মুভমেন্টের গুরুত্ব
- ক্যামেরার মুভমেন্ট দৃশ্যের গতি, আবেগ ও চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থাকে নির্দেশ করে।
- দর্শকের চোখকে দৃশ্যের ভেতর নিয়ে গিয়ে গল্পের প্রবাহকে তরান্বিত বা মন্থর করা যায়।
২৬. লাইটিং সেটআপ ও পরিবেশ তৈরি
লাইটিংয়ের প্রধান ধরন
- Key Light
- সেটে প্রধান বা সবচেয়ে উজ্জ্বল আলো।
- চরিত্রের মুখে বা দৃশ্যের কেন্দ্রে আলোর মূল উৎস হিসেবে কাজ করে।
- Fill Light
- Key Light-এর কারণে যেসব ছায়া পড়ে সেগুলো নরম বা হালকা করতে ব্যবহৃত হয়।
- ছায়া কমিয়ে চরিত্রের মুখমণ্ডল বা দৃশ্যের বিবরণ স্পষ্ট করে।
- Back Light
- পেছন থেকে দেওয়া আলো, যা চরিত্র বা বস্তুকে পটভূমি থেকে আলাদা (Separation) করে।
- অ্যামবিয়েন্ট গ্লো বা রিম লাইট (Rim Light) হিসেবে চরিত্রের আউটলাইন হাইলাইট করে।
লাইটিং সেটআপ
- থ্রি–পয়েন্ট লাইটিং
- ক্লাসিক লাইটিং পদ্ধতি; Key, Fill, Back Light—এই তিনটি আলো একত্রে ব্যবহার করা হয়।
- মূলত সাক্ষাৎকার, ড্রামা শুটিং ইত্যাদিতে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত।
- হাই কি লাইটিং (High Key Lighting)
- একাধিক উচ্চমাত্রার আলো ব্যবহার করে ছায়া প্রায় লোপ পেয়ে যায়।
- রোমান্টিক, কমেডি বা সুখের মুহূর্তের দৃশ্যায়নে উপযোগী।
- লো কি লাইটিং (Low Key Lighting)
- মূলত Key Light ও সামান্য Fill Light ব্যবহার করে দৃঢ় ছায়া ও উচ্চ কনট্রাস্ট তৈরি করা হয়।
- থ্রিলার, হরর, রহস্যময় বা ডার্ক টোনের দৃশ্যায়নে কার্যকর।
- রেমব্রান্ট লাইটিং (Rembrandt Lighting)
- মুখের একপাশে ত্রিভুজাকৃতির হালকা আলো তৈরি হয়।
- চরিত্রের আবেগঘন বা মনস্তাত্ত্বিক গভীরতা প্রকাশে ব্যবহৃত হয়।
পরিবেশ তৈরি
- আলোর রঙ (Color Temperature) পরিবর্তন করে দৃশ্যের মুড সেট করা যায় (উষ্ণ বা শীতল)।
- কখনো রঙিন জেল (Color Gels) ব্যবহার করে নীল, সবুজ, লাল আলোয় পরিবেশ তৈরি করা হয়, যা ফ্যান্টাসি, হরর বা সায়েন্স ফিকশন ধাঁচের দৃশ্যকে প্রাণবন্ত করে তোলে।



২৭. রঙ, কনট্রাস্ট ও ভিজ্যুয়াল মুড
রঙ (Color)
- চলচ্চিত্রের আবেগ ও অর্থ পৌঁছাতে রঙের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
- কিছু রঙ মানুষকে সচেতনভাবে বা অবচেতনে বিশেষ অনুভূতি দেয় (যেমন: লাল রঙ আবেগ, ক্রোধ বা উত্সাহ প্রকাশ করে; সবুজ স্বভাবতই প্রশান্তি বা ঈর্ষার প্রতীক হতে পারে)।
- কালার গ্রেডিং ও কালার কারেকশনের মাধ্যমে পোস্ট-প্রোডাকশনে গল্পের বিভিন্ন পর্বে আলাদা আবহ তৈরি করা যায়।
কনট্রাস্ট (Contrast)
- দৃশ্যে উজ্জ্বল ও অন্ধকার অংশের পার্থক্য হল কনট্রাস্ট।
- উচ্চ কনট্রাস্ট থ্রিলার, ড্রামা, মুভিতে রহস্য ও নাটকীয়তা বাড়ায়।
- স্বল্প কনট্রাস্ট দৃশ্যে রঙ ও আলো অনেকটা নরম হয়ে আসে, বেশি রোমান্টিক বা স্বপ্নিল আবহ দিতে কার্যকর।
ভিজ্যুয়াল মুড
- চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু ও চরিত্রের মানসিকতার সাথে মানানসই করে আলো, রঙ ও শট কম্পোজিশন গড়ে তোলাই সিনেমাটোগ্রাফির মূল লক্ষ্য।
- উদাহরণ: দুঃখের দৃশ্যে ধূসর বা নীলচে টোন, আনন্দের দৃশ্যে উজ্জ্বল ও স্নিগ্ধ টোন ব্যবহার করা যায়।
- একই চলচ্চিত্রে বিভিন্ন সময় বা অবস্থার পরিবর্তন বোঝাতেও রঙ ও আলোকে পরিবর্তন করা হয়, যা গল্পকে পূর্ণতা দেয়।
উপসংহার
এই পর্বের সারমর্ম
- সিনেমাটোগ্রাফি চলচ্চিত্র নির্মাণের চাক্ষুষ ভাষা, যা ক্যামেরা, লেন্স, আলো ও রঙের ব্যবহার দিয়ে গল্পকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
- সঠিক ক্যামেরা ও লেন্স নির্বাচন, উপযুক্ত শটের পরিকল্পনা, ক্যামেরা মুভমেন্টের সৃজনশীল প্রয়োগ এবং আলোকসজ্জা ও রঙের সুনিপুণ ব্যবহারের মাধ্যমে একটি সিনেমা দর্শকের মনে স্থায়ী ছাপ ফেলতে পারে।
- একজন দক্ষ সিনেমাটোগ্রাফার কেবলমাত্র প্রযুক্তিগত দিকই নয়, গল্পের প্রেক্ষাপট ও আবেগকেও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেন, যাতে প্রতিটি দৃশ্য গল্পের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও দর্শনীয় হয়।
২৮. শুটিংয়ের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা
শুটিংয়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি
- প্রি-প্রোডাকশনে তৈরি করা প্রোডাকশন শিডিউল অনুযায়ী ঠিক করা দিন ও লোকেশনে শুটিং শুরু হয়।
- কল টাইম (Call Time) অনুসারে প্রত্যেক কলাকুশলী, অভিনেতা ও টিম মেম্বারকে সময়মতো উপস্থিত থাকতে হয়।
- শুটিংয়ের দিন কতগুলো দৃশ্য ধারণ করা হবে, সেগুলোর জন্য কী কী প্রপস, পোশাক, মেকআপ, লাইট বা ক্যামেরার সেটআপ লাগবে—সব কিছুর তালিকা আগেই তৈরি করে রাখা হয়।
সেট–আপ ও টেস্ট শট
- শুটিং স্পটে পৌঁছানোর পর ক্যামেরা, আলো ও সাউন্ড ইকুইপমেন্ট সেট আপ করা হয়।
- প্রয়োজন হলে টেস্ট শট (Test Shot) বা রিহার্সাল শট নিয়ে দেখা হয় আলো, এক্সপোজার বা সাউন্ড ঠিকভাবে ধরা হচ্ছে কিনা।
- যেকোনো ধরনের টেকনিক্যাল সমস্যার সমাধান (যেমন ক্যামেরার ফোকাস, লাইটের উজ্জ্বলতা কিংবা সাউন্ডের গুণগত মান) শুট শুরু হওয়ার আগেই করে নেওয়া ভালো।
প্ল্যান বি বা বিকল্প পরিকল্পনা
- শুটিংয়ের সময় সবসময় পূর্বপরিকল্পনা মেনে কাজ করা সম্ভব হয় না (যেমন হঠাৎ বৃষ্টি, বিদ্যুৎ চলে যাওয়া বা কোনো অভিনেতার অনুপস্থিতি)।
- তাই জরুরি মুহূর্তে কী করা হবে—সে সম্পর্কে বিকল্প পরিকল্পনা (Plan B) রাখা জরুরি।
- উদাহরণ: খোলা জায়গায় বৃষ্টি হলে ইনডোর দৃশ্যগুলো আগে শুট করে ফেলা বা সেটে হাতের কাছে থাকা অন্য দৃশ্যের কাজ করা ইত্যাদি।
২৯. পরিচালক ও টিম ম্যানেজমেন্ট
পরিচালকের ভূমিকা
- পরিচালকই পুরো শুটিংয়ের সৃজনশীল দিক নির্দেশক। তিনি ঠিক করেন কীভাবে চিত্রনাট্যকে দৃষ্টিনন্দনভাবে ফুটিয়ে তোলা হবে, কী অ্যাঙ্গেলে শট নেওয়া হবে, অভিনেতাদের কেমন অভিনয় প্রয়োজন ইত্যাদি।
- পরিচালক ক্যামেরা ও শিল্পবিভাগের (Art Department) সঙ্গেও সমন্বয় করে থাকেন, যাতে কাঙ্ক্ষিত লুক ও অনুভূতি বজায় থাকে।
সহকারী পরিচালক (Assistant Director – AD)
- শুটিংয়ের দৈনন্দিন কার্যক্রম, সময়সূচি মেনে চলা, কলাকুশলী ও অভিনেতাদের সমন্বয় করা, পরবর্তী দৃশ্যের প্রস্তুতি ইত্যাদি দেখভাল করেন।
- বড় প্রোডাকশনে একাধিক AD থাকতে পারে, যারা ইউনিট সামলাতে পরিচালকের প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।



প্রোডাকশন ম্যানেজার/লাইনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
- বাজেট, লোকেশনের অনুমতি, লোকেশন স্কাউট, যাতায়াত, খাবার ও অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্ট—সবকিছু ম্যানেজ করা প্রোডাকশন ম্যানেজারের কাজ।
- শুটিং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে গ্রিপ, ইলেক্ট্রিশিয়ান, সাউন্ড টেকনিশিয়ানসহ সব ডিপার্টমেন্টকে সুসংগঠিত রাখেন।
টিম ওয়ার্ক ও কমিউনিকেশন
- একটি সফল শুটিংয়ের মূল চাবিকাঠি হল টিম ওয়ার্ক। সময়মতো সঠিক জায়গায় সঠিকভাবে কাজ করতে পারলেই বিপুল সময় ও খরচ বাঁচে।
- মিটিং ও আলোচনার মাধ্যমে প্রতিটি দৃশ্যের প্রয়োজনীয়তা সবাইকে পরিষ্কার করে দেওয়া উচিত, যাতে কেউ দ্বিধাগ্রস্ত না থাকে।